নিজস্ব প্রতিবেদক
ঢাকা ও এর আশপাশের জেলাগুলোয় গতকাল সকালে ভূমিকম্প অনুভূত হয়েছে। যার মাত্রা ছিল রিখটার স্কেলে ৪ দশমিক ৩। এর উৎপত্তিস্থল ছিল ঢাকার দোহারে। উৎপত্তিস্থল রাজধানীর এত কাছে হওয়ায় জনমনে দেখা দিয়েছে আতঙ্ক। অবশ্য এতে হতাহতের কোনো খবর পাওয়া যায়নি। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, রাজধানীর খুব কাছাকাছি হওয়ায় ঝুঁকি আছে। তবে আতঙ্কিত না হয়ে সচেতন থাকার পরামর্শ দিয়েছেন তারা। আবহাওয়া অধিদফতরের সহকারী আবহাওয়াবিদ ফারজানা সুলতানা জানান, গতকাল সকাল ৫টা ৫৭ মিনিটে ঢাকায় ৪.৩ মাত্রার ভূমিকম্প অনুভূত হয়েছে। এর উৎপত্তিস্থল ছিল রাজধানী থেকে ৩০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পূর্বে দোহারে। ইউরোপিয়ান মেডিটেরিয়ান সিসমোলজিক্যাল সেন্টার (ইএমএসসি) প্রাথমিকভাবে জানায়, রিখটার স্কেলে ভূমিকম্পের মাত্রা ছিল ৫.২। তবে পরে তা কমিয়ে ৪.৩ বলে জানানো হয়। ভূপৃষ্ঠ থেকে এর গভীরতা ছিল মাত্র ১০ কিলোমিটার। একই তথ্য জানিয়েছে মার্কিন ভূতাত্ত্বিক জরিপ সংস্থা (ইউএসজিএস)। মোবাইল ফোনের অ্যান্ড্রয়েড আর্থকোয়্যাক সিস্টেমের তথ্যমতে, ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল রাজধানী থেকে মাত্র ১৪ কিলোমিটার দূরে। কম্পন অনুভূত হওয়ার পর রাজধানীর বিভিন্ন এলাকার বাসিন্দাদের ভবন ছেড়ে সড়কে নেমে আসতে দেখা যায়। অনেকে আবার আতঙ্কিত হয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নিজের প্রতিক্রিয়া জানান। ভূমিকম্পের পরপরই নাদিয়া ইসলাম তার ফেসবুকে লেখেন, ভূমিকম্প হয়েছে। সময় ভোর ৫:৫৭। মোটামুটি ১০-১৫ সেকেন্ড ধরে ছিল। আস্তে শুরু হয়ে একটা জোরে ঝাঁকুনি দিল। আল্লাহ রক্ষা কর আমাদের। রুশা চৌধুরী স্ট্যাটাসে লেখেন, ‘হঠাৎ মনে হলো কে যেন আমাকে ধাক্কা দিচ্ছে। চমকে উঠতেই দেখি সবকিছু নড়ছে। মা-মেয়ে দৌড়ে নিচে নামলাম। আবহাওয়াবিদ মোস্তফা কামাল পলাশ ফেসবুকে একটি পোস্টে বলেন, রাজধানীর এত কাছে এত সক্রিয় ভূ-চ্যুতি রয়েছে সেটা খুবই চিন্তার বিষয়। রাজধানীতে বিল্ডিংয়ের ক্ষয়-ক্ষতির আশঙ্কা করা যাচ্ছে। রাজধানীর এত কাছে এ মাত্রার ভূমিকম্প হওয়ার ইতিহাস খুবই কম। বিষয়টিতে উদ্বেগ জানিয়েছেন ভূতত্ত্ববিদরা।
এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আর্থ অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্সেস অনুষদের ডিন ড. মো. জিল্লুর রহমান বলেন, এটি খুবই সাধারণ বিষয়। বাংলাদেশ ভূমিকম্পপ্রবণ এলাকার কাছে অবস্থিত। কিন্তু আমাদের এ এরিয়াটা একেবারে কাছে না, একটু দূরে আছে। এখানে ছোটখাটো ভূমিকম্প প্রায়ই হয়। ঢাকার আশপাশে এ রকম ৩-৪ বা ৫ মাত্রার অনেক ভূমিকম্প হয়েছে। এ রকম ছিল সকালের ভূমিকম্প। তিনি বলেন, এগুলো ছোটখাটো উৎস থেকে হয়। আমরা মনে করতে পারি পদ্মা নদীর আশপাশে যেহেতু একটি লিনিয়ার স্ট্রাকচার আছে, এখানে হয়তো কোনো ফল্ট আছে। এ ফল্টে বা সংযোগস্থলে হয়তো এ ভূমিকম্প হয়েছে। এতে আতঙ্কের কিছু নেই। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতত্ত্ব বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. সুব্রত কুমার সাহা বলেন, ‘আজকের (শুক্রবার) ভূমিকম্প নিয়ে আতঙ্কের কিছু নেই। এ রকম ভূমিকম্প প্রায়ই হয়। তবে রিখটার স্কেলে কম মাত্রার এসব ভূমিকম্পে সতর্ক থাকতে হবে।’ তিনি বলেন, রিখটার স্কেলে মাত্রা বেশি- এমন ভূমিকম্পে বড় ধরনের ঝুঁকি আছে ঢাকার। এ জন্য আমরা সবাইকে সতর্ক করছি। একই সঙ্গে ভবন তৈরির ক্ষেত্রে সব নিয়ম মেনে ভূমিকম্প সহনীয় করে নির্মাণ করলে ঝুঁঁকিমুক্ত থাকা যায়। আবহাওয়াবিদ ফারজানা সুলতানার মতে, বাংলাদেশ ভূমিকম্পপ্রবণ দেশ। এ ধরনের ছোট ছোট ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল সাধারণত কাছাকাছি জায়গায় হয়ে থাকে। এর আগে চলতি বছরের ২৫ এপ্রিল নারায়ণগঞ্জ জেলার আড়াই হাজার উপজেলায় ৩.৯ মাত্রার ভূমিকম্প হয়েছিল। এ ছাড়া গত ৩০ এপ্রিল দুপুরে চট্টগ্রামে ৪.৬ মাত্রার ভূকম্পন অনুভূত হয়। এর উৎপত্তিস্থল ছিল পূর্ব মিয়ানমারের মাউলাইকে।