বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন ইংল্যান্ডকে তিন ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজে হোয়াইওয়াশ করলো স্বাগতিক বাংলাদেশ।
আজ সিরিজের তৃতীয় ও শেষ ম্যাচে বাংলাদেশ ১৬ রানে হারিয়েছে ইংল্যান্ডকে। প্রথম দুই ম্যাচ যথাক্রমে- ৬ ও ৪ উইকেটে জিতেছিলো টাইগাররা। এতে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে প্রথম দ্বিপাক্ষীক টি-টোয়েন্টি সিরিজ ৩-০ ব্যবধানে জিতলো সাকিবের দল। এর আগে সফরকারী ইংল্যান্ডের কাছে তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজ ২-১ ব্যবধানে হেরেছিলো টাইগাররা।
ওপেনার লিটন দাসের হাফ-সেঞ্চুরিতে টস হেরে প্রথমে ব্যাট করে ২০ ওভারে ২ উইকেটে ১৫৮ রান করে বাংলাদেশ। ৫৭ বলে ৭৩ রানের দুর্দান্ত ইনিংস খেলেন লিটন। জবাবে ২০ ওভারে ৬ উইকেটে ১৪২ রান করে হার বরণ করে নেয় ইংল্যান্ড।
তিন ওয়ানডে ও দুই টি-টোয়েন্টির পর অবশেষে এই সিরিজে প্রথমবারের মত টসে জয় পান ইংল্যান্ড অধিনায়ক জশ বাটলার। মিরপুর শেরে বাংলা জাতীয় ত্রিকেট স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত ম্যাচে টস জিতে প্রথমে বোলিং বেছে নেন বাটলার।
ব্যাট হাতে নেমে বাংলাদেশকে দারুন সূচনা এনে দেন দুই ওপেনার লিটন দাস ও রনি তালুকদার। পাওয়ার প্লে-তে ৪৬ রান তুলেন তারা। অবশ্য ষষ্ঠ ওভারে পেসার জোফরা আর্চারের বলে রেহান আহমেদকে ক্যাচ দিয়ে বেঁচে যান ব্যক্তিগত ১৭ রানে থাকা রনি।
সপ্তম ওভারে বাংলাদেশের রান ৫০ পার করে। অষ্টম ওভারে দলীয় ৫৫ রানে রনিকে ফিরিয়ে ইংল্যান্ডকে প্রথম সাফল্য এনে দেন স্পিনার আদিল রশিদ। ৩টি চারে ২২ বলে ২৪ রান করেন রনি।
এরপর ক্রিজে লিটনের সঙ্গী হন শান্ত। মারমুখী মেজাজেই দলের রানের চাকা সচল রাখেন লিটন। ১৩তম ওভারে ৪১ বল খেলে টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারের নবম হাফ-সেঞ্চুরি পূর্ণ করেন লিটন। একই ওভারে বাংলাদেশের রান ১শতে পৌঁছায়।
হাফ-সেঞ্চুরির পরই থামতে পারতেন লিটন। ১৪তম ওভারের প্রথম বলে আর্চারের বলে বেন ডাকেটের হাতে জীবন পান ৫১ রানে থাকা লিটন। ওভারের শেষ দুই বলে চার-ছয় মারেন লিটন।
১৭তম ওভারের শেষ বলে দলীয় ১৩৯ রানে লিটনকে বিদায় করেন ক্রিস জর্ডান। স্লোয়ার ডেলিভারিতে ডিপ মিড উইকেটে ফিল সল্টকে ক্যাচ দেন ১০টি চার ও ১টি ছক্কায় ৫৭ বলে ৭৩ রান করা লিটন। টি-টোয়েন্টিতে এটিই ক্যারিয়ার সেরা স্কোর লিটনের। শান্তর সাথে দ্বিতীয় উইকেটে ৫৮ বলে ৮৪ রান যোগ করেন লিটন।
লিটন ফেরার পর শেষ ১৮ বলে ১টি চারে মাত্র ১৯ রান যোগ করতে পারেন শান্ত ও অধিনায়ক সাকিব আল হাসান। এতে ২০ ওভারে ২ উইকেটে ১৫৮ রানের সংগ্রহ পায় বাংলাদেশ। ১টি চার ও ২টি ছক্কায় ৩৬ বলে অপরাজিত ৪৭ রান করেন শান্ত। ৬ বলে ৪ রান নিয়ে অপরাজিত থাকেন সাকিব। ইংল্যান্ডের রশিদ ও জর্ডান ১টি করে উইকেট নেন।
হোয়াইটওয়াশ এড়াতে ১৫৯ রানের লক্ষ্যে খেলতে নেমে ইনিংসের তৃতীয় বলেই উইকেট হারায় ইংল্যান্ড। অভিষেক ম্যাচে ইনিংসের প্রথম ওভারেই আক্রমনে আসেন স্পিনার তানভীর ইসলাম। প্রথম বলে চার মারেন ডেভিড মালান। তৃতীয় বলে লিটনের দুর্দান্ত স্টাম্পিংয়ে শূন্যতে আউট হন আরেক ওপেনার সল্ট।
শুরুতেই উইকেট হারানোর পর বাংলাদেশ বোলারদের উপর চড়াও হন মালান ও তিন নম্বরে নামা বাটলার। দ্বিতীয় ওভারে রিভিউ নিয়ে বাঁচার পর বাটলারকে নিয়ে পাওয়ার প্লেতে ৪৭ রান তুলেন মালান। সাকিবের করা সপ্তম ওভারে ১টি করে চার-ছক্কায় ১৩ রান তুলেন মালান। নবম ওভারে হাসানের বলে তৌহিদ হৃদয়ের হাতে ব্যক্তিগ ৪২ রানে জীবন পন মালান।
এরপর ৪৩ বলে টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারের ১৫তম হাফ-সেঞ্চুরি পূর্ণ করেন মালান। পরের ওভারে ইংল্যান্ডের রান ১শ পূর্ণ করেন মালান-বাটলার। দারুণ জুটিতে ম্যাচের লাগাম হাতে মুঠোয় নিয়ে নেয় এ জুটি।
বাংলাদেশকে ম্যাচে ফেরাতে এ সময় ছয় বোলার ব্যবহার করেও সাফল্য পাননি সাকিব। অবশেষে ১৪তম ওভারে ডাবল উইকেটের দেখা পায় বাংলাদেশ। প্রথম বলে মালানকে শিকার করে জুটি ভাঙ্গেন পেসার মুস্তাফিজুর রহমান। এই উইকেটের মাধ্যমে বিশে^র ষষ্ঠ ও বাংলাদেশের দ্বিতীয় বোলার হিসেবে টি-টোয়েন্টি ১শ শিকার পূর্ণ করেন ফিজ। ৬টি চার ও ২টি ছক্কায় ৪৭ বলে ৫৩ রান করেন মালান।
পরের ডেলিভারিতে মিরাজের থ্রোতে রান আউট হন ৪টি চার ও ১টি ছক্কায় ৩১ বলে ৪০ রান করা বাটলার। দ্বিতীয় উইকেটে ৭৬ বলে ৯৫ রান যোগ করেন মালান-বাটলার জুটি।
১০০ রানে তৃতীয় উইকেট হারানোর পর জুটির গড়ার চেষ্টা করেন বেন ডাকেট ও মঈন আলি। কিন্তু ১৭তম ওভারে ডাকেট ও মঈনকে বিদায় করে বাংলাদেশকে চালকের আসনে বসিয়ে দেন পেসার তাসকিন। মিরাজকে ক্যাচ দিয়ে ৯ রানে মঈন এবং ১১ রান করা ডাকেটকে বোল্ড করেন তাসকিন। এ অবস্থায় ম্যাচ জিততে শেষ ৩ ওভারে ৩৬ রানের দরকার পড়ে ইংল্যান্ডের।
১৮তম ওভারে ৫ রান দেন মুস্তাফিজ। ১৯তম ওভারের প্রথম বলে কারানকে ৪ রানে শিকার করেন সাকিব। ওভার থেকে ইংল্যান্ড পায় ৪ রান। শেষ ওভারে জয়ের জন্য ২৭ রান দরকার পড়ে ইংল্যান্ডের। হাসানের করা শেষ ওভার থেকে ১০ রানের বেশি নিতে পারেননি ওকস ও জর্ডান। ২০ ওভারে ৬ উইকেটে ১৪২ রান করে ম্যাচ হারে ইংল্যান্ড। বাংলাদেশের তাসকিন ২টি, তানভীর-সাকিব ও মুস্তাফিজ ১টি করে উইকেট নেন।
স্কোর কার্ড :
বাংলাদেশ ব্যাটিং ইনিংস :
লিটন দাস ক সল্ট ব জর্ডান ৭৩
রনি তালুকদার ক এন্ড ব রশিদ ২৪
নাজমুল হোসেন শান্ত অপরাজিত ৪৭
সাকিব আল হাসান অপরাজিত ৪
অতিরিক্ত (লে বা-৩, নো-১, ও-৬) ১০
মোট (২ উইকেট, ২০ ওভার) ১৫৮
উইকেট পতন : ১/৫৫ (রনি), ২/১৩৯ (লিটন)।
ইংল্যান্ড বোলিং :
কারান : ৪-০-২৮-০ (ও-২, নো-১),
ওকস : ১-০-১২-০,
রশিদ : ৪-০-২৩-১ (ও-৩),
আর্চার : ৪-০-৩৩-০ (ও-১),
রেহান : ৩-০-২৬-০.
মঈন : ১-০-১২-০,
জর্ডান : ৩-০-২১-১।
ইংল্যান্ড ব্যাটিং ইনিংস :
ডেভিড মালান ক লিটন ব মুস্তাফিজ ৫৩
ফিল সল্ট স্টাম্প লিটন ব তানভীর ০
জশ বাটলার রান আউট (মিরাজ) ৪০
বেন ডাকেট বোল্ড ব তাসকিন ১১
মঈন ক মিরাজ ব তাসকিন ৯
কারান ক তানভীর ব সাকিব ৪
ওকস অপরাজিত ১৩
জর্ডান অপরাজিত ২
অতিরিক্ত (বা-২, লে বা-৬, ও-২) ১০
মোট (৬ উইকেট, ২০ ওভার) ১৪২
উইকেট পতন : ১/৫ (সল্ট), ২/১০০ (মালান), ৩/১০০ (বাটলার), ৪/১১৯ (মঈন), ৫/১২৩ (ডাকেট), ৬/১২৮ (কারান)।
বাংলাদেশ বোলিং :
তানভীর : ২-০-১৭-১,
তাসকিন : ৪-০-২৬-২ (ও-২),
সাকিব : ৪-০-৩০-১ (ও-১),
হাসান : ৪-০-২৯-০,
মুস্তাফিজুর : ৪-০-১৪-১ (ও-১),
মিরাজ : ২-০-১৮-০।
ফল : বাংলাদেশ ১৬ রানে জয়ী।
ম্যাচ সেরা: লিটন দান(বাংলাদেশ)।
সিরিজ সেরা: নাজমুল হোসেন শান্ত(বাংলাদেশ)।
সিরিজ : তিন ম্যাচের সিরিজ ৩-০ ব্যবধানে জিতলো বাংলাদেশ।