আরিফুজ্জামান মামুন
২০৩০ সালের মধ্যে কার্বন নিঃসরণ কমাতে বাংলাদেশসহ বিশ্বের ১৩৪ দেশ ঐকমত্যে পৌঁছেছে। চলমান বিশ্ব জলবায়ু সম্মেলনে দীর্ঘ আলোচনা শেষে এ ঐকমত্যে পৌঁছে দেশগুলো। জাতিসংঘের সহযোগী সংস্থা ইউএনএফসিসির ওয়েবসাইটে ১৩৪ দেশের নাম প্রকাশ করা হয়েছে। সময় যত ঘনিয়ে আসবে দেশের সংখ্যাও বাড়বে।
অন্যদিকে জলবায়ু সম্মেলনে দেওয়া বক্তব্যে সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতিকর প্রভাবের গুরুত্ব বুঝতে ব্যর্থ হওয়ায় চীন ও রাশিয়ার সমালোচনা করেন। একই সঙ্গে ওবামা তার উত্তরসূরি ডোনাল্ড ট্রাম্পকে কটাক্ষ করে বলেন, তিনি জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে পিছিয়ে দিয়েছেন।
এবারের জলবায়ু সম্মেলনে কপোরেট দুনিয়ার উপস্থিতি বেড়েছে বহুগুণ। তাতেই জলবায়ু তহবিলে বেসরকারি খাতের সম্পৃক্তি নিয়ে সন্দিহান হয়ে পড়ছে অনুন্নত এবং দরিদ্র দেশগুলো, বিশেষ করে যারা জলবায়ুর পরিবর্তনের কারণে ঝুঁকির মধ্যে আছে। কারণ করপোরেট কোম্পানিগুলো নবায়ণযোগ্য জ্বালানির ক্ষেত্রে বিনিয়োগে আগ্রহী; কিন্তু জলবায়ু পরিবর্তনজনিত ঝুঁকির মধ্যে থাকা অনুন্নত দেশগুলোর কাছে নবায়নযোগ্য জ্বালানির চেয়েও অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ ঝড়-বন্যা প্রতিরোধে বাঁধ তৈরি, খরা-বন্যা-ভাঙন-লবণাক্ততায় বাস্তচ্যুত মানুষদের পুনর্বাসন।
২০১৫ সালে প্যারিস জলবায়ু সম্মেলনে প্রথমবারের মতো বেশ কটি করপোরেট কোম্পানি স্পন্সর হিসেবে হাজির হয়; কিন্তু গ্লাসগোয় বেসরকারি বিভিন্ন কোম্পানির সরব উপস্থিতি চোখে পড়ার মতো। জলবায়ু সম্মেলনের মুখ্য আয়োজক জাতিসংঘ; কিন্তু গ্লাসগোর কপ সম্মেলন এবার স্পন্সর করছে মাইক্রোসফট, ইউনিলিভার, হিটাচি, গ্লাক্সো-স্মিথক্লাইন, জাগুয়ার-ল্যান্ড রোভার এবং আইকিয়ার মতো প্রায় ডজনখানেক করপোরেট জায়ান্ট। এ ছাড়া কপ মূল সম্মেলন ভবনের অদূরে ‘গ্রিন জোন’ নামে আলাদা একটি ভেন্যু তৈরি হয়েছে, যেখানে বেশকিছু কোম্পানি অংশ নিয়েছে। তা ছাড়া বিশ্ব নেতাদের শীর্ষ বৈঠকের সময় একমঞ্চে দাঁড়িয়ে জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে উদ্বেগ জানিয়ে ভাষণ দিয়েছেন অ্যামাজনের কর্ণধার জেফ বেজোস। আফ্রিকায় জমির উর্বরতা বাড়ানোর জন্য টাকা দেওয়ার প্রতিশ্রুতিও দিয়েছেন তিনি।
২০৩০ সালের মধ্যে বনভূমি রক্ষা, নতুন বনায়ন, বনাচ্ছাদন, বনসম্প্রসারণে বদ্ধপরিকর জানিয়ে গত ২৬ আগস্ট জাতিসংঘের সহযোগী সংস্থা ইউএনএফসিসিতে সম্মতিপত্র পাঠায় বাংলাদেশ। বাংলাদেশের এই তথ্য ইউএনএফসিসির ওয়েবসাইটে যথাসময়ে আপলোড না হওয়ায় বাংলাদেশ বনভূমি রক্ষায় বৈশ্বিক উদ্যোগের সঙ্গে নেই বলে বিভ্রান্তি ছড়ায়। বৃহস্পতিবার গণমাধ্যমে বিভ্রান্তিকর তথ্য পরিবেশন করে বলা হয়, বাংলাদেশ বনভূমি রক্ষা, বন সৃজন প্রক্রিয়ার বৈশ্বিক উদ্যোগের সঙ্গে নেই। বাংলদেশের প্রতিনিধি দলের সদস্য ও পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের সচিব মোস্তফা কামাল বলেন, বনভূমি রক্ষায় কোনো দেশ চুক্তি করেনি। বেশকিছু দেশ ঐকমত্য পোষণ করেছে, তেমনি বাংলাদেশও এই ঐকমত্যের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করেছে; কিন্তু সিস্টেমের কারণে ইউএনএফসিসির ওয়েবসাইটে প্রথম তালিকায় নাম ছিল না। পরে শনিবার বাংলাদেশের নাম যুক্ত করে প্রকাশ করা হয়। এ রকমভাবে আরও দেশের নাম সংযুক্ত হয়ে পর্যায়ক্রমে তালিকা প্রকাশ হতে পারে।
উল্লেখ্য, বাংলাদেশে ২০৩০ সালের মধ্যে বনভূমি ১৬ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ২০ শতাংশ এবং বনায়ন ২২ শতাংশ থেকে ২৫ শতাংশে উন্নীত করার মহাপরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে বন রক্ষা, নতুন নতুন বনসৃজনে স্থানীয় জনগণকে সঙ্গে নিয়ে কাজ করা হচ্ছে।
প্রতিনিধি দলের সদস্য ও প্রধান বন সংরক্ষক মো. আলমগীর হোসাইন বলেন, আমরা প্রতিনিয়ত বন রক্ষা করে চলছি। বিভিন্ন এলাকায় বনের সংখ্যা আরও বাড়ছে। উপকূলীয় বনসহ সামাজিক বনায়ন বৃদ্ধি পাচ্ছে। টেকসই উন্নয়ন অভীষ্টে (এসডিজি-১৫) বনভূমির টেকসই ব্যবস্থাপনা, বন উজাড়রোধ, বনভূমি পুনরুদ্ধারসহ জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণের কথা বলা হয়েছে। এ জন্য বাংলাদেশ বন ও বনজসম্পদ সংরক্ষণে বিবিধ পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। দেশের সংবিধানের ১৮ক অনুচ্ছেদে রাষ্ট্রের পরিবেশ ও প্রাকৃতিক সম্পদ, জীববৈচিত্র্য, বনভূমি, বন ও বন্যপ্রাণীর সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা বিধানের সুনির্দিষ্ট সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতার কথা বলা হয়েছে।
পানিতে দাঁড়িয়ে বার্তা
জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাবে বাড়ছে সমুদ্রপৃষ্ঠের স্তর। ফলে নিচু অঞ্চলগুলো ধীরে ধীরে তলিয়ে যাচ্ছে। এরই ভয়াবহতার অন্যতম ভুক্তভোগী দ্বীপরাষ্ট্র টুভ্যালুর পররাষ্ট্রমন্ত্রী সাইমন কোফে ভিডিওবার্তা পাঠিয়েছেন গ্লাসগোতে কপ-২৬ জলবায়ু সম্মেলনে। রয়টার্সের পাঠানো ওই বার্তা আজ মঙ্গলবার প্রদর্শন করা হবে সম্মেলনে। তবে এরই মধ্যে এর কয়েকটি ছবি সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়েছে। সেখানে রীতিমতো স্যুট-টাই পরে হাঁটু পানিতে নেমে বক্তব্য দিতে দেখা যায় সাইমনকে। পানির মধ্যেই বসানো হয় মঞ্চ। হাঁটু পর্যন্ত গুটিয়ে রাখা হয় প্যান্ট।
ভাইরাল হওয়া এই ভিডিওর ব্যাপারে মন্ত্রী সাইমন বলেন, জলবায়ু বিপর্যয়ের কারণে টুভ্যালু যে পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যাচ্ছে, তা বিশ্বের কাছে তুলে ধরার জন্যই এভাবে বার্তা দেওয়া হয়েছে। ফুনাফুতির প্রধান দ্বীপ ফোনগাফালের শেষ প্রান্তে সরকারি সম্প্রচার মাধ্যম টিভিবিসি ধারণ করেছে ভিডিওটি।