আনসার-ভিডিপি উন্নয়ন ব্যাংকের দুই শাখায় অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে প্রায় সাড়ে আট কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) সোমবার (২০ অক্টোবর) নোয়াখালী জেলায় অভিযান পরিচালনা করেছে।
দুদকের নোয়াখালী জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক আবদুল্লাহ আল নোমানের নেতৃত্বে দুপুর থেকে বিকেল পর্যন্ত এই অভিযান পরিচালিত হয়। অভিযানকালে তার সঙ্গে উপসহকারী পরিচালক চিন্ময় চক্রবর্তী ও কোর্ট ইন্সপেক্টর মো. ইদ্রিস উপস্থিত ছিলেন।
দুদক সূত্র জানায়, আনসার-ভিডিপি উন্নয়ন ব্যাংকের দত্তেরহাট শাখায় সাবেক ব্যবস্থাপক মো. আলমগীর দায়িত্ব পালনের সময় জালিয়াতি ও দুর্নীতির মাধ্যমে বিভিন্ন নামে ও বেনামে ঋণ অনুমোদন করে প্রায় ৭ কোটি ৫০ লাখ টাকা আত্মসাৎ করেন।
পরবর্তীতে তিনি সেনবাগ শাখায় বদলি হওয়ার পর সেখানে আরও ৪২ জন ভুয়া গ্রাহকের নামে ঋণ অনুমোদনের মাধ্যমে প্রায় ১ কোটি ৪১ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে।
এই অর্থ আত্মসাতের ঘটনাগুলোতে ব্যাংকের অভ্যন্তরীণ তদারকির দুর্বলতা, জবাবদিহির অভাব এবং ঋণ অনুমোদন প্রক্রিয়ায় অব্যবস্থাপনার বিষয়গুলোও উঠে এসেছে বলে সংশ্লিষ্টরা জানান।
অভিযানের খবর আগাম জানতে পেরে অভিযুক্ত সাবেক ব্যবস্থাপক মো. আলমগীর ব্যাংকের শাখা ত্যাগ করে পালিয়ে যান। দুদকের অনুসন্ধান দল তার উপস্থিতিতে ব্যাংকের হিসাব ও ঋণ সংক্রান্ত নথিপত্র যাচাই করতে পারেনি।
তবে, অভিযান চলাকালে কর্মকর্তারা ব্যাংকের ঋণ অনুমোদন রেজিস্টার, গ্রাহক তথ্য, অর্থ ছাড় সংক্রান্ত কাগজপত্রসহ বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ নথি সংগ্রহ করেন, যা পরে কমিশনের প্রধান কার্যালয়ে পাঠানো হবে বলে জানানো হয়েছে।
দুদকের সহকারী পরিচালক আবদুল্লাহ আল নোমান বলেন, “প্রাথমিক অনুসন্ধানে আনসার-ভিডিপি উন্নয়ন ব্যাংকের সাবেক কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগের কিছু সত্যতা পাওয়া গেছে। তদন্তকৃত তথ্য ও উদ্ধারকৃত নথিপত্র যাচাই-বাছাই শেষে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য তা কমিশনের প্রধান কার্যালয়ে পাঠানো হবে।”
তিনি আরও বলেন, “ব্যাংকিং খাতে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করতে আমরা নিয়মিতভাবে এমন অভিযান পরিচালনা করছি।”
আনসার-ভিডিপি উন্নয়ন ব্যাংক একটি রাষ্ট্রায়ত্ত বিশেষায়িত ব্যাংক, যার মূল লক্ষ্য গ্রামীণ অর্থনীতি ও আনসার ও ভিডিপি সদস্যদের আর্থিক অন্তর্ভুক্তি ও উন্নয়নে ভূমিকা রাখা। এই ব্যাংকে অর্থ আত্মসাতের মতো ঘটনা শুধু প্রতিষ্ঠানটির ভাবমূর্তিই ক্ষুণ্ণ করছে না, বরং সাধারণ জনগণের আস্থা ও ব্যাংকিং খাতের স্থিতিশীলতার ওপরও নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, এ ধরনের দুর্নীতির অভিযোগ শুধুমাত্র অপরাধীর ব্যক্তিগত লোভ নয়, বরং ব্যবস্থাপনাগত দুর্বলতা, তদারকির অভাব এবং নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থার অসারতাকেও প্রতিফলিত করে।
দুদক কর্তৃপক্ষ জানায়, তদন্ত প্রতিবেদন চূড়ান্ত হওয়ার পর অভিযুক্তের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা দায়েরসহ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। একইসঙ্গে ব্যাংকের অন্য সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের ভূমিকা নিয়েও অনুসন্ধান চলবে।
দুদকের এই অভিযানকে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিমূলক প্রশাসনের দিকে একটি পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে।