রাজশাহীতে গ্রাহকদের সঙ্গে প্রতারণা করে কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে ‘গ্লোবাল গেইন গ্রুপ’ নামে একটি কোম্পানির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) সাইফুল ইসলামকে আটক করেছে পুলিশ। আজ রোববার দুপুরে রাহশাহী নগরীর বিন্দু হোটেল অ্যান্ড রেস্টুরেন্ট থেকে বোয়ালিয়া থানা পুলিশ তাকে আটক করে।
এর আগে সকালে এই রেস্টুরেন্টের দোতলার একটি কক্ষে প্রতারণার শিকার গ্রাহকরা তাকে আটকে রাখে। পরে শিরোইল পুলিশ ফাঁড়ির একদল পুলিশ গিয়ে নিজেদের হেফাজতে নেয়। বর্তমানে তাকে নগরীর বোয়ালিয়া মডেল থানায় রেখে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে বলে জানান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নিবারণ চন্দ্র বর্মন।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ‘গ্লোবাল গেইন গ্রুপ’ নামের এই প্রতিষ্ঠানের রাজশাহী অফিস ছিল নগরীর উপশহর নূর মসজিদ এলাকায়। তবে মাত্র দুই মাস অফিস চলার পরে বন্ধ করে দেয় গ্রাহকের টাকা হাতিয়ে নেওয়া প্রতারক কোম্পানি। এর আগে রাজধানীর বাড্ডায় এই গ্রুপের কোম্পানির অফিসে অভিযান চালিয়ে ব্যবস্থাপনা পরিচালক জাহিদুল ইসলাম, প্রশাসনিক কর্মকর্তা কামরুল ইসলাম, এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর আলতাব, জাকারিয়া, মারুফ, হিসাবরক্ষক মেহেদীকে আটক করে র্যাব। এরপর তাদের অন্য অফিসের সঙ্গে রাজশাহী অফিসও বন্ধ হয়ে যায়।
রাজশাহীতে প্রতারণার শিকার কয়েকজন গ্রাহক জানান, ‘গ্লোবাল গেইন গ্রুপ’ করোনার মধ্যে মার্কেটে আসে। এর পরে বেশি মুনফা দেওয়ার নামে প্রতিষ্ঠানটি গ্রাহকদের থেকে টাকা সংগ্রহ করে। তারা জানায়, এই গ্রুপে ৫০ হাজার টাকা রাখলে প্রতিদিন ২০০ করে টাকা করে মুনাফা পাওয়া যাবে। এ ছাড়া এই গ্রুপের বিভিন্ন পণ্য আছে। যেগুলো গ্রাহকদের কাছে বিক্রি করা হয়। দাম হিসেবে লাভের টাকা থেকে কেটে নেওয়ার কথা ছিল। তবে রাজশাহীতে অল্প কিছুদিন নিয়মিত থাকার পরে তাদের কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়।
প্রতারণার শিকার নগরীর মোন্নাফের মোড় এলাকার গ্রাহক মো. সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘গ্লোবাল গ্রুপের রাজশাহীতে অফিস ছিল। তবে এখন বন্ধ। আমার ধারণা, রাজশাহীতে তাদের গ্রাহক প্রায় ১৮০ জন। আমার প্রায় ৫০ হাজার টাকাসহ গ্রাহকদের থেকে বিভিন্ন সময় এই কোম্পানিটি প্রায় কোটি টাকারও বেশি হাতিয়ে নিয়েছে।’
আরেক ভুক্তভোগী ফারুক হোসেন। তিনি দিয়েছেন ৫ লাখ ১৫ হাজার টাকা। বিভিন্ন সময়ে নিজের ও আত্মীয়ের টাকা দিয়েছেন এই গ্রাহক। করোনার সময়ে তাকে বোঝানো হয়েছিল টাকা টাকাই থাকবে, মাঝখান থেকে মুনাফা পাবে। এমন প্রলোভনে ফারুক নিজের মেজভাই মামুন হোসেন ও শাশুড়ির টাকা দেন এই প্রতারকদের।
ফারুক জানান, এই গ্রুপের প্রতিনিধিরা তাকে বলেছিল ৫০ হাজার টাকা রাখলে প্রতিদিন তিনি ২০০ টাকা পাবে। এই ২০০ টাকার মধ্যে ২০ টাকা কেটে রাখা হবে- নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস (সাবান, চাল, ডাল, কাপড় ইত্যাদি) কেনাকাটা বাবদ। তবে টাকা দেওয়ার পর শুধু টাকার ম্যাসেজ আসে। কিন্তু টাকা তোলা যায় না।’
তিনি বলেন, ‘গ্লোবাল গেইন গ্রুপের একটি আইডি ছিল। যে আইডিতে আমাদের টাকা আসত। কিন্তু আইডির নিয়ন্ত্রণ ছিল প্রতারকদের হাতেই। তারা চাইলে টাকা তোলা যেত, না চাইলে টাকা তোলা সম্ভব নয়। এমন পরিস্থিতিতে কয়েকবার যোগাযোগ করে বেশ কয়েক দফায় ১২ হাজার টাকা তুলেছি।’
গ্রহকরা বলছেন, ফারুক, সিরাজুল, আরিফুল, হাজীকুলসহ শত গ্রাহক প্রতারণার শিকার হয়েছেন। অনেকেই হারিয়েছেন শেষ সম্বল। টাকাগুলো ফিরে পাওয়ার দাবি করেছেন তারা।
এ বিষয়ে বোয়ালিয়া থানার ওসি নিবারণ চন্দ্রবর্মন বলেন, ‘এই প্রতারক চক্র প্রাথমিকভাবে রাজশাহীতে ৫০ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে বলে প্রতারণার শিকার গ্রাহকদের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে আমরা জানতে পেরেছি। দেশের বিভিন্ন স্থানে রাজশাহীর মতো কোটি কোটি টাকা প্রতারণার মাধ্যমে এই চক্রটি হাতিয়ে নিয়েছে বলে আমরা জানতে পেরেছি। আটক ব্যক্তিকে থানায় রেখে জিজ্ঞাসাবাদ করছি। তার বিরুদ্ধে থানায় একটি মামলা দায়েরের প্রক্রিয়া চলছে।’ পরবর্তীতে তাকে আদালতে সোপর্দ করা হবে বলেও জানান পুলিশের এই কর্মকর্তা।