প্রায় ৩০০ সদস্যের আবাসন গড়ে তুলতে ২০০৬ সালে আবেদন করে ঢাকা সাংবাদিক বহুমুখী সমবায় সমিতি। রাজধানীর পল্লবীর ঝিলপাড় মসজিদের পাশে সাত একর জমি তাদের বরাদ্দ দেয় জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষ। কিন্তু দীর্ঘ দেড় যুগেও সমিতির আবাসনের স্বপ্ন পূরণ হয়নি। জমি দখল করে ঢাকা-১৬ আসনের আওয়ামী লীগদলীয় সাবেক এমপি ইলিয়াস মোল্লাহ একাংশে বস্তি বানিয়ে ভাড়া তুলছেন। অন্য অংশে করেছেন গরুর খামার।
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর থেকে আত্মগোপনে আছেন ইলিয়াস মোল্লাহ। কিন্তু মিরপুর তল্লাটের যেসব জমি তিনি দখল করেছেন, তাতে রয়েই গেছে রাজত্ব।
সমিতির সভাপতি সদরুল হাসান বলেছেন, দখলমুক্ত করতে বহুবার গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের দ্বারস্থ হয়েছি। এক পর্যায়ে কিছু অংশ বুঝিয়ে দিলে অস্থায়ী স্থাপনা তৈরি করি। কিছুদিন পরই ইলিয়াস উদ্দিন মোল্লাহ লোক পাঠিয়ে ভেঙে দেন। গত ২৮ আগস্ট গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টার কাছে আবেদন করেছি। গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যানের সঙ্গে দেখা করলে পুলিশ সংকটে উচ্ছেদ করতে পারছেন না বলে তিনি জানিয়েছেন।
খাস কিংবা ব্যক্তিমালিকানা– মিরপুর এলাকায় ফাঁকা জমি মানেই তাতে নজর ইলিয়াসের। এক পর্যায়ে দখল করে মালিক বনে গেছেন। সেখানে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও বস্তি বানিয়ে ভাড়া তুলেছেন। আর এসব অপকর্ম দেখভালে গড়ে তুলেছেন অর্ধশতাধিক সদস্যের সশস্ত্র ক্যাডার বাহিনী।
স্থানীয়রা জানান, নির্বাচনী এলাকায় বিগত ১৬ বছর ইলিয়াস মোল্লাহর কথাই ছিল আইন। জমি ছাড়াও বহু দোকান, মার্কেট, বাসস্ট্যান্ড ও ফুটপাত দখলে নিয়েছেন। এসব নিয়ে কেউ অভিযোগ করলে বাড়ির বৈঠকখানায় সালিশ বসিয়ে আদালতের আদলে বিচার করতেন। বিচার না মানলে নিজে মারধর করতেন। মামলা দিয়ে পুলিশে দেওয়ার হুমকিও দিতেন। বিচারের রায় পক্ষে দেওয়ার জন্য সহকারীদের মাধ্যমে ঘুষও নিতেন ইলিয়াস। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্যাডার পাঠিয়ে শিক্ষার্থীদের শায়েস্তা এবং মিরপুর এলাকায় আন্দোলনে অতর্কিত হামলার অভিযোগ রয়েছে তাঁর বিরুদ্ধে।
সরেজমিন পল্লবীর ঝিলপাড়ে দেখা যায়, সাংবাদিক সমিতির দখল করা জমির কিছু অংশে দোকানপাট, বস্তি ও ‘আইয়াজ এগ্রো ফার্ম’ নামে গরুর খামার। প্রাচীরে ঘেরা খামারের কর্মীরা কথা বলতে রাজি হননি। এর অদূরেই ইলিয়াস মোল্লাহর বাড়ি গিয়ে ফটকে তালা ঝুলতে দেখা যায়। সবকিছু সুনসান। ৫ আগস্টের পর থেকে বাড়িতে ইলিয়াস মোল্লাহ, তাঁর স্ত্রী-সন্তান কাউকে দেখেননি বলে স্থানীয়রা জানান।বিস্তারিত