লোভনীয় অফার দিয়ে ই-ভ্যালি, ই-অরেঞ্জসহ বিভিন্ন ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান গ্রাহকের কাছ থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। এই বিপুল পরিমাণ টাকা কোথায় এবং কিভাবে হস্তান্তর করেছে কিংবা অর্থ পাচারের মত অপরাধ সংঘটিত হয়েছে কিনা সেই বিষয়ে খতিয়ে দেখতে বলেছে হাইকোর্ট। আগামী ৮ নভেম্বরের মধ্যে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ) কে অনুসন্ধান করে এই প্রতিবেদন আদালতে দাখিল করতে বলা হয়েছে।
এছাড়া ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানগুলোর ব্যবসায়িক লেনদেনের বিপরীতে রাজস্ব আদায়ে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) কী পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে তাও হাইকোর্টকে জানাতে বলা হয়েছে। ই-কমার্স নিয়ে পৃথক তিন রিটের শুনানি নিয়ে বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্টের দ্বৈত বেঞ্চ মঙ্গলবার (২৮ সেপ্টেম্বর) এই আদেশ দেন। একইসঙ্গে ই-কমার্স নিয়ে চলমান সংকটে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় কর্তৃক গঠিত কমিটির কার্যপরিধি কী সেই বিষয়েও জানতে চেয়েছে হাইকোর্ট। ওই সময়ের মধ্যে বিষয়টি লিখিত আকারে জানাতে হবে মামলার পক্ষগণকে।
শুনানিতে লাখ লাখ গ্রাহকের নি:স্ব হওয়ার বিষয়টি তুলে ধরে আইনজীবীরা বলেন, সরকারি সংস্থার নজরদারির অভাবে এ ধরনের প্রতারণার ঘটনা ঘটেছে। ই-কমার্স সেক্টরে যদি সঠিকভাবে নজরদারি হত তাহলে লাখ লাখ মানুষকে আজ নি:স্ব হয়ে পাগলের মত রাস্তায় রাস্তায় ঘুরতে হত না। তখন হাইকোর্ট বলেন, পাগল হওয়ার সম্ভাবনা আছে জেনেও কেন ওই পথে পা বাড়ালেন? লোভনীয় অফার দেখে কেন হুমড়ি খেয়ে পড়লেন।
ই-অরেঞ্জের ৩৩ জন গ্রাহক ১৬ কোটি টাকার পণ্য ক্রয়ের আদেশ দিয়ে কিছুই পাননি। প্রতিকার চেয়ে দ্বারস্থ হয়েছেন হাইকোর্টের। এছাড়া ই-কমার্স সেক্টরে অর্থ পাচার ও বিশৃঙ্খলা নিরসনে আদালতের নির্দেশনা চেয়ে দুটি রিট করেছেন তিন আইনজীবী। গতকাল পৃথক তিন রিট আবেদনের উপর শুনানি হয়েছে। শুনানিতে ৩৩ গ্রাহকের পক্ষে আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির বলেন, ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানগুলো বেঁচে থাকুক, যাতে গ্রাহকেরা তাদের কোটি কোটি টাকা ধাপে ধাপে ফেরত পায়। বিশ্বব্যাপী ই-কমার্স ব্যবসার প্রসার হচ্ছে। বাংলাদেশে ইউনিয়ন পর্যায়ে এই ব্যবসাকে উৎসাহিত করতে সরকার উদ্যোগ নিয়েছে।
লোভনীয় অফারে হুমড়ি খেয়ে কেন পড়লেন!
ল এন্ড লাইফ ফাউন্ডেশনের পক্ষে করা রিটের শুনানিতে আইনজীবী হুমায়ুন কবির পল্লব বলেন, ই-কমার্স সেক্টরে যেসব ঘটনা ঘটেছে সেটার দায় বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এড়াতে পারেন না। এই সেক্টরের টাকাগুলো কোথায় গেলো-দেশে না দেশের বাইরে সেটা খুঁজে বের করা দরকার। এজন্য দুদককে আদালত নির্দেশনা দিতে পারে। এছাড়া দেশে প্রতিযোগিতা কমিশন রয়েছে। ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানগুলো বিভিন্ন প্রমোশনাল অফার দেয়। গ্রাহকের নিরাপত্তার স্বার্থে এতে প্রতিযোগিতা কমিশনের অনুমোদন থাকা দরকার। যদি এটা করা যায় তাহলে লাখ লাখ লোককে প্রতারিত হতে হয় না। এ পর্যায়ে আদালত বলেন, লোভনীয় অফার দেখলেন আর হুমড়ি খেয়ে পড়লেন এটা কেন? আইনজীবী পল্লব বলেন, বিদেশী ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান আমাজন, আলীবাবা, দরাজসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে ব্যবসার সুযোগ করে দিতেই দেশীয় ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানগুলোকে ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে।
সরকার বসে নাই, জড়িতদের গ্রেপ্তার করেছে: রাষ্ট্রপক্
রাষ্ট্রপক্ষে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বিপুল বাগমার বলেন, সরকার ই-কমার্স সেক্টরে প্রতারণা রোধে নানা আইন করেছে। এখানে সরকারের কোন নিষ্ক্রিয়তা নাই। সরকার তো বসে নাই। ইতিমধ্যে বেশ কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করে জেলে পাঠিয়েছে। ব্যক্তির অপরাধের দায় তো সরকার নেবে না। এ পর্যায়ে আদালত বলেন, আইনের প্রয়োগ কে করবে? আপনার (সরকার) কি কোন দায়িত্ব নাই এই সেক্টরে মনিটর করা। ডিএজি বলেন, যারা কোটি কোটি টাকা ই-কমার্সে বিনিয়োগ করছেন সেই টাকার উৎস ক
লাইসেন্স ছাড়াই ব্যবসা করছে: দুদ
দুদক কৌসুলি খুরশীদ আলম খান বলেন, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের চিঠির প্রেক্ষিতে ই-ভ্যালির দুই কর্মকর্তার বিদেশ যাত্রা ঠেকানো হয়েছে। এখানে অর্থ পাচার হয়েছে কিনা তার অনুসন্ধান চলছে। তিনি বলেন, আইন নাই। কিন্তু একটা নীতিমালার আলোকে ই-কমার্স ব্যবসা চলেছে। যেসব প্রতিষ্ঠান ব্যবসা করছে তাদের কোন লাইসেন্স নাই। এই ব্যবসার সংজ্ঞা কি সেটাও নির্ধারণ করা নাই। দুদক কৌসুলি বলেন, ডেসটিনি গ্রাহকের কাছ থেকে কয়েক হাজার কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। ডেসটিনির কর্ণধাররা আদালতে হলফনামা দিয়েছে টাকা দেবে কিন্তু আজ পর্যন্ত একটি টাকাও দেয়নি। দু:খজনক হলেও সত্য পকেট থেকে একবার টাকা বেরিয়ে গেলে সেটা ফেরত আসে না। শুনানি শেষে হাইকোর্ট উপরোক্ত আদেশ দিয়ে ৮ নভেম্বর পর্যন্ত শুনানি মুলতুবি করে।