নিজস্ব প্রতিবেদককরোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে সরকারের জারি করা কঠোর বিধিনিষেধ শেষে আজ বুধবার অনেকটাই চিরচেনা রূপে ফিরেছে রাজধানী ঢাকা। সড়কে যানচলাচল অনেকটা বেড়েছে। বিভিন্ন স্থানে দেখা গেছে যানজট। তবে আজ গণপরিবহনে যাত্রীর সংখ্যা কম।
আজ সকালে রাজধানীর গাবতলী, আসাদগেট, শ্যামলী, আদাবর, তেজগাঁও, ফার্মগেট, নিউমার্কেট, পল্টন, মিরপুর, মহাখালী, বনানী ও গুলিস্তান এলাকায় বেশ যানজট ছিল। সড়কের বিভিন্ন সিগন্যালে যানবাহনগুলোকে অপেক্ষা করতে দেখা গেছে। ট্রাফিক পুলিশ সদস্যরা বলছেন, সকালে গাড়ির চাপ কিছুটা কম ছিল। কিন্তু বেলা গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে তা বাড়ছে।
রাজধানীর ভেতরে বিভিন্ন রুটে বাস চলাচল করছে। গাবতলী এলাকায় সকাল সাড়ে ১০টার দিকে কথা হয় গাবতলী এক্সপ্রেসের চালক মো. ফকরুদ্দিনের সঙ্গে। তিনি বলেন, সকাল থেকে তিনি গাবতলী-যাত্রাবাড়ী রুটে একবার বাস নিয়ে যাওয়া-আসা করেছেন। স্বাভাবিক সময়ে এই রুটে একবার যাওয়া-আসা করলে ২ হাজার ৫০০ থেকে ৩ হাজার টাকা আয় হয়। তবে আজ যাত্রী তুলনামূলক কম। এ কারণে আয় হয়েছে ১ হাজার ৮০০ টাকা।
আজ থেকে সড়কে অর্ধেক গণপরিবহন চলবে—এমন সরকারি নির্দেশনার বিষয়ে কিছু জানেন কি না জিজ্ঞাসা করলে ফকরুদ্দিন বলেন, মালিকপক্ষ তাঁদের এমন কিছুই জানায়নি। তাঁরা বিষয়টি গণমাধ্যমসূত্রে জেনেছেন। তবে আজ রাস্তায় বাস এমনিতেই কম চলছে। কারণ, অনেক বাসচালক বিধিনিষেধ কারণে গ্রামে গিয়েছেন। তাঁদের অনেকে এখনো ঢাকায় ফেরেননি।
সাভার থেকে আবদুল্লাহপুরে চলাচল করে মধুমতি পরিবহন। এ পরিবহনের একটি বাসের চালক আশরাফুল আলম। তিনি বলেন, আজ যাত্রী কম থাকায় গাবতলী থেকে আবদুল্লাহপুর পর্যন্ত বাস চালাচ্ছেন তাঁরা। রাস্তায় অর্ধেক গণপরিবহন চলার বিষয়ে মালিকপক্ষ কোনো নির্দেশনা তাঁদের দেয়নি বলে জানান তিনি।
আজ ঢাকা থেকে দূরপাল্লার বাস ছেড়ে যাচ্ছে কম। বেলা ১১টার দিকে ঢাকা থেকে টাঙ্গাইলের নাগরপুরগামী এসবি লিংক পরিবহনের পরিচালক (অর্থ) মো. শহিদউল্লাহ বলেন, যাত্রী কম থাকায় সকাল থেকে নাগরপুরের উদ্দেশে ২১টি বাস ছেড়ে গেছে। স্বাভাবিক সময়ে ১০০টির বেশি বাস ছেড়ে যায়। তবে আগামী কয়েক দিনের মধ্যে যাত্রীর চাপ বাড়বে বলে আশা করছেন তিনি।
বিজ্ঞাপন
সকালের দিকে গাবতলীতে দায়িত্বরত ট্রাফিক পুলিশের কর্মকর্তা বি এম সাদাত হোসেন বলেন, লকডাউনের আগে যে পরিমাণ গাড়ি চলাচল করত, সেই পরিমাণ গাড়ি এখনো সড়কে নামেনি। এ কারণে যানবাহনের চাপ তুলনামূলক কম। সময় বাড়লে যানবাহন বাড়বে।
সড়কে গণপরিবহন চলাচলের কোনো নির্দেশনা পেয়েছেন কি না—এ বিষয়ে জানতে চাইলে ট্রাফিক পুলিশের এই কর্মকর্তা বলেন, তাঁদের দায়িত্ব রাস্তায় যানচলাচলের বিষয়টি দেখভাল করা। এ দায়িত্ব তাঁরা পালন করছেন। অর্ধেক গণপরিবহন চলাচলের বিষয়টি সরকার ও মালিকপক্ষ দেখবে।
সকালে গাবতলীর দিকে চাপ কম থাকলেও পুরান ঢাকার দিকে গাড়ি তুলনামূলক বেশি দেখা গেছে। বেসরকারি একটি প্রতিষ্ঠানে কাজ করেন সজীব সরকার। দাপ্তরিক কাজে সকাল সাড়ে ছয়টায় তিনি গিয়েছিলেন পুরান ঢাকায়। যাওয়ার সময় সড়কে যানবাহনের তেমন চাপ দেখেননি তিনি। কিন্তু সকাল ১০টার দিকে গুলিস্তান থেকে ফেরার সময় কারওয়ান বাজার পৌঁছাতে তাঁর এক ঘণ্টার বেশি সময় লেগেছে। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘গুলিস্তান থেকে মিরপুরগামী শিকড় বাসে উঠেছিলাম। বাসে যাত্রীর ভিড় ছিল।’
ফুলবাড়িয়ার ট্রাফিক পুলিশের সহকারী কমিশনার মোহাম্মদ সালাহউদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, সিটি করপোরেশনের উন্নয়নকাজের জন্য সিদ্দিকবাজার থেকে ফুলবাড়িয়া ক্রসিং পর্যন্ত রাস্তার পশ্চিম পাশ কাটা হয়েছে। এ কারণে এই এলাকায় তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়েছে।
শাহবাগের একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মচারী রায়হান জানান, বেলা ১১টার সময় রওনা দিয়ে আসাদগেট থেকে শাহবাগ পৌঁছাতে তাঁর প্রায় দুই ঘণ্টা লেগেছে। প্রত্যেক সিগন্যালে বাস থেমেছে।
করোনাভাইরাস সংক্রমণের নিয়ন্ত্রণে চলতি বছরের ৫ এপ্রিল থেকে ধাপে ধাপে বিধিনিষেধ চলছিল। ঈদের পর ২৩ জুলাই কঠোর বিধিনিষেধ শুরু হয়, যা প্রথমে ৫ আগস্ট পর্যন্ত কার্যকর থাকার কথা ছিল। পরে এই বিধিনিষেধ ১০ আগস্ট পর্যন্ত বাড়ানো হয়। আজ থেকে শর্ত সাপেক্ষে অফিস, গণপরিবহনসহ সবকিছু খুলে দেওয়া হয়েছে। এ বিষয়ে ৮ আগস্ট আদেশ জারি করে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ।