1. admin@deshmediabd.info : admin :
  2. support@bdsoftinc.info : adminr :
  3. jeradmin@deshmediabd.com : :
সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৩:৩৪ অপরাহ্ন
সর্বশেষ সংবাদঃ
ব্রাজিলে বাস দুর্ঘটনায় ৩৮ জন নিহত ডলারের বাজার আবার অস্থির Govt grants 10-year tax holiday for renewable energy firms Mobile surveillance used in pinpointing victims’ location: Commission গ্যাস সংকটে উৎপাদন নেমে অর্ধেকে, কয়েক শ কারখানা বন্ধ ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ইসির পরিকল্পনায় ডিসেম্বর ২০২৫ ভোটার তালিকায় ত্রুটি নেই দাবি ইসির সরকারের এক পক্ষ ২০২৬-এর এপ্রিলে, বিএনপিসহ সমমনারা চায় ২০২৫-এর জুনের মধ্যে ভোট জুলাই গণ-অভ্যুত্থান ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শহীদ ও আহত ব্যক্তিদের প্রথম ধাপের খসড়া তালিকা প্রকাশ ২০২৫-এর মধ্যেই নির্বাচন চায় বিএনপি ও বিভিন্ন দল লাইসেন্স ও ট্যাক্সের আওতায় আসছে ব্যাটারিচালিত রিকশা ফের আন্দোলনে নামছে বিএনপি দ্রুত সুস্পষ্ট রোডম্যাপ দাবি, চলছে নির্বাচনি প্রস্তুতি

কমছে আয়ু, মাত্রাতিরিক্ত বায়ুদূষণের মাশুল দিচ্ছে ঢাকাবাসী

রিপোর্টার
  • আপডেট : বুধবার, ৭ ফেব্রুয়ারী, ২০২৪
  • ৭৩ বার দেখা হয়েছে

শীত মৌসুম এলেই রাজধানীর বায়ু থাকে খুবই অস্বাস্থ্যকর। ঢাকায় বায়ুমানের অবনতির মাশুল দিতে হচ্ছে এই শহরে বসবাসকারীদের। অস্বাস্থ্যকর বায়ু নিশ্বাসের সঙ্গে যাওয়ায় রোগাক্রান্ত হচ্ছে শহরবাসী। বাড়ছে শ্বাসতন্ত্রের রোগে আক্রান্তের সংখ্যা। বিশেষ করে শিশু ও প্রবীণরা ভুগছেন বেশি।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অস্বাস্থ্যকর বায়ুর কারণে সর্দি-কাশি থেকে শুরু করে হাঁপানি, শ্বাসকষ্ট ও ফুসফুসের ক্যানসারের মতো জটিল রোগে আক্রান্ত হচ্ছে মানুষ। শীত মৌসুমে বায়ুদূষণ বেশি থাকায় হাসপাতালে বাড়ছে এসব রোগী।

 

স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বায়ুদূষণের মাত্রা বেশি হলে বায়ু চলাচলের ফ্লো ঠিক থাকে না, তখন বাতাসে দূষিত পদার্থের ঘনত্ব বাড়ে। মানুষ যখন শ্বাসের মাধ্যমে দূষিত পদার্থ নিচ্ছে তখন তাদের ফুসফুস বেশি আক্রান্ত হচ্ছে। শীতকালে বাতাসে দূষিত পদার্থ বেশি থাকায় দূষণজনিত নানান সমস্যায় পড়তে হচ্ছে নগরবাসীকে।

 

বিশেষজ্ঞদের মতে, দূষণের ফলে দীর্ঘমেয়াদি রোগের সম্ভাবনা থাকে। প্রথম দিকে সর্দি-কাশি, নিউমোনিয়া হলেও একটা সময় রোগীদের ফুসফুস আক্রান্ত হয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয় লিভার ও কিডনি।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) তথ্য অনুসারে, বায়ুদূষণের ফলে স্ট্রোক, হৃদরোগ, ক্রনিক অবস্ট্রাক্টিভ পালমোনারি ডিজিজ, ফুসফুসের ক্যানসার এবং তীব্র শ্বাসযন্ত্রের সংক্রমণের কারণে মৃত্যুহার বেড়েছে। ফলে বিশ্বব্যাপী প্রতিবছর আনুমানিক ৭০ লাখ মানুষ মারা যায়।

দূষণের ফলে দীর্ঘমেয়াদি রোগের সম্ভাবনা থাকে। প্রথম দিকে সর্দি-কাশি, নিউমোনিয়া হলেও একটা সময় রোগীদের ফুসফুস আক্রান্ত হয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয় লিভার ও কিডনি।

সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অব শিকাগোর এনার্জি পলিসি ইনস্টিটিউটের করা গবেষণায় বলা হয়, বায়ুদূষণে বাংলাদেশিদের গড় আয়ু কমেছে ৭ বছর। আর রাজধানীবাসীর (ঢাকাবাসীর) গড় আয়ু কমছে ৮ বছর করে। বায়ুদূষণের কারণে বিশ্বের কোনো দেশের অধিবাসীদের গড় আয়ু কী পরিমাণে কমছে, সেই হিসাব ধরে প্রতিবেদনটি তৈরি করা হয়েছিল।

 

বায়ুর মান পর্যবেক্ষণকারী সংস্থা এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্সের (আইকিউ-এয়ার) সূচক অনুযায়ী, বছরের অধিকাংশ সময় অস্বাস্থ্যকর থাকে ঢাকার বাতাস। তবে ২০২৩ সাল ছিল আট বছরের মধ্যে সবচেয়ে দূষিত বায়ুর বছর। বায়ুমণ্ডলীয় দূষণ অধ্যয়ন কেন্দ্রের (ক্যাপস) বিশ্লেষণ অনুযায়ী, ২০২৩ সালে বায়ুমান সূচকে ঢাকার গড় স্কোর ছিল ১৭১, যা আগের বছর ছিল ১৬৩। নতুন বছর ২০২৪ এর জানুয়ারির ১০ দিন বায়ুদূষণের শীর্ষে ছিল রাজধানী ঢাকা।

সরেজমিনে রাজধানীর শ্যামলীর ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট টিবি হাসপাতালে দেখা যায়, হাসপাতালের আউটডোরে রোগীদের ভিড়। কেউ হাঁপানি, কেউ শ্বাসকষ্ট কেউবা ফুসফুস সংক্রান্ত জটিলতায় আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে আসছেন। হাসপাতালের অ্যাজমা ও সিওপিডি সেন্টারের সামনে দেখা যায় রোগীদের ভিড়। সবাই ইনহেলার দেওয়ার জন্য অপেক্ষা করছেন। অ্যাজমা সেন্টারের চিকিৎসকের সহকারীরা জানান, অধিকাংশ রোগীই আসছেন শ্বাসতন্ত্রের সমস্যা নিয়ে।

 

বায়ুদূষণে বাংলাদেশিদের গড় আয়ু কমেছে ৭ বছর। আর রাজধানীবাসীর গড় আয়ু কমছে ৮ বছর করে। বছরের অধিকাংশ সময় অস্বাস্থ্যকর থাকে ঢাকার বাতাস। তবে ২০২৩ সাল ছিল আট বছরের মধ্যে সবচেয়ে দূষিত বায়ুর বছর।

দুই বছর বয়সী বাচ্চাকে কোলে নিয়ে দাঁড়িয়ে ছিলেন প্রীতি আক্তার।  প্রীতি বলেন, ‘এক মাস ধরে মেয়েটার সর্দি-কাশি। পাশাপাশি শ্বাস নিতেও কষ্ট হচ্ছে। ডাক্তার বুকের এক্স-রে দিয়েছেন। এছাড়া বাসার বাইরে বের হওয়া থেকে বিরত রাখতে বলেছেন।’

 

একই হাসপাতালে কথা হয় রাজধানীর শান্তিনগরের বাসিন্দা আবদুল্লাহ মামুনের সঙ্গে৷ দুই মাস ধরে ভুগছেন হাঁপানি আর কাশির সমস্যায়। জাগো নিউজকে আবদুল্লাহ মামুন বলেন, ‘গত ডিসেম্বরে ইবনে সিনায় বক্ষব্যাধি ডাক্তার দেখিয়েছিলাম। কিন্ত সুস্থ হতে পারিনি। আজ এখানে আসছি আউটডোরে দেখানোর জন্য। ডাক্তার কিছু টেস্ট দিয়েছেন। এছাড়া রক্তে অ্যালার্জি হতে পারে বলে বললেন।’

 

শ্বাসকষ্ট নিয়ে টিবি হাসপাতালে এসেছেন ৮০ বছর বয়সী আমিনুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘কয়েক বছর ধরে আমার শ্বাসটান। একবার নিউমোনিয়া হয়েছিল। গরমকালে কিছুটা ভালো থাকলেও শীত এলে বেশি কষ্ট হয়। ইনহেলার নেওয়া লাগে।’

শীতের ঠান্ডার সঙ্গে বায়ুদূষণের কারণে অসুস্থতার মাত্রা বেড়ে যাওয়ায় হাসপাতালে রোগীর সংখ্যা বেড়েছে- এমন তথ্য দিচ্ছেন চিকিৎসকরা। শ্যামলীর টিবি হাসপাতালের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালের মার্চ থেকে জুন পর্যন্ত চার মাসে আউটডোরে রোগীর সংখ্যা ছিল ২৫ হাজার ৪২২ জন। এর মধ্যে শিশু রোগীর সংখ্যা ছিল এক হাজার ৯৭ জন।

 

একই বছরের সেপ্টেম্বর থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত চার মাসে আউটডোরে রোগীর সংখ্যা দাঁড়ায় ৩৫ হাজার ৫৮৭ জনে। এর মধ্যে ৩ হাজার ১৪৮ জন ছিল শিশু। একই সময়ে এই হাসপাতালে ভর্তি হন এক হাজার ৭৭৭ রোগী, যা বছরের অন্য সময়ের চেয়ে তুলনামূলক অনেক বেশি।

শ্যামলী টিবি হাসপাতালের মেডিকেল অফিসার চেস্ট ডিজিজ স্পেশালিস্ট আহসানুল কবির বলেন, ‘আমরা তো প্রতিদিনই রোগী দেখি। শীত এলে শ্বাসকষ্টসহ সর্দি-কাশির রোগী বাড়ে। শীত মৌসুমে এসব রোগ বাড়ার অন্যতম কারণ বায়ুদূষণ।’

 

টিবি হাসপাতালের উপ-পরিচালক ডা. আয়শা আক্তার শিল্পী  বলেন, ‘শীত মৌসুমে আমাদের এখানে রোগী বাড়ে। গরমকালের তুলনায় সেপ্টেম্বর থেকে জানুয়ারি পর্যন্ত রোগীর চাপ বেশি থাকে। শীতের শুরু এবং মাঝামাঝি সময়ে অউটডোরে কোনো কোনো দিন প্রায় ৭০০ জন পর্যন্ত রোগী আসেন।’

বায়ুদূষণের প্রভাব নিয়ে তিনি বলেন, ‘দূষণের ফলে দীর্ঘমেয়াদি রোগ হয়। বেশি আক্রান্ত হয় শিশু ও বৃদ্ধরা। শীতকাল এলেই বাচ্চাদের অনেকে নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়। বয়স্করাও অনেকে মারা যান। এখন এলার্জি থেকে ফুসফুস আক্রান্ত হচ্ছে। ফুসফুসের কাজ অক্সিজেন নিয়ে শরীরে প্রবাহিত করা। এটা যদি ঠিকমতো কাজ না করে তাহলে বাতাস (অক্সিজেন) শরীরের বিভিন্ন অংশে প্রবাহিত হতে পারে না। ফুসফুস দুর্বল হয়ে পড়লে লিভার, কিডনি, মস্তিষ্ক, হার্টও আক্রান্ত হয়। বর্তমানে ধুলাবালির কারণে বাচ্চাদের মস্তিষ্কে সমস্যা হচ্ছে। বাধাগ্রস্ত হচ্ছে মানসিক ও শারীরিক বিকাশ। ফলে পড়াশোনা বিঘ্ন হচ্ছে, ভালোভাবে ঘুমাতে পারে না।’

আরও পড়ুন: কর্মকর্তাদের সন্তানরা বিদেশে, তাই বায়ুদূষণ নিয়ে মাথাব্যথা নেই

এই স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ আরও বলেন, ‘অসুস্থ হলে চিকিৎসকের স্মরণাপন্ন হতে হবে। ঠান্ডা লাগলে পরামর্শ ছাড়া ইনহেলার নেওয়া যাবে না। এগুলো থেকে দূরে থাকতে পুষ্টিকর খাবার, নিয়মিত ব্যায়ামের প্রতি জোর দিতে হবে। তাহলে বাড়বে রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা।’ এছাড়া শহরে প্রচুর গাছ লাগানোর পরামর্শ দেন এই বিশেষজ্ঞ।

দূষণের ফলে দীর্ঘমেয়াদি রোগ হয়। বেশি আক্রান্ত হয় শিশু ও বৃদ্ধরা। শীতকাল এলেই বাচ্চাদের অনেকে নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়। বয়স্করাও অনেকে মারা যান। এখন এলার্জি থেকে ফুসফুস আক্রান্ত হচ্ছে।

এ বিষয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক আবু ফয়সাল জামিল বলেন, ‘পরিবেশ ও স্বাস্থ্য একে অপরের সঙ্গে জড়িত। বায়ুদূষণের এই মারাত্মক প্রভাব মানুষের শরীরে পড়ছে। বেশি আক্রান্ত হচ্ছেন শিশু ও বৃদ্ধরা। আমাদের দেশে শুধু ডাক্তার সংখ্যা, কেবিন বাড়ানো, হাসপাতাল নির্মাণ নিয়ে কথা হয়। অথচ রোগ প্রতিরোধ কীভাবে করা যায়, রোগের সূত্র কোথা থেকে- সেগুলো নিয়ে কাজ হয় না। বায়ুদূষণ কীভাবে রোধ করা যাবে, কীভাবে এর ক্ষতিকর প্রভাব থেকে মানুষকে বাঁচানো যাবে- এসব নিয়ে কাজ করতে হবে।’

পরিবেশবিদরা বলছেন, বায়ুদূষণের ক্ষতিকর প্রভাব অনেক। এটি আমাদের সুস্বাস্থ্যের জন্য হুমকি। কিন্তু দূষণরোধে আমাদের শহরে সমন্বয় নেই। সংশ্লিষ্টদের যথাযথ পরিকল্পনা নেই। ফলে প্রতি বছর মানুষ রোগাক্রান্ত হচ্ছে, দীর্ঘমেয়াদি রোগের দিকে ধাবিত হচ্ছে।


বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন-বাপার সাধারণ সম্পাদক আলমগীর কবির বলেন, ‘ঢাকা শহরে বায়ুদূষণ বেশি সেটা আমরা সবাই জানি। কিন্তু এটি স্বাস্থ্যের জন্য কী পরিমাণ ক্ষতিকর- সেটা আমরা অনেকেই হয়তো জানি না। শহরে কলকারখানার ধোঁয়া তো রয়েছে। একই সঙ্গে শীতকালে ঢাকা শহরে বিভিন্ন প্রকল্পের নির্মাণকাজ বাড়ে। রাস্তা কাটাকাটি করা হয়। ফলে দূষণ আরও বেশি হয়। এতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন শিশু, বৃদ্ধ ও নারীরা। একদিকে মানুষ অসুস্থ হচ্ছে, তাদের অর্থের অপচয় হচ্ছে। দীর্ঘমেয়াদি রোগে আক্রান্ত হচ্ছে, মারাও যাচ্ছে।’

s
এই বিভাগের আরো সংবাদ
© All rights reserved © 2021 deshmediabd.com