1. admin@deshmediabd.info : admin :
  2. support@bdsoftinc.info : adminr :
  3. jeradmin@deshmediabd.com : :
শুক্রবার, ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৯:৪৬ পূর্বাহ্ন
সর্বশেষ সংবাদঃ
সচিবালয়ে আগুন: ৭ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন প্রযুক্তির নতুন দিগন্ত নতুন বছরে আলোচনায় থাকবে যেসব উদ্ভাবন উইকিপিডিয়া কীভাবে পরিচালিত হয়, কতটা নির্ভরযোগ্য এর তথ্য? এক্সক্লুসিভ কাটা-ছেঁড়া ছাড়ছে না ড্যাপকে সচিবালয়ে লাগা আগুন ১০ ঘণ্টা পর পুরোপুরি নিভল প্রাণঘাতী কমিয়ে শর্ট ব্যারেল অস্ত্র তিন বিভাগে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টির আভাস জাহাজে ৭ খুন: লাশ নিতে স্বজনদের ভিড়, শিল্প মন্ত্রণালয়ের তদন্ত কমিটি গঠন ৪৩ বিলিয়নের চাপে দেশ ♦ আওয়ামী লীগ সরকারের প্রকল্পে বিদেশি ঋণ কিস্তি পরিশোধের ঝুঁকি ♦ অন্তর্বর্তী সরকারকে পরিশোধ করতে হবে ২.৬ বিলিয়ন, বাকি দায় যাবে নির্বাচিত সরকারের ঘাড়ে Khulna-Dhaka train services via Padma Bridge begin officially

যার ভয়ে মুখ খোলার সাহস পেত না যাত্রাবাড়ীর কেউ

রিপোর্টার
  • আপডেট : মঙ্গলবার, ১৬ মে, ২০২৩
  • ৬০ বার দেখা হয়েছে

রাজধানীর উত্তর যাত্রাবাড়ী এলাকায় অবস্থিত শিশু কল্যাণ প্রাথমিক বিদ্যালয়-৩-এর ভেতরের নিরিবিলি পরিবেশ দেখলে মুগ্ধ হয়ে যাবেন যে কেউ। কিন্তু এই নিরিবিলি পরিবেশই স্কুলটির জন্য কাল হয়ে উঠেছে। নির্জনতার সুযোগ নিয়ে স্কুলটিকে মাদক সেবন ও বিক্রির আখড়া বানিয়ে ফেলেছে স্থানীয় বখাটেরা। দুপুর ১২টার দিকে স্কুল ছুটির পর ছাদ থেকে শুরু করে বারান্দা, টয়লেট সবখানেই বসে বখাটেদের মাদক ও জুয়ার আসর, চলে গভীর রাত পর্যন্ত। এই স্কুলের একপাশের সীমানাপ্রাচীর ঘেঁষে রয়েছে ওয়াসার পানির পাম্প। সেই পাম্পের ভেতরে ঢুকলেও চোখে পড়ে মাদকসেবী ও কারবারিদের আনাগোনা। যেখানে-সেখানে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে গাঁজা-ইয়াবা-হেরোইন সেবনের সারঞ্জাম। শিশু কল্যাণ প্রাথমিক বিদ্যালয়-৩-এর আরেক পাশে রয়েছে শহীদ জিয়া গার্লস স্কুল অ্যান্ড কলেজ। প্রাচীর টপকে সেখানেও ঢুকে পড়ে বখাটেরা। প্রকাশ্যেই তারা মাদক সেবন, বিক্রিসহ বিভিন্ন অপরাধ করলেও তাদের বাধা দেওয়ার সাহস পায় না কেউই।

শহীদ জিয়া গার্লস স্কুল অ্যান্ড কলেজের এক নিরাপত্তাকর্মী নাম না প্রকাশের শর্তে বলেন, এসব বখাটে সবাই শ্যুটার লিটনের অনুসারী। তাদের কাজে বাধা দিলে হামলাসহ বিভিন্ন সমস্যার শিকার হতে হয়। অবশেষে গতকাল সোমবার গভীর রাতে তাকে গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাব।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, পুলিশ ও র‌্যাবের খাতায় ‘শ‌্যুটার লিটন’ হিসেবে পরিচিত এই যুবকের নাম মো. ইয়াছিন উদ্দিন ওরফে লিটন আকন্দ। তিনি কুমিল্লার মেঘনা উপজেলার চন্দনপুর গ্রামের মো. বদরুজ্জামান বাদলের ছেলে। কিন্তু তিনি দীর্ঘদিন যাবৎ যাত্রাবাড়ী ও মুগদা এলাকায় ভাড়া বাসায় বসবাস করেন। লিটন ২০১২ সালের ডিসেম্বর মাসে প্রথম ধরা পড়েছিলেন ২০০ পিস ইয়াবাসহ। সেই ঘটনায় তার বিরুদ্ধে যাত্রাবাড়ী থানায় মাদক আইনে মামলা হয়। এরপর ২০১৪ সালের সেপ্টেম্বর মাসে প্যাথেডিন ইঞ্জেকশনসহ ধরা পড়ার পর লিটনের বিরুদ্ধে যাত্রাবাড়ী থানায় আরেকটি মামলা হয়। এরপর একই বছরের নভেম্বর মাসে লিটনের বিরুদ্ধে ফিরোজ খালাসী নামের এক যুবককে গলা কেটে হত্যার অভিযোগ ওঠে। এ ঘটনায় ১৩-১১-২০১৪ তারিখে নিহতের বড় ভাই শাহীন খালাসী যাত্রাবাড়ী থানায় লিটনকে আসামি করে হত্যা মামলা দায়ের করেন। পরে ২০১৬ সালের মার্চ মাসে লিটনের বিরুদ্ধে অপহরণ ও মুক্তিপণ দাবির অভিযোগে যাত্রাবাড়ী থানায় মামলা (নম্বর ২৫, ৯/০৩/২০১৬) করেন এক ব্যক্তি। এর পরের মাসেই (১৭-০৪-২০১৬) লিটনের বিরুদ্ধে হত্যাচেষ্টার মামলা করেন আরেক ব্যক্তি। এর চার দিন পরই তাকে অস্ত্রসহ আটক করে পুলিশ। এ সময় তার বিরুদ্ধে অস্ত্র মামলা দায়ের করা হয়। এরপর ২০১৭ সালের ৯ এপ্রিল আবারও অস্ত্রসহ গ্রেপ্তার হন লিটন। মুগদায় ভাড়া বাসার শয়নকক্ষ থেকে পিস্তল-গুলিসহ তাকে গ্রেপ্তার করে গোয়েন্দা পুলিশ। এ ঘটনায়ও তার বিরুদ্ধে মুগদা থানায় মামলা দায়ের করা হয়। এরপর ২০১৯ সালের ১২ মে ডাকাতির প্রস্তুতকালে দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র, তিন সহযোগীসহ পুলিশের হাতে আটক হন লিটন।

এ ঘটনায় দায়ের করা মামলার নম্বর ৬২। সর্বশেষ ওই বছরের ১৫ অক্টোবর রাতে এক সহযোগী, পিস্তলসহ লিটনকে গ্রেপ্তার করে র‌্যাব-১০। সে সময় র‌্যাব জানায়, অপরাধ জগতে তিনি ‘শ‌্যুটার লিটন’ হিসেবে পরিচিত।

র‌্যাব জানায়, শ‌্যুটার লিটন রাজধানীর যাত্রাবাড়ী, শ্যামপুর, মুগদা, পল্টন, মতিঝিল, কদমতলী, কেরানীগঞ্জসহ ঢাকা শহরের বিভিন্ন এলাকায় মাদক কারবার, চাঁদাবাজি, অবৈধ ভূমি দখল, ধর্ষণ, হত্যাসহ নানা প্রকার সন্ত্রাসী কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছিলেন। তার কাজে কেউ বাধা দিলে তাকে মারধর ও বিভিন্ন প্রকার ভয়-ভীতিসহ প্রাণনাশের হুমকি দিতেন। তিনি দেশের সীমান্তবর্তী এলাকা হতে ইয়াবাসহ বিভিন্ন প্রকার মাদকদ্রব্য সংগ্রহ করে রাজধানী ঢাকাসহ আশপাশের এলাকায় সরবরাহ করে আসছিলেন। লিটন অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে উক্ত এলাকায় মাদক কারবার পরিচালনা করতেন, যে কারণে কেউ ভয়ে তার বিরুদ্ধে মুখ খুলতে সাহস পেত না।

র‌্যাব আরো জানায়, লিটন উচ্চবিত্ত ও বড় ব্যবসায়ীদের টার্গেট করে অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে প্রাণে মেরে ফেলার হুমকিসহ বিভিন্ন প্রকার ভয়-ভীতি প্রদর্শন করে মোটা অঙ্কের চাঁদা দাবি করতেন। দাবীকৃত চাঁদা দিতে অস্বীকৃতি জানালে লিটন তাদের মারধরসহ বিভিন্ন শারীরিক নির্যাতন করতেন, প্রয়োজনে হত্যা করতেন। এ ছাড়া লিটন কন্ট্রাক্ট কিলিংসহ মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময় যে কাউকে হত্যা করতে দ্বিধা করতেন না। যার কারণে তিনি শ‌্যুটার লিটন নামে খ্যাত।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক উত্তর যাত্রাবাড়ী এলাকার এক বাসিন্দা বলেন, ‘উত্তর যাত্রাবাড়ীর বিবিরবাগিচা, কাজলা সুতির খালপাড় ও সায়েদাবাদের কিছু অংশে শ‌্যুটার লিটন ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছিল। তাদের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে মুখ খোলার সাহস কারো নেই। এই এলাকায় তাদের চাঁদা না দিয়ে কেউ নতুন বাড়ি করতে পারে না। তাদের টাকা না দিলে বাড়িতে বিদ্যুৎ-পানির লাইনও পাওয়া যায় না। এ ছাড়াও সামাজিক সংগঠনের নামে উত্তর যাত্রাবাড়ী এলাকার অলিগলিতে টর্চার সেল চালু করেছে লিটনের সাঙ্গোপাঙ্গরা। তাদের মধ্যে অন্যতম ফরিদ, বক্সার হাবু ও রোমান। তারা প্রতিপক্ষের লোকজনকে টর্চার সেলে ধরে এনে বিচার-সালিসের নামে নির্যাতন চালায়। এ ছাড়াও মাঝেমধ্যেই অস্ত্রশস্ত্র হাতে শোডাউন দিয়ে এলাকায় আতঙ্ক ছড়ায়। তাদের চাঁদা না দিয়ে যাত্রবাড়ীর আড়তগুলোতে কোনো ট্রাক-ভ্যান ঢুকতে বা বের হতে পারে না। প্রতিদিন সন্ধ্যা থেকে ভোর পর্যন্ত প্রতিটি গাড়ি থেকেই চাঁদা আদায় করে লিটনের লোকজন।’

শ‌্যুটার লিটনের নির্যাতনের শিকারদের একজন যাত্রবাড়ী এলাকার ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী মো. শাহ আলম। কিশোর বয়সে ভয় দেখিয়ে শাহ আলমকে মাদক কারবারে জড়িয়েছিলেন লিটন। এর কিছুদিনের মধ্যে কয়েকটি মামলার আসামি হলে মাদক কারবার ছেড়ে দিতে চাইলে লিটনের রোষানলে পড়েন শাহ আলম। ২০১২ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি ভালোবাসা দিবসের দিনে উত্তর যাত্রাবাড়ী এলাকার মাঠের পাশে লিটনসহ কয়েকজন মিলে শাহ আলমের ওপর হামলা চালিয়ে এলোপাতাড়ি কোপানোর পাশাপাশি তার পায়ের রগ কেটে দেয়। দীর্ঘদিন চিকিৎসা নিয়ে কিছুটা সুস্থ হয়েছেন শাহ আলম। তবে এখনো জোড়ে হাঁটতে কিংবা ভারী কোনো কাজ করতে পারেন না। এ বিষয়ে তার সঙ্গে কথা বলতে চাইলে ভয়ে শিউরে ওঠেন তিনি। বলেন, ‘ভাই একবার পায়ের রগ হারিয়েছি, এখন আবার কিছু বলে নিজের মাথা হারাতে চাই না।’

র‌্যাপিড অ‌্যাকশন ব্যাটালিয়ন-১০-এর অধিনায়ক অ‌্যাডিশনাল ডিআইজি মোহাম্মদ ফরিদ উদ্দিন বলেন, ‘সোমবার রাতে র‌্যাব-১০-এর একটি আভিযানিক দল গোপন সংবাদের ভিত্তিতে রাজধানী ঢাকার যাত্রাবাড়ী থানাধীন দক্ষিণ যাত্রাবাড়ীর বিজিবি মার্কেট এলাকায় অভিযান চালিয়ে শীর্ষ সন্ত্রাসী ও মাদকসম্রাট মো. ইয়াছিন উদ্দিন লিটন ওরফে ইয়াসিন ওরফে লিটন আখন্দ ওরফে শ‌্যুটার লিটনকে গ্রেপ্তার করেছে। এ সময় তার কাছ থেকে একটি বিদেশি পিস্তল, একটি ম্যাগাজিন, তিন রাউন্ড গুলি, ৩৪৮ পিস ইয়াবা ট্যাবলেট, একটি মোবাইল ফোনসেট ও মাদক বিক্রয়ের নগদ ৫১ হাজার ৫০ টাকা উদ্ধার করা হয়। তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন।’

s
এই বিভাগের আরো সংবাদ
© All rights reserved © 2021 deshmediabd.com