একদিকে টাকার অবমূল্যায়ন, অন্যদিকে ডলার সংকট। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) শর্ত মেনে বিপিএম৬ পদ্ধতিতে করা হিসাব অনুযায়ী, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হাতে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ আছে ২০ দশমিক ৬৮ বিলিয়ন ডলার। নিয়ন্ত্রিত আমদানির পাশাপাশি ব্যাংকগুলোও এলসি খুলছে না প্রয়োজনমতো। ফলে কাঁচামাল সংগ্রহ করতে গিয়ে নানা বিপত্তিতে পড়তে হচ্ছে শিল্পোদ্যোক্তাদের। শ্লথ হয়ে পড়েছে উৎপাদন। রেমিট্যান্সে প্রবৃদ্ধি প্রত্যাশার তুলনায় কম। ঋণ পরিশোধসহ নানা খাতে ব্যয় বাড়ছে সরকারের। যদিও এর সঙ্গে সংগতি রেখে বাড়ছে না রাজস্ব আহরণ। নগদ অর্থের সংকটে ভুগছে ব্যাংক খাত। চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রায় পুরোটা সময় মূল্যস্ফীতির হার রয়েছে ৯ শতাংশের ওপরে। সব মিলিয়ে আশঙ্কা তৈরি হয়েছে সামষ্টিক অর্থনীতির ভারসাম্য নিয়ে। এমন কঠিন সময়েও ঋণ প্রতিশ্রুতি বা আর্থিক সহায়তা নিয়ে এগিয়ে আসছে না বাংলাদেশের ঘনিষ্ঠতম মিত্র হিসেবে পরিচিত দেশগুলো।
আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে বাংলাদেশের ঘনিষ্ঠতম মিত্র হিসেবে পরিচিত তিন দেশ ভারত, চীন ও রাশিয়া। অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) তথ্য অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের প্রথম চার মাসে (জুলাই-অক্টোবর) এ তিন দেশের কাছ থেকে কোনো ঋণ সহায়তার প্রতিশ্রুতি মেলেনি। এ সময় দেশগুলোর পক্ষ থেকে বাংলাদেশের অনুকূলে কিছু অর্থ ছাড় হলেও তা মূলত আগে প্রতিশ্রুত ঋণের অর্থ। এ চার মাসে বিভিন্ন চলমান প্রকল্পের জন্য আগেকার ঋণ চুক্তির বিপরীতে ভারতের কাছ থেকে অর্থছাড় হয়েছে ৯ কোটি ২৪ লাখ ডলার। চীন ছাড় করেছে ৩ কোটি ৬৯ লাখ ডলার। রাশিয়া ছাড় করেছে ২৬ কোটি ডলার। এশিয়া-প্যাসিফিকে অবকাঠামো উন্নয়নে গড়ে তোলা এশিয়ান ইনফ্রাস্ট্রাকচার ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংকের (এআইআইবি) অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা সদস্য বাংলাদেশ। সংস্থাটির কাছ থেকেও অর্থবছরের প্রথম চার মাসে নতুন কোনো ঋণের প্রতিশ্রুতি পায়নি বাংলাদেশ। এ সময় আগের ঋণ চুক্তির বিপরীতে ৫৫ লাখ ৭০ হাজার ডলার ছাড় করেছে সংস্থাটি।
আন্তর্জাতিক ভূ-অর্থনীতির পর্যবেক্ষক ও অর্থনীতিবিদরা বলছেন, দেশের বর্তমান অর্থনৈতিক পরিস্থিতি বাংলাদেশের ঋণ পরিশোধ সক্ষমতা নিয়ে উন্নয়ন সহযোগীদের মধ্যে এক ধরনের আশঙ্কা তৈরি করেছে। এ অবস্থায় নব্যদাতা হিসেবে পরিচিত বাংলাদেশের ঘনিষ্ঠতম মিত্ররাও এখন নতুন ঋণসহায়তা নিয়ে এগিয়ে আসার ক্ষেত্রে কিছুটা রক্ষণশীল অবস্থান বজায় রেখেছে।বিস্তারিত