নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম বলেছেন, `নির্বাচনে না আসলে বিএনপির অবস্থা ন্যাপের মতো হবে, আর আওয়ামী লীগ ২০৪১ সাল পর্যন্ত ক্ষমতায় থাকবে। সংবিধান মেনে আগামী নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। নির্বাচন ছাড়া এদেশে কেউ আর কোনোদিন ক্ষমতায় যেতে পারবে না। আর কোনোদিন এ দেশে ৭৫ হবে না।’
সোমবার (৩০ মে) বিকেলে চট্টগ্রাম মহানগরীর দ্য কিং অব চিটাগং কনভেনশন হলে চট্টগ্রাম মহানগর যুবলীগের সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন ।
শেখ সেলিম বলেন, ‘জিয়াউর রহমান বেঁচে থাকলে তার ফাঁসি হতো। মৃত মানুষকে আসামি করা যায় না, এটা দেশের আইনে আছে। তিনি বেঁচে গেছেন। ১৯৭৫ সালে মোস্তাক-জিয়া একটি নির্বাচিত সরকারকে ষড়যন্ত্র করে উৎখাত করে। তিনি বঙ্গবন্ধুকে খুন করে তার হত্যার বিচার না হওয়ার জন্য ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ জারি করেন। ২২ হাজার ৫০০ যুদ্ধাপরাধী জেলে ছিলো তাদের ছেড়ে দিয়েছেন। তারা ও তাদের দল বিএনপি এখন বলে গণতন্ত্র, আইনের শাসনের কথা। তাদের মুখে এসব মানায় না।’
তিনি আরো বলেন, ‘খালেদা জিয়া বলেছিলেন জোড়া তালি দিয়ে পদ্মা সেতু হবে। আর পদ্মা সেতুতে নাকি দুর্নীতি হয়েছে। অথচ তখনো টাকা আসেনি। ড. ইউনুস যুক্তরাষ্ট্রে হিলারির কাছে গিয়ে বলেছেন পদ্মা সেতুতে নাকি দুর্নীতি হয়েছে। বঙ্গবন্ধু কন্যা মচকাবে কিন্তু ভেঙে যাবে না। আজকে তারা বলে বাংলাদেশ নাকি শ্রীলঙ্কা হবে। বাংলাদেশ কখনোই শ্রীলঙ্কা হবে না।’
দ্রব্য মূল্যের উর্ধ্বগতির প্রসঙ্গ টেনে শেখ সেলিম বলেন, ‘সব দেশেই জিনিসপত্রের দাম বেড়েছে। আমাদের দেশেও বেড়েছে। সেটি আমাদের কারণে বাড়েনি। আন্তর্জাতিক কারণে বেড়েছে। দাম বাড়লে মানুষের কষ্ট হয়। কিন্তু শেখ হাসিনা চেষ্টা করছেন সবকিছু যেন মানুষের ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে থাকে। বিএনপি ঘোলা পানিতে মাছ শিকার করে ক্ষমতায় যেতে চায়। তারা জনগণকে ভুল বুঝিয়ে বিভ্রান্ত করছে। আমেরিকা, পাকিস্তান থেকে বাংলাদেশের অবস্থান বর্তমানে অনেক ভালো। শেখ হাসিনা যদি ক্ষমতায় থাকে আমরা সিঙ্গাপুর হবো, মালয়েশিয়া হবো।’
বিএনপি সরকারকে ক্ষমতা থেকে নামানোর কথা যত বলে এ সরকারের মেয়াদ ততো বাড়তে থাকে। ২০০৯ সাল থেকে তারা সরকার পতনের কথা বলছে। কিন্তু সরকারের মেয়াদ তিন দফায় বেড়েছে। আমরা ২০৪১ সাল পর্যন্ত ক্ষমতায় থাকবো ইনশাআল্লাহ।’
সম্মেলনের উদ্বোধনী বক্তব্যে বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগের চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস পরশ বলেন, ‘কথিত সুশীলরা আরো একটি এক-এগারো আয়োজন করতে চায়। বর্তমান সরকারকে ব্যর্থ প্রমাণ করতে নীল নকশা তৈরি করছে একটি মহল। এ অপচেষ্টা বাস্তবায়ন করতে এক-এগারোর কুশীলবরা উঠে পড়ে লেগেছে। ক্ষমতার লোভে আপনারা এসব অপরাধ বন্ধ করেন। কোনো জাতীয় সঙ্কটে তো আপনারা জনগণের পাশে থাকেন না। আপনারা ভুলে যাবেন না, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জানেন জনগণই তার শক্তি।’
তিনি আরো বলেন, ‘শেখ হাসিনার সরকারের অধীনেই আগামী নির্বাচন হবে৷ তিনিই ন্যায়ের প্রতীক। কিছু কিছু গণমাধ্যম বিরোধী দলের ভূমিকায় নেমেছে। গণমাধ্যম দেশের চতুর্থ স্তম্ভ। সরকার ব্যর্থ- এটা প্রমাণ করতে মরিয়া একটি মহল। এ সমাজের একটি মহল সবসময় মানুষকে বিভ্রান্ত করছে। দেশের ধারাবাহিক গণতন্ত্র তাদের পছন্দ নয়।’
যুবলীগের নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে পরশ বলেন, ‘সম্মেলনের মাধ্যমে নতুন নেতৃত্বই শুধু গঠিত হবে না, একটি নতুন অধ্যায়েরও সূচনা হবে। নতুন নেতৃত্বের হাতে অনেক চ্যালেঞ্জ। নতুন নেতাদের নতুনভাবে সংগঠনকে গড়ে তুলতে হবে। সেই সঙ্গে আগামী নির্বাচনে ভূমিকা পালন করতে হবে। যুবলীগ করতে হলে স্বচ্ছ ও ন্যায়ের রাজনীতি করতে হবে।’
মহানগর যুবলীগকে নির্দেশনা দিয়ে পরশ বলেন, ‘সব ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করতে হবে ঐক্যবদ্ধভাবে। নিজেদের মধ্যে ভেদাভেদ ভুলে গিয়ে এক হতে হবে, গ্রুপিং বন্ধ করতে হবে, অনৈতিক ও অপরাধমূলক কাজ বন্ধ করতে হবে।’
মহানগর যুবলীগের আহ্বায়ক মহিউদ্দিন বাচ্চুর সভাপতিত্বে সম্মেলনে অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ ও সাংগঠনিক সম্পাদক ও জাতীয় সংসদের হুইপ আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন। অনুষ্ঠানে প্রধান বক্তা হিসেবে উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক মো. মাইনুল হাসান খান নিখিল।
বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন শিক্ষা উপমন্ত্রী ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র এম. রেজাউল করিম চৌধুরী, চট্টগ্রাম-১০ আসনের সাংসদ মো. আফছারুল আমীন, চট্টগ্রাম-১১ আসনের সাংসদ এম. আবদুল লতিফ, চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মাহাতাব উদ্দীন চৌধুরী, চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দিন, চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান জহিরুল আলম দোভাষ প্রমুখ।