1. admin@deshmediabd.info : admin :
  2. support@bdsoftinc.info : adminr :
মঙ্গলবার, ১৬ ডিসেম্বর ২০২৫, ০১:২০ পূর্বাহ্ন
সর্বশেষ সংবাদঃ
বাংলাদেশি চলচ্চিত্রে শাবানার দীর্ঘ ও প্রভাবশালী পথচলা অল্প সময়ে অভিনয়ে পরিচিতি গড়ে তুলেছেন তটিনী সংসদ নির্বাচনের অনিয়ম তদন্তে বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তাদের নিয়ে ৩০০ অনুসন্ধান কমিটি গঠন ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র ওসমান হাদির ওপর হামলার ঘটনায় ৪৮ ঘণ্টার আল্টিমেটাম ডিএসসু নেতাদের সন্ত্রাসবিরোধী আইনে উত্তরা পশ্চিম থানায় চার জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ বাংলা ভাষাভিত্তিক এআই প্ল্যাটফর্ম ‘কাগজ ডট এআই’ ও নতুন বাংলা ফন্ট ‘জুলাই’ উদ্বোধন আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে অনুকূল পরিবেশের কথা জানালেন অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ সুদানে হামলায় নিহত ৬ বাংলাদেশি শান্তিরক্ষী: শোক প্রকাশ নৌপরিবহন উপদেষ্টার জুলাই গণঅভ্যুত্থানের মানবতাবিরোধী অপরাধে শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খানের সাজা বাড়াতে প্রসিকিউশনের আপিল ২০২৪ সালের জুলাই বিপ্লবকে বাংলাদেশের দীর্ঘ গণতান্ত্রিক সংগ্রামের ধারাবাহিকতা হিসেবে উল্লেখ করলেন মাহফুজ আলম

রাজধানীর বায়ুদূষণে শীর্ষে শাহবাগ, শব্দদূষণে গুলশান।

রিপোর্টার
  • আপডেট : রবিবার, ২৯ মে, ২০২২
  • ২৯২ বার দেখা হয়েছে

রাজধানীতে বায়ুদূষণে শীর্ষে রয়েছে শাহবাগ এলাকা আর শব্দদূষণে ঢাকার অভিজাত এলাকা গুলশান। বায়ুমন্ডলীয় দূষণ অধ্যয়ন কেন্দ্র (ক্যাপস) সম্প্রতি এক গবেষণায় এ তথ্য জানিয়েছে। সংস্থাটি জানায়, বায়ু ও শব্দ দুটিতেই সবচেয়ে দূষণ কম জাতীয় সংসদ ভবন এলাকায়। তবে তা সহনীয় মাত্রার থেকে অনেক বেশি।

জানা গেছে, ঢাকা দীর্ঘদিন ধরে বায়ুদূষণে ভুগছে। এর বাতাসের গুণমান সাধারণত শীতকালে অস্বাস্থ্যকর, বর্ষাকালে কিছুটা উন্নত হয়। ২০১৯ সালের মার্চ মাসে পরিবেশ অধিদপ্তর ও বিশ্বব্যাংকের একটি প্রতিবেদনে বলা হয়, ঢাকার বায়ুদূষণের তিনটি প্রধান উৎস হলো ইটভাটা, যানবাহনের ধোঁয়া ও নির্মাণ সাইটের ধূলা।

রোববার (২৯ মে) জাতীয় প্রেসক্লাবের তোফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানায় বায়ুমন্ডলীয় দূষণ অধ্যয়ন কেন্দ্র (ক্যাপস)। সংস্থাটির পক্ষ থেকে ২০২১ সালের এপ্রিল থেকে চলতি বছরের মার্চ পর্যন্ত এক বছরে আহসান মঞ্জিল, আবদুল্লাহপুর, মতিঝিল, শাহবাগ, ধানমন্ডি-৩২, সংসদ এলাকা, তেজগাঁও, আগারগাঁও, মিরপুর-১০ ও গুলশান-২ এর বায়ু ও শব্দমানের তথ্য-উপাত্ত বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে সংগ্রহ ও বিশ্লেষণ করে এ তথ্য জানানো হয়।

গবেষণায় নগরীর গুরুত্বপূর্ণ ১০টি স্থানের বায়ুমান ‘অস্বাস্থ্যকর’ ছাড়াও সমগ্র ঢাকাকে মিশ্র এলাকার সঙ্গে তুলনা করলে ৮২ শতাংশ সময় ৬০ ডেসিবলের ওপর শব্দ পাওয়া গেছে বলে উঠে এসেছে।

শব্দদূষণের বিষয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়, ঢাকা শহরের ১০টি এলাকার মধ্যে গুলশান-২ এলাকায় শব্দের সর্বোচ্চ মান এলইকিউ ৯৫.৪৪ ডেসিবল, যা মিশ্র এলাকায় দিনের বেলার জাতীয় আদর্শ মান (৫৫ ডেসিবল) থেকে ১.৭ গুণ বেশি। এর পরের অবস্থান আবদুল্লাহপুরে, ৯৫.৪৩ ডেসিবল, যা জাতীয় আদর্শ মানের (৬০ ডেসিবল) থেকে ১.৬ গুণ বেশি। অন্যদিকে তেজগাঁও এলাকার সর্বনিম্ন এলইকিউ মান ছিল ৮৯ ডেসিবল, যা জাতীয় আদর্শ মান (৭৫ ডেসিবল) থেকে ১.১ গুণ বেশি। গবেষণার আওতার মধ্যে সর্বাধিক ১৩২ ডেসিবল শব্দ রেকর্ড করা হয়েছে গুলশান-২ এলাকায় এবং সর্বনিম্ন শব্দ রেকর্ড হয়েছে সংসদ ভবন এলাকায় ৩১.৭ ডেসিবল।

১০টি স্থানের তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, নীরব এলাকায় ৯৬.৭ শতাংশ সময় আদর্শমান (৫০ ডেসিবল) অতিক্রম করেছে, আবাসিক এলাকায় ৯১.২ শতাংশ সময় আদর্শমান (৫৫ ডেসিবল), মিশ্র এলাকায় ৮৩.২ শতাংশ সময় আদর্শ মান (৬০ ডেসিবল), বাণিজ্যিক এলাকায় ৬১ শতাংশ সময় আদর্শ মান (৭০ ডেসিবল) এবং শিল্প এলাকায় ১৮.২ শতাংশ আদর্শ মান (৭৫ ডেসিবল) অতিক্রম করেছে। পুরো ঢাকা শহরের মিশ্র এলাকার সঙ্গে তুলনা করলে ১০টি স্থানেই ৮২ শতাংশ সময় ৬০ ডেসিবলের ওপর শব্দ পাওয়া গেছে।

বায়ু দূষণ বিষয়ে গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ ১০টি স্থানের বায়ুমান সূচক অনুযায়ী অবস্থা ‘অস্বাস্থ্যকর’। এসব স্থানে বস্তুকণা ২.৫ পিএমের গড় বার্ষিক উপস্থিতি প্রতি ঘনমিটার বায়ুতে ৭৭ মাইক্রোগ্রাম, যা আদর্শ মানের (১৫ মাইক্রোগ্রাম) চেয়ে ৫.১ গুণ বেশি। এছাড়া বস্তুকণা পিএম ১০-এর গড় বার্ষিক উপস্থিতি প্রতি ঘনমিটার বায়ুতে ১০৫ মাইক্রোগ্রাম, যা বার্ষিক আদর্শ মানের (৫০ মাইক্রোগ্রাম) চেয়ে গড়ে ২.১ গুণ বেশি। আর ১০টি স্থানের মধ্যে সর্বোচ্চ বায়ুদূষণ শাহবাগ এলাকায়, সেখানে পিএম ২.৫-এর গড় উপস্থিতি প্রতি ঘনমিটারে ৮৫ মাইক্রোগ্রাম। অর্থাৎ আদর্শ মান থেকে ৫.৬ গুণ বেশি এবং সর্বনিম্ন বায়ুদূষণ জাতীয় সংসদ ভবন এলাকায় পিএম ২.৫-এর গড় উপস্থিতি প্রতি ঘনমিটারে ৭০ গ্রাম। অর্থাৎ আদর্শ মান থেকে ৪.৬ গুণ বেশি।

সংবাদ সম্মেলনে শব্দ ও বায়ুদূষণরোধে বায়ুমন্ডলীয় দূষণ অধ্যয়ন কেন্দ্র থেকে কিছু দাবি জানানো হয়। দাবিগুলো হলো : বায়ুদূষণ রোধে ঢাকা শহরের সব নির্মাণ প্রকল্পে নির্মাণবিধি মেনে সুষ্ঠু বাস্তবায়ন ও নিয়মিত তদারকি নিশ্চিত করা; বায়ুদূষণ রোধে হাইকোর্টের নির্দেশনা বাস্তবায়ন নিশ্চিত করা এবং অমান্যকারীদের আইনের আওতায় আনা; খসড়া নির্মল বায়ু আইন ২০১৯ অধিকতর সুস্পষ্ট করে চূড়ান্ত করা এবং তা যথাসম্ভব বাস্তবায়ন; শব্দদূষণ (নিয়ন্ত্রণ) বিধিমালা, ২০০৮-এ এর সংজ্ঞা অনুযায়ী চিহ্নিত জোনসমূহে (নীরব, আবাসিক, বাণিজ্যিক, শিল্প ও মিশ্র) সাইনপোস্ট উপস্থাপন করে জনসাধারণকে সচেতন করা; প্রয়োজন ছাড়া হর্ন বাজানো থেকে বিরত রাখা; সন্ধ্যার পর উচ্চস্বরে গান না বাজানো এবং সন্ধ্যার পর নির্মাণ কাজ না করা; পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের বার্ষিক বাজেট বরাদ্দ বাড়ানো। এছাড়া বায়ুদূষণের পূর্বাভাস দেয়ার প্রচলন করতে হবে এবং পরিবেশ বিসিএস ক্যাডার নিয়োগ; জনস্বাস্থ্য ও স্বার্থ রক্ষায় সরকার ও সচেতন মহলের সমন্বিত অংশীদারিত্বমূলক, বিজ্ঞানভিত্তিক, টেকসই ও কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ।

ইউএসএইডের অর্থায়নে ওয়াটার কিপার্স বাংলাদেশ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগ এবং বেসরকারি স্ট্যামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের উদ্যোগে এ গবেষণা করা হয়। সংবাদ সম্মেলনে ক্যাপসের চেয়ারম্যান ও স্ট্যামফোর্ড ইউনিভার্সিটির পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. আহমদ কামরুজ্জামান মজুমদার লিখিত বক্তব্য তুলে ধরেন।

ক্যাপসের প্রতিষ্ঠিতা পরিচালক আহমদ কামরুজ্জমান মজুমদার বলেন, ‘আবদুল্লাহপুর থেকে শাহবাগ পর্যন্ত এলাকায় একাধিক নির্মাণ প্রকল্পের কাজ চলছে। এ কারণে সংশ্লিষ্ট এলাকার বাতাসে পিএম ২.৫-এর উপস্থিতি অনেক বেশি। ঢাকাকে দূষণের হাত থেকে বাঁচানোর দায়িত্ব সবার। নীরব ঘাতক বায়ু ও শব্দদূষণ কেড়ে নিচ্ছে হাজারো প্রাণ। অসুস্থ করছে শিশুদের। চিকিৎসা ব্যয় বাড়ছে। প্রকৃতি হারাচ্ছে তার ভারসাম্য।’

তিনি আরও বলেন, ‘যেসব এলাকায় নির্মাণ কাজ বেশি, সেসব এলাকায় দূষণ সবচেয়ে বেশি। বায়ুদূষণ এবং শব্দদূষণ নিয়ে গবেষণা করতে গিয়ে এ চিত্র উঠে এসেছে।’

স্টামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য মোহাম্মদ আলী নকী বলেন, ‘পরিবেশ আন্দোলন আসলে একটা রাজনৈতিক আন্দোলন। যে সরকারই ক্ষমতায় থাকুক, তারা উন্নয়নের চেষ্টা করবে। কারণ এ উন্নয়ন চোখে দেখা যায়। আবার বিরোধী দল এ উন্নয়নের ফলে যে ক্ষতি হচ্ছে, তা নিয়ে সতর্ক থাকবে। এর মধ্যে একটা বিশ্বাসযোগ্য দল থাকা দরকার, যারা উন্নয়নের পক্ষে থাকবে, আবার উন্নয়নের ফলে যে ক্ষতি হচ্ছে, সেগুলো কমানোর কথা বলবে।’

বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) সাধারণ সম্পাদক ও ওয়াটার কিপার্স সমন্বয়ক শরীফ জামিল বলেন, ‘আগে নির্মাণকাজের জন্য ঢাকায় এত বায়ুদূষণ ছিল না। কিন্তু এখন তা বেশি। নির্মাণকাজ নিয়ন্ত্রণ করা গেলে বায়ুদূষণ নিয়ন্ত্রণ করা যাবে। বিশ্বে এখন মানবিক বিপর্যয়ের প্রধান কারণ পরিবেশদূষণ। তাই বায়ু ও শব্দদূষণ রোধে কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে। এ বিষয়ে সামগ্রিক পরিকল্পনা প্রণয়ন করে তা বাস্তবায়নে সমন্বিত পদক্ষেপ নিতে হবে।’

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. নূরুল ইসলাম বলেন, ‘দ্রুত ‘নির্মল বায়ু আইন-২০১৯’ পাসের উদ্যোগ নিতে হবে। আইন ও নীতি বাস্তবায়নে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের আরও দায়িত্বশীল হতে হবে।’

গত বছর শিকাগো ইউনিভার্সিটির এনার্জি পলিসি ইনস্টিটিউট প্রকাশিত সর্বশেষ ‘এয়ার কোয়ালিটি লাইফ ইনডেক্স’-এর প্রকাশিত তথ্যে বলা হয়েছে, বায়ুদূষণের কারণে ঢাকায় বসবাসরত মানুষের গড় আয়ু কমেছে প্রায় সাত বছর সাত মাস। আর সারাদেশের মানুষের কমেছে পাঁচ বছর চার মাস। লাইফ ইনডেক্সের তথ্যমতে, বায়ুদূষণের কারণে সারা বিশ্বে মানুষের গড় আয়ু কমেছে দুই বছর দুই মাস।

ওয়ার্ল্ড হেলথ অর্গানাইজেশন (ডব্লিউএইচও) জানায়, বায়ুদূষণের কারণে প্রতি বছর বিশ্বব্যাপী আনুমানিক ৭০ লাখ মানুষ মারা যাচ্ছে, যা মূলত স্ট্রোক, হৃদরোগ, ক্রনিক অবস্ট্রাকটিভ পালমোনারি ডিজিজ, ফুসফুসের ক্যান্সার ও তীব্র শ্বাসযন্ত্রের সংক্রমণের কারণে হচ্ছে।

জাতিসংঘ বলছে, বিশ্বব্যাপী প্রতি ১০ জনের মধ্যে ৯ জন দূষিত বাতাসের শ্বাস নেন। বায়ুদূষণের কারণে প্রতিবছর নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশে ৭০ লাখ মানুষের অকালমৃত্যু ঘটে।

s
এই বিভাগের আরো সংবাদ
© All rights reserved © 2021 deshmediabd.com