পঞ্চম ও অষ্টম শ্রেণিতে বৃত্তি পেয়েছিল। এসএসসিতে জিপিএ–৫ পেয়ে ভর্তি হয় রাজধানীর একটি নামকরা কলেজে। সেই ছেলে নেশায় আসক্ত হয়ে এখন ছিনতাইকারী।
গত শুক্রবার রাতে মিরপুরের পল্লবী এলাকায় তিন বন্ধুকে নিয়ে দুটি মোটরসাইকেলে করে ছিনতাইয়ে বের হয় ওই শিক্ষার্থী। রিকশা আরোহী এক নারীর ব্যাগ ছিনতাই করতে গিয়ে হাতেনাতে ধরা পড়ে সে। পালিয়ে যায় তাঁর বন্ধুরা। পুলিশ বলছে, রাত হলেই এই চক্রের সদস্যরা মিরপুর এলাকায় ছিনতাই করে।
তদন্তসংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, গত শুক্রবার ওই ছেলে ও তাঁর বন্ধুরা যে নারীর ব্যাগ ছিনতাই করে, সেই নারীর নাম সাবিনা ইয়াসমিন। ওই ঘটনায় তিনি মিরপুর থানায় একটি মামলা করেন। সেই মামলায় ছেলেটিকে আইনের সংস্পর্শে আনে পুলিশ। তাঁর তিন বন্ধু এখনো পলাতক।
সাবিনা ইয়াসমিন বলেন, ‘বাসা থেকে রিকশায় করে মিরপুর কমার্স কলেজের পাশের একটি খাবার হোটেলে যাচ্ছিলাম। এ সময় দুটি মোটরসাইকেলে করে কয়েকজন এসে চলন্ত রিকশা থেকে আমার ব্যাগ ছিনিয়ে নেয়। পালিয়ে যাওয়ার সময় মোটরসাইকেল থেকে পড়ে যায় এক ছিনতাইকারী। স্থানীয় লোকজন ধরে তাঁকে পুলিশে দেন।’
পুলিশের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, মেধাবী ওই শিক্ষার্থীর বাবা বিদেশে থাকেন। মিরপুরে তাঁদের একটি বাড়ি রয়েছে। পড়ালেখায় মেধাবী ছিল সে। এক সময় ধূমপায়ী বন্ধুদের সঙ্গে মিশত না। পরে বন্ধুদের পাল্লায় পড়ে নেশায় আসক্ত হয়। কলেজে ভর্তি হওয়ার পর বাবা তাঁকে একটি মোটরসাইকেল কিনে দেন। সেই মোটরসাইকেল দিয়েই বন্ধুদের সঙ্গে ছিনতাই করে সে।
মিরপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ মহসীন বলেন, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে ছেলেটি পুলিশকে জানিয়েছে, তার ও তার এক বন্ধুর বাসা পাশাপাশি। সেই বন্ধুর মাধ্যমে অন্যদের সঙ্গে তার পরিচয় হয়। ওই বন্ধু অষ্টম শ্রেণি পাশ করার পর আর পড়াশোনা করেনি। সে–ই তাকে অপরাধ জগতে নিয়ে এসেছে।
পুলিশের তথ্যমতে, রাজধানীতে ছিনতাই ও ডাকাতির মতো অপরাধের সঙ্গে যুক্ত ৬ হাজারের বেশি ব্যক্তি। তাঁদের মধ্যে ১ হাজার ৭৩৭ জন ছিনতাই এবং ৪ হাজার ৪৬১ জন ডাকাতিতে জড়িত। ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) কেন্দ্রীয় তথ্যভান্ডারে এসব অপরাধে জড়িত ব্যক্তিদের পূর্ণাঙ্গ বৃত্তান্ত রয়েছে। এতে রাজধানীর ৫০টি থানা এলাকায় ছিনতাই ও ডাকাতিতে জড়িত ব্যক্তিদের তথ্য রয়েছে।
পুলিশের দেওয়া তথ্য বিশ্লেষণে দেখা গেছে, পুলিশের বিভাগ হিসেবে সবচেয়ে বেশি তালিকাভুক্ত ছিনতাইকারী ও ডাকাত রয়েছে তেজগাঁও বিভাগে। সবচেয়ে কম মিরপুর বিভাগে। থানা হিসেবে ছিনতাইকারী ও ডাকাতের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি ভাটারা, শাহবাগ ও শেরেবাংলা নগর থানা এলাকায় (প্রতিটি থানায় ৩৪ জন করে)। এরপর রয়েছে হাজারীবাগ, মোহাম্মদপুর, বিমানবন্দর, খিলক্ষেত, তেজগাঁও, রমনা, হাতিরঝিল ও উত্তরা পশ্চিম থানা। সবচেয়ে কম ছিনতাইকারী ও ডাকাতের নাম তালিকাভুক্ত হয়েছে উত্তরখান, দক্ষিণখান ও উত্তরা পূর্ব থানায়। এই তিন থানা এলাকার ৬ জন করে মোট ১৮ জন তালিকাভুক্ত হয়েছে