আজ মনোনয়ন প্রত্যাহারের শেষ দিনের কয়েক ঘন্টা আগে শনিবার রাতে জাতীয় ঐক্যফন্ট ও ২০ দলের শরিকদের প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করা হয়।এর আগে বিএনপির আংশিক প্রার্থী তালিকা করা হয় শুক্রবার রাতে।
এতে দেখা গেছে, ৩০০ আসনের মধ্যে ৫৭ আসনে জোটের শরিকদের ছাড় দিয়েছে বিএনপি। এর মধ্যে ২০-দলীয় জোটের শরিকদের ৩৮ আর ঐক্যফ্রন্টের শরিদের জন্য ছেড়ে দেয়া হয়েছে ১৯টি আসন। বাকী ২৪৩ টি আসন নিজেদের হাতে রেখেছে বিএনপি। শনিবার রাতে এ সংক্রান্ত চিঠি শরিক ও ঐক্যফ্রন্ট নেতাদের হাতে তুলে দেয়া হয়।
জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট ও ২০-দলীয় জোটের প্রার্থীরা ‘ধানের শীষ’ প্রতীকে নির্বাচনে লড়বেন। শুধু ২০ দলের শরিক এলডিপির চেয়ারম্যান অলি আহমদ নিজ দলের ‘ছাতা’ প্রতীকে ভোট করবেন।
জানা গেছে, বিএনপির দুই জোটে দল রয়েছে ২৭টি। এর মধ্যে ২০ দলীয় জোটে রয়েছে ২৩ দল। আর জাতীয় ঐক্যফ্রন্টে দল আছে চারটি।
শরিকদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি আসনে জামায়াতকে ছাড় দিয়েছে বিএনপি। ২০-দলীয় শরিকদের মধ্যে জামায়াতে ইসলামীকে ২২টি আসন দেয়া হয়েছে। যদিও জামায়াতকে আসন বণ্টনের শুরুতে ২৫টি আসনে ছাড় দেয়ার কথা ছিল। এ নিয়ে জামায়াতে চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে।
জানা গেছে, শেষ মুহূর্তে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থী তালিকা বড় হওয়ায় ২০ দলকে কিছু আসন কম দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয় বিএনপি। স্বভাবতই জামায়াতের আসন বেশি হওয়ায় তাদের থেকে তিনটি আসন ছেঁটে ফেলা হয়েছে।
বিএনপির মহাসচিবসহ শীর্ষ নেতারা আগেই বলে রেখেছিলেন-দুই জোটের শরিকদের সর্বোচ্চ ৬০টি আসন দেয়া হবে। এর মধ্যে জামায়াত-ই সর্বাধিক আসন পাবে সেটিও মোটামুটি নিশ্চিত ছিল।
বিএনপি নেতারা শুরুতে চেয়েছিলেন ৪০-৪২ আসন দেয়া হবে ২০ দলকে। আর ১৫-১৮টি আসনে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টকে দেয়া হবে। ২০ দলের সঙ্গে এটি নিয়ে বিএনপির এক ধরনের সমঝোতাও হয়ে গিয়েছিল।
২০ দলে জামায়াতের পরে সর্বাধিক আসন পেয়েছে কর্নেল (অব.) অলি আহমেদের নেতৃত্বাধীন এলডিপি।
২০ দলীয় জোট
বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের শরিকরা যেসব আসন পেয়েছে সেগুলো হল- এলডিপির সভাপতি কর্নেল (অব.) অলি আহমদ (চট্টগ্রাম-১৪), দলের মহাসচিব ড. রেদোয়ান আহমেদ (কুমিল্লা-৭), সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব শাহাদাত হোসেন সেলিম (লক্ষ্মীপুর-১), চট্টগ্রাম-৭ নুরুল আলম, ময়মনসিংহ-১০ আসনে সৈয়দ মাহবুব মোর্শেদ। বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি বিজেপির চেয়ারম্যান আন্দালিব রহমান পার্থ (ঢাকা-১৭), কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মোহাম্মদ ইবরাহিমের (চট্টগ্রাম-৫), মশিউর রহমান যাদু মিয়ার মেয়ে পিপলস পার্টি অব বাংলাদেশের রিটা রহমান (রংপুর-৩), জমিয়তে ওলামায়ের মুফতি মোহাম্মদ ওয়াক্কাস (যশোর-৫), এনপিপির সভাপতি ড. ফরিদুজ্জামান ফরহাদ (নড়াইল-২)।
জাপা (জাফর) ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ড. টিআই ফজলে রাব্বী (গাইবান্ধা-৩), সদস্য আহসান হাবীব লিঙ্কন (কুষ্টিয়া-২)। খেলাফত মজলিশ : হবিগঞ্জ-৪ আসনে আহমেদ আবদুল কাদের ও নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনে মুফতি মুনির হোসেন।
জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম
সুনামগঞ্জ-৩ আসনে জমিয়তে উলামায়ে ইসলামীর শাহিনুর পাশা, হবিগঞ্জ-২ আসনে আবদুল বাসিদ আজাদ, যশোর-৫ আসনে মুফতি মোহাম্মদ ওয়াক্কাস।
জামায়াত
নিবন্ধন হারানো এ দলটিকে ২৫টি আসন ছেড়েছিল বিএনপি। কিন্তু শনিবার রাতে ২২ আসনে প্রতীক বরাদ্দের চিঠি দেয়। এতে ক্ষুব্ধ জামায়াত নেতারা হুমকি দেন, প্রতিশ্রুত আসন না দিলে তারা ‘ভিন্ন চিন্তা’ করতে বাধ্য হবেন। চিঠি পেয়েছেন দিনাজপুর-১ মোহাম্মদ হানিফ, দিনাজপুর-৬ মোহাম্মদ আনোয়ারুল ইসলাম, নীলফামারী-২ মনিরুজ্জামান মন্টু, নীলফামারী-৩ মোহাম্মদ আজিজুল ইসলাম, গাইবান্ধা-১ মাজেদুর রহমান সরকার, সিরাজগঞ্জ-৪ মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান, পাবনা-৫ মাওলানা ইকবাল হুসাইন, ঝিনাইদহ-৩ অধ্যাপক মতিয়ার রহমান, যশোর-২ আবু সাঈদ মুহাম্মদ শাহাদাত হোসাইন, বাগেরহাট-৩ অ্যাডভোকেট আবদুল ওয়াদুদ, বাগেরহাট-৪ অধ্যাপক আবদুল আলীম, খুলনা-৫ অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার, খুলনা-৬ মাওলানা আবুল কালাম আযাদ, সাতক্ষীরা-২ মুহাদ্দিস আবদুল খালেক, সাতক্ষীরা-৩ মুফতি রবিউল বাশার, সাতক্ষীরা-৪ গাজী নজরুল ইসলাম, পিরোজপুর-১ শামীম সাঈদী, ঢাকা-১৫ ডা. শফিকুর রহমান, সিলেট-৬ মাওলানা হাবিবুর রহমান, কুমিল্লা-১১ ডা. আবদুল্লাহ মো. তাহের, চট্টগ্রাম ১৫ আ ন ম শামসুল ইসলাম ও কক্সবাজার-২ হামিদুর রহমান আযাদ।
জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট ১৯ আসন
গণফোরাম
জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের শরিকদের ১৯ আসনে ছাড় দেয়া হয়েছে। এর মধ্যে গণফোরামকে ৬টি আসন দেয়া হয়েছে। এগুলো হচ্ছে- ঢাকা-৭ আসনে মোস্তফা মহসিন মন্টু, ময়মনসিংহ-৮ আসনে এএইচএম খালিকুজ্জামান, হবিগঞ্জ-২ আসনে রেজা কিবরিয়া, পাবনা-১ আসনে অধ্যাপক আবু সাইদ, কুড়িগ্রাম-৫ আসনে আমছা আমিন, মৌলভীবাজার-২ সুলতান মোহাম্মদ মনসুর।
জেএসডি
দলটির সভাপতি আ স ম আবদুর রব (লক্ষ্মীপুর-৪), শরিফউদ্দিন মাহমুদ স্বপন (ঢাকা-১৮), আবদুল মালেক রতন (কুমিল্লা-৪)। সাইফুল ইসলাম (কিশোরগঞ্জ-৩), নুরুল ইসলাম মাল (শরীয়তপুর-১)।
নাগরিক ঐক্য
৪টি আসন দেয়া হয়েছে, এগুলো হলো মাহমুদুর রহমান মান্না (বগুড়া-২), এসএম আকরাম (নারায়ণগঞ্জ-৫), মোফাখরুল ইসলাম (রংপুর-৫), শাহ রহমতউল্লাহ (রংপুর-১), নুরুর রহমান জাহাঙ্গীর (বরিশাল-৪)।
কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ
কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের প্রেসিডেন্ট বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকীর মেয়ে কুঁড়ি সিদ্দিকী (টাঙ্গাইল-৮), টাঙ্গাইল-৪ আসনে রফিকুল ইসলাম ও গাজীপুর-৩ আসনে ইকবাল সিদ্দিকী।