নিজস্ব প্রতিবেদক
ট্রান্সজেন্ডার নারী বিউটি ব্লগার সাদ মুআকে যৌন নির্যাতন ও হত্যাচেষ্টার ঘটনার মামলায় তিনজনকে রাজধানীর ফার্মগেট ও মহাখালী থেকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব। গ্রেপ্তাররা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করে বিভিন্ন জনের সঙ্গে সখ্যতা গড়ে তোলে। এরপর ভাড়া করা ফ্লাটে নিয়ে কৌশলে ও জোরপূর্বক আপত্তিকর ভিডিও ধারণ করে ব্ল্যাকমেইল করতো। এসব অপরাধ করতে নিজেদের ভুয়া সেনা ও পুলিশ কর্মকর্তা হিসেবে পরিচয় দিতো।
শনিবার রাজধানীর ফার্মগেট ও মহাখালী এলাকায় মধ্যরাত থেকে রোববার দুপুর ১টা পর্যন্ত অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়।
গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন- মূলহোতা ফুয়াদ আমিন ইশতিয়াক ওরফে সানি (২১), অন্যতম সহযোগী সাইমা শিকদার নিরা ওরফে আরজে নিরা (২৩) ও আব্দুল্লাহ আফিফ সাদমান ওরফে রিশু (১৯)।
অভিযানে ভিকটিমের ছিনিয়ে নেয়া মোবাইল উদ্ধারসহ প্রতারণার কাজে ব্যবহৃত অবৈধ ওয়াকিটকি সেট, খেলনা পিস্তল, মোবাইল ও একাধিক ব্যাংকের কার্ড জব্দ করা হয়।
রোববার বিকেলে কারওয়ান বাজার র্যাব মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলনে বিস্তারিত জানান বাহিনীর মুখপাত্র কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।
তিনি বলেন, এ ঘটনার ভিত্তিতে ভুক্তভোগী রাজধানীর ভাটারা থানায় একটি মামলা দায়ের করেন।
খন্দকার আল মঈন বলেন, একজন ট্রান্সজেন্ডার নারী বিউটি ব্লগারকে যৌন নির্যাতন ও হত্যাচেষ্টার ঘটনার পর গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে র্যাব সদর দপ্তর গোয়েন্দা শাখা ও র্যাব-১ ও র্যাব-২ এর যৌথ অভিযানে গত রাত থেকে শুরু করে আজ দুপুর পর্যন্ত রাজধানীর ফার্মগেট ও মহাখালী এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে তাদেরকে গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তারকৃতরা একটি সংঘবদ্ধ অপরাধী চক্র।
র্যাব মুখপাত্র বলেন, গ্রেপ্তার ইশতিয়াক এই চক্রের মূলহোতা ও আরজে নিরা ও রিশু তার অন্যতম সহযোগি। গ্রেপ্তাররা গত দুই বছর ধরে বিভিন্ন কৌশলে জিম্মি, ব্ল্যাকমেইল ও প্রতারণা করে বিভিন্ন শ্রেণী পেশার নারী-পুরুষদের অর্থ হাতিয়ে নিত। তারা সাধারণত সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করে বিভিন্নজনের সঙ্গে সখ্যতা গড়ে তোলে।
র্যাবের কর্মকর্তা মঈন বলেন, এরপর কৌশলে বিভিন্ন সময়ের আপত্তিকর ছবি ও ভিডিও ধারণ করে ভিকটিমদের হেনস্থা ও ব্ল্যাকমেইল করত। তাদের ভাড়া বাসা ব্যবহার করে জোরপূর্বক আপত্তিকর ভিডিও ধারণ করে ব্ল্যাকমেইল করতো। এছাড়া অনলাইনেও ভিকটিমদের ফাঁদে ফেলত তারা। গ্রেপ্তাররা নিজেদেরকে ভুয়া সেনা কর্মকর্তা ও পুলিশ কর্মকর্তা হিসেবে পরিচয় দিতো।
র্যাব জানায়, কিছুদিন আগে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভিকটিম ট্রান্সজেন্ডার (রূপান্তরকামী) নারীর সঙ্গে গ্রেপ্তার সাদমান আফিফ রিশুর পরিচয় হয়। পরিচয়ের সূত্রে গত ১০ জানুয়ারি রাজধানীর ভাটারা এলাকার (বসুন্ধরা) একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছে একটি রেস্টুরেন্টের সামনে রিশুর সঙ্গে ভিকটিমের সাক্ষাত হয়। এরপর সারপ্রাইজ দেয়ার কথা বলে কৌশলে ভুক্তভোগীকে বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় ইশতিয়াকের ভাড়া বাসায় নিয়ে যায়।
বাসায় নেয়ার পরে ইশতিয়াক, নিরা ও রিশু জোরপূর্বক ভুক্তভোগীকে মারধর, শ্লীলতাহানী ও যৌন নিপীড়ন করার পাশাপাশি ভিডিও ধারণ করে। এসময় তারা ট্রান্সজেন্ডার ওই নারীর সঙ্গে থাকা মোবাইল ফোন, স্বর্ণালঙ্কার ও নগদ টাকা ছিনিয়ে নেয় ও এক লাখ টাকা দাবি করে।
এসময় গ্রেপ্তাররা আইন-শৃঙ্খলা ও সামরিক বাহিনীর ভুয়া পরিচয় দিয়ে ভয়-ভীতি দেখায়। ওই ট্রান্সজেন্ডার নারীকে থানায় নিয়ে যাওয়ার কথা বলে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় ঘুরিয়ে রামপুরায় নামিয়ে দেয়।
র্যাব কর্মকর্তা খন্দকার আল মঈন বলেন, গ্রেপ্তার ইশতিয়াকের বিরুদ্ধে রাজধানীর বিভিন্ন থানায় দুটি মামলা রয়েছে। ইতোপূর্বে বিভিন্ন মামলায় সে কারাভোগ করেছে।