গাজা সিটির পূর্বাঞ্চলে ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর পৃথক দুটি হামলায় অন্তত চারজন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। ফিলিস্তিনি সিভিল ডিফেন্স জানিয়েছে, নিহতরা যুদ্ধবিরতির সুযোগে ধ্বংসস্তূপে পরিণত হওয়া নিজেদের বাসভবন পরিদর্শনে গিয়ে ইসরায়েলি গুলির শিকার হন।
অন্যদিকে, ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী দাবি করেছে, তারা “হলুদ সীমারেখা” অতিক্রমকারী “হুমকিস্বরূপ যোদ্ধাদের” লক্ষ্য করে গুলি চালায়। সেনাবাহিনীর ভাষ্য অনুযায়ী, এই রেখা ইসরায়েলি নিয়ন্ত্রিত অঞ্চল এবং ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডের মধ্যে একটি বিভাজন রেখা হিসেবে চিহ্নিত, যা গত ৪ অক্টোবর যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় প্রকাশিত হয়।
তবে স্থানীয়দের বক্তব্য ভিন্ন। গাজা শহরের তুফাহ এলাকার বাসিন্দা সামির বলেন, “পুরো এলাকা ধ্বংস হয়ে গেছে। আমরা মানচিত্রে রেখা দেখেছি, কিন্তু এর অবস্থান বুঝতে পারছি না।” সীমারেখা ঘিরে এই বিভ্রান্তি সামরিক সংঘাতের ঝুঁকি বাড়িয়ে দিচ্ছে বলেও মনে করছেন অনেকে।
এদিকে, গাজা অঞ্চলে সহিংসতার পুনরাবৃত্তির ফলে যুদ্ধবিরতির স্থায়ীত্ব নিয়ে আশঙ্কা বাড়ছে। গত ১০ অক্টোবর কার্যকর হওয়া যুদ্ধবিরতি চুক্তির পর থেকে দুই পক্ষের মধ্যে বেশ কয়েকবার সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। গাজার স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষের তথ্য অনুযায়ী, চুক্তি কার্যকর হওয়ার পর থেকে এখন পর্যন্ত অন্তত ৯৭ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন।
গত রোববারের বিমান হামলাকে যুদ্ধবিরতির সবচেয়ে ভয়াবহ লঙ্ঘন হিসেবে আখ্যা দিচ্ছে স্থানীয় সূত্র। ওই হামলায় অন্তত ৪২ জন নিহত হন, যাদের মধ্যে শিশুদের সংখ্যাও রয়েছে।
ইসরায়েল জানিয়েছে, হামাস যোদ্ধারা রাফাহ অঞ্চলে গুলি চালিয়ে তাদের দুই সেনাকে হত্যা করায় প্রতিশোধ হিসেবে এই হামলা চালানো হয়। তবে হামাস এই দাবি প্রত্যাখ্যান করেছে। সংগঠনটি জানিয়েছে, রাফাহর সংশ্লিষ্ট এলাকায় তাদের কোনো ইউনিট সক্রিয় ছিল না এবং সেখানে সংঘটিত ঘটনার জন্য তারা দায়ী নয়।
হামাসের একজন কর্মকর্তা ইসরায়েলের বিরুদ্ধে “পুনরায় যুদ্ধ শুরু করার অজুহাত তৈরির” অভিযোগ এনেছেন। তিনি বলেন, “ইসরায়েল যুদ্ধবিরতি চুক্তি নস্যাৎ করতে চায়, এবং এর জন্য বিভিন্ন প্ররোচনামূলক পদক্ষেপ নিচ্ছে।”
হামাস আরও দাবি করেছে, তারা এ পর্যন্ত ২০ জন জীবিত ইসরায়েলি বন্দিকে মুক্তি দিয়েছে এবং আরও কিছু মৃতদেহ হস্তান্তরের উদ্যোগ নিচ্ছে। তবে ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ ও নিরাপত্তাহীন পরিবেশের কারণে এই প্রক্রিয়া ব্যাহত হচ্ছে বলেও জানানো হয়।
এই পরিস্থিতির মধ্যে সোমবার ইসরায়েল খান ইউনিস শহরের পূর্বাংশে আবারও বিমান হামলা চালায়। এতে স্থানীয় বাসিন্দারা নতুন করে পূর্ণমাত্রায় যুদ্ধ শুরু হওয়ার আশঙ্কায় রয়েছেন।
মানবিক সহায়তা নিয়েও জটিলতা সৃষ্টি হয়েছে। গত সপ্তাহে ইসরায়েল গাজায় সাহায্য প্রবেশে নিষেধাজ্ঞার হুমকি দিলেও পরে জানায়, যুদ্ধবিরতি বহাল রাখা হয়েছে। জাতিসংঘের মুখপাত্র স্টেফান ডুজারিক জানান, গাজায় মানবিক সহায়তা পাঠানো পুনরায় শুরু হয়েছে, তবে সঠিক পরিমাণ বা বিস্তৃতি এখনো জানা যায়নি।
তবে আল জাজিরার গাজা ভিত্তিক প্রতিবেদক তারেক আবু আজযুম জানান, “সহায়তা পরিবহনকারী ট্রাকগুলো ইসরায়েলি সামরিক চেকপয়েন্টে আটকে আছে। এর ফলে হাজারো মানুষ প্রয়োজনীয় খাদ্য ও চিকিৎসাসেবার বাইরে রয়েছে।”
জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা ইউএনআরডব্লিউএ’র কমিশনার জেনারেল ফিলিপ লাজারিনি এক্স (সাবেক টুইটার) প্ল্যাটফর্মে দেওয়া এক বিবৃতিতে বলেন, “এই ভঙ্গুর যুদ্ধবিরতি অবশ্যই টিকিয়ে রাখা প্রয়োজন। একই সঙ্গে আন্তর্জাতিক মানবিক আইন লঙ্ঘনের অভিযোগগুলো তদন্ত করা আবশ্যক।”
তিনি বিশ্ব সম্প্রদায়কে মানবিক সহায়তা নির্বিঘ্নে পৌঁছে দিতে সক্রিয় ভূমিকা রাখার আহ্বান জানান।