নিজস্ব প্রতিবেদকদেশের উত্তরাঞ্চলের ১০ জেলায় চলতি মাসের মাঝামাঝি বন্যা হতে পারে বলে বাংলাদেশের আবহাওয়া অফিস ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের বন্যা সতর্কীকরণ পূর্বাভাস কেন্দ্র জানিয়েছে। পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, এই মাসের মাঝামাঝি সময়ে ভারতের সীমান্তবর্তী জেলাগুলোতে সবার আগে বন্যা দেখা দিতে পারে। তবে মধ্য মেয়াদি বন্যা হতে পারে বলে বলে আভাস দিচ্ছে বন্যা সতর্কীকরণ কেন্দ্র।
পানি ও বন্যা গবেষকেরা বলছেন, এ বছর দেরিতে বন্যা আসছে বাংলাদেশে। তবে এই বন্যা আগের চেয়ে বেশি ভোগাবে। স্বল্প বা মধ্যম ধরনের বন্যার আশঙ্কা করা হলেও করোনাকালের এই বন্যা মোকাবিলা কঠিন হবে। এ জন্য আগাম প্রস্তুতি নেওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন তাঁরা। বন্যা প্রবল ১০ জেলা এতে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পানি উন্নয়ন বোর্ড ও দুর্যোগ মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্টদের আগেভাগে উদ্যোগ নেওয়ার কথা। সেই সঙ্গে এ বিষয়ে জনগণকে সতর্ক করারও তাগিদ দিচ্ছেন তাঁরা।
আবহাওয়া অফিস বলছে, দেশে আরও দুই মাস বর্ষা মৌসুম আছে। মূলত আসাম-মেঘালয়-নেপালের দিকে বৃষ্টি বাড়লে উজানের ঢলে স্বল্প মেয়াদি বন্যা দেখা দেয় ভাটির এই দেশে। সম্প্রতি ওই দিকে বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে। ফলে আগামী সপ্তাহ জুড়ে ভারতীয় সীমান্তের কাছাকাছি নদীগুলোতে পানি বাড়বে। বাংলাদেশেও বৃষ্টিপাতের পরিমাণ বাড়বে। বাড়বে বৃষ্টির আয়তনও। যে সব জায়গায় বৃষ্টি কম হচ্ছে সে সব জায়গাতেও বৃষ্টির তীব্রতা বাড়তে পারে। তা ছাড়া চলতি মাসে বঙ্গোপসাগরে একটি বা দুটি মৌসুমি লঘুচাপের সৃষ্টি হতে পারে। যার একটি মৌসুমি নিম্নচাপে পরিণত হতে পারে।
ভারতের আবহাওয়া অফিসের পূর্বাভাস বলছে, ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে ৬শ থেকে ১ হাজার মিলিমিটার বা তার চেয়েও বেশি বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে চলতি সপ্তাহে। তুমুল বৃষ্টি হবে ভুটানেও। ভারত ও ভুটানের এই বৃষ্টির পানি বাংলাদেশে ঢুকে বন্যার সৃষ্টি হবে।
বন্যা ও পানি বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাংলাদেশে বন্যা সৃষ্টির পেছনে উজানের পানি ৮০ শতাংশ ভূমিকা রাখে। বিশেষ করে হিমালয় থেকে ধেয়ে আসা পানি ভারত ও নেপাল হয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করে বন্যার সৃষ্টি করে।
বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের তথ্য বলছে, লালমনিরহাট, নীলফামারী, রংপুর ও কুড়িগ্রামের নিম্নাঞ্চলে আগে বন্যা দেখা দিতে পারে। তারপর জামালপুর, সিরাজগঞ্জ এলাকায় দেখা দেবে বন্যা। আরও বেশি পানি হলে ফরিদপুর, রাজবাড়ি, মানিকগঞ্জ, মুন্সিগঞ্জ, মাদারীপুর ও শরীয়তপুরে পর্যন্ত পৌঁছাতে পারে বন্যার পানি।
আবহাওয়াবিদ আবুল কালাম মল্লিক আজকের পত্রিকাকে জানান, দেশে মৌসুমি বায়ু সক্রিয় রয়েছে। এ জন্য আগামী ৩ দিন সারা দেশে বৃষ্টির পরিমাণ বাড়বে। গত কয়েকদিন ধরেই দেশের বিভিন্ন স্থানে বৃষ্টি হচ্ছে। এই প্রবণতা আরও বাড়তে পারে। টানা বৃষ্টি হতে পারে কোন কোন জায়গায়।
আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, রোববার সকাল ৯টা থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টায় খুলনা, বরিশাল ও চট্টগ্রাম বিভাগের অধিকাংশ জায়গায় এবং ঢাকা, ময়মনসিংহ, রংপুর, রাজশাহী ও সিলেট বিভাগের অনেক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি বা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সেই সঙ্গে দেশের কোথাও কোথাও মাঝারি ধরনের ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টি হতে পারে। এ সময়ে সারা দেশের দিনের ও রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে।