রাজধানীর রামপুরায় সাবেক এক যুগ্ম সচিবের বাসার গৃহকর্মী ইতি আক্তার (১২) মৃত্যুর আগে ধর্ষণের শিকার হয়েছিল। গৃহকর্তা সাবেক ওই যুগ্ম সচিব কামাল উদ্দিন আহম্মেদ (৭২) নিজেই ইতিকে ধর্ষণ করেন। এ ঘটনায় আত্মহত্যা করে ওই গৃহকর্মী।
দীর্ঘ তদন্ত শেষে আদালতে গত ১১ ডিসেম্বর পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) দেওয়া অভিযোগপত্রে (চার্জশিট) এসব তথ্য উল্লেখ করা হয় বলে আদালত সূত্রে জানা যায়।
ঘটনার একমাত্র আসামি কামাল উদ্দিন এখন অস্ট্রেলিয়ায় আছেন।
পিবিআই ঢাকা মেট্রো দক্ষিণের (এসআই অ্যান্ড ও) উপপরিদর্শক (এসআই) ও মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মো. আলাউদ্দিন ঢাকার চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেন। অবসরে যাওয়ার আগে কামাল উদ্দিন সর্বশেষ স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পালন করেন।
এ ঘটনায় রামপুরা থানায় করা মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, ২০২২ সালের ২৯ জানুয়ারি কামাল উদ্দিনের বাসা থেকে ইতির ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করা হয়।
এ ঘটনায় রামপুরা থানায় একটি অপমৃত্যুর মামলা করে ইতির পরিবার। মৃত্যুর প্রায় ১০ মাস পর দেওয়া ময়নাতদন্তের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, মৃত্যুর আগে ইতিকে ধর্ষণ করা হয়।
পিবিআই জানায়, গত বছরের ২২ নভেম্বর ইতির মা মেয়ের মৃত্যুর ঘটনায় রামপুরা থানায় অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে আরেকটি মামলা করেন। তদন্তের দায়িত্ব পায় পিবিআই।
দীর্ঘ তদন্ত ও প্রত্যক্ষদর্শীর সাক্ষীসহ তথ্য-প্রমাণ বিশ্লেষণ করে পিবিআই কামাল উদ্দিনকে ধর্ষক বলে শনাক্ত করে।
ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) প্রসিকিউশন বিভাগের একাধিক কর্মকর্তা নিশ্চিত করেন, গত ১১ ডিসেম্বর ঢাকা মহানগর আদালতে কামালের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেওয়া হয়। কামাল উদ্দিন ঘটনায় জড়িত একমাত্র আসামি বলে শনাক্ত হন।
মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, কিশোরগঞ্জের ইটনা উপজেলার বাসিন্দা আলমগীর মিয়া ও ছারকিস আক্তার তাঁদের মেয়ে ইতিকে রামপুরার পূর্ব হাজীপাড়ার রাজিন আহমেদের বাসায় কাজের জন্য দেন। ওই বাসায় রাজিন (৩৫) ছাড়াও তাঁর স্ত্রী রিফাত জাহান চৌধুরী (৩০), বাবা কামাল উদ্দিন আহমেদ ও মা কহিনুর কামাল (৬৩) এবং গৃহকর্মী রোকেয়া (৪০) থাকতেন।
তাঁদের গাড়িচালক মঞ্জুর আলম নিয়মিত ওই বাড়িতে যাতায়াত করতেন।
লাশ উদ্ধারের আগের দিন ২০২২ সালের ২৮ জানুয়ারি মায়ের কাছে ফোন করে ইতি জানায়, সে আর এই বাড়িতে কাজ করবে না। তার ওপর নির্যাতন চালানো হচ্ছে। পরদিন বিকেলে ছারকিসকে ফোন করে কহিনুর জানান, ইতি জানালার পর্দা টানানোর গ্রিলের সঙ্গে ঝুলে আত্মহত্যা করেছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, তদন্তকালে পিবিআই সন্দেহ করে অন্য গৃহকর্মী রোকেয়া বিষয়টি সম্পর্কে কিছু জেনে থাকতে পারে। সেই সূত্র ধরে রোকেয়াকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। তাঁর দেওয়া তথ্যের উদ্ধৃতি দিয়ে পিবিআই জানায়, গত বছরের ২৮ জানুয়ারি রাত ১০টার দিকে রোকেয়া রান্নাঘরে থালাবাসন ধোয়ার সময় কামাল উদ্দিনকে ইতির থাকার ঘরে প্রবেশ করতে দেখেন। পরে তিনি ঘরের দরজা লাগিয়ে দেন। রোকেয়া টোকা দিলেও তিনি দরজা খোলেননি। আধাঘণ্টা পর ইতির ঘর থেকে বের হন কামাল উদ্দিন। রোকেয়া ঘরে ঢুকে দেখেন ইতি কাঁদছে। ইতি তখন বলে যে কামাল উদ্দিন তাকে ধর্ষণ করেছেন এবং সে আত্মহত্যা করবে। রোকেয়া ওই রাতেই তাকে তাঁর ঘরে নিয়ে যান। পরদিন জানালার সঙ্গে ফাঁস লাগানো অবস্থায় ইতিকে পাওয়া যায়। ইতিকে উদ্ধার করে স্থানীয় বেটার লাইফ হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।