যুক্তরাষ্ট্র ও অস্ট্রেলিয়া বিরল ও গুরুত্বপূর্ণ খনিজ পদার্থের সরবরাহ শৃঙ্খলে চীনের একচ্ছত্র আধিপত্য কমাতে একটি ব্যাপক বিনিয়োগ ও সহযোগিতার চুক্তি স্বাক্ষর করেছে। দেশ দুটি যৌথভাবে প্রায় ৮.৫ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগের মাধ্যমে খনিজ আহরণ ও প্রক্রিয়াজাতকরণের খাতে নতুন প্রকল্প গড়ে তোলার উদ্যোগ নিচ্ছে।
সোমবার (২১ অক্টোবর) প্রকাশিত ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির প্রতিবেদনে জানানো হয়, এই প্রকল্পের প্রথম ধাপে আগামী ছয় মাসে যুক্তরাষ্ট্র ও অস্ট্রেলিয়ায় মোট এক বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করা হবে। এই বিনিয়োগের লক্ষ্য হলো দুই দেশের খনিজ উৎপাদন ও প্রক্রিয়াজাতকরণ সক্ষমতা বৃদ্ধি করে আন্তর্জাতিক বাজারে সরবরাহের নির্ভরযোগ্যতা উন্নত করা।
অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী অ্যান্থনি অ্যালবানিজ এই চুক্তির গুরুত্ব তুলে ধরে বলেন, এটি দুই দেশের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় অংশীদারিত্বকে “নতুন উচ্চতায়” নিয়ে যাবে। তিনি বলেন, এই বিনিয়োগ প্রকল্প অস্ট্রেলিয়ার খনি খাতে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন ঘটাবে এবং প্রক্রিয়াজাতকরণ শিল্পে সক্ষমতা বাড়াবে।
বিশ্লেষকরা মনে করেন, এই পদক্ষেপটি বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ, কারণ বর্তমানে বিশ্ব বাজারে বিরল খনিজের প্রায় ৭০ শতাংশ আহরণ এবং ৯০ শতাংশ প্রক্রিয়াজাতকরণ কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণ করে চীন। এই খনিজ পদার্থগুলো প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম, আধুনিক কম্পিউটার চিপ, বৈদ্যুতিক যানবাহনসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ প্রযুক্তিতে অপরিহার্য উপাদান হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
যুক্তরাষ্ট্র ও অস্ট্রেলিয়ার মধ্যে এই সহযোগিতা ট্রাম্প প্রশাসনের সময় থেকেই শুরু হলেও, নতুন চুক্তির মাধ্যমে দুই দেশের মধ্যকার অর্থনৈতিক ও প্রযুক্তিগত সম্পর্ক আরও মজবুত হবে বলে আশা করা হচ্ছে। এর আগে যুক্তরাষ্ট্রের সাবমেরিন ক্রয় ও সামরিক প্রযুক্তি শেয়ারিং সম্পর্কিত ‘অকাস’ (AUKUS) চুক্তি নিয়েও আলোচনা চলছিল, যা প্রতিরক্ষা ও নিরাপত্তা ক্ষেত্রে তিন দেশের সহযোগিতা জোরদার করে।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প কিছুদিন আগে জানান, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও অস্ট্রেলিয়ার যৌথ ‘অকাস’ সাবমেরিন চুক্তি “পুরোদমে এগিয়ে চলছে”। যদিও শুরুতে সাবমেরিন ক্রয় নিয়ে অনিশ্চয়তা থাকলেও পরে নিশ্চিত করা হয় অস্ট্রেলিয়া মার্কিন সাবমেরিন পাবে।
বিশ্ব বাণিজ্যে বিরল খনিজের সরবরাহ সঙ্কটের পেছনে যুক্তরাষ্ট্র-চীন বাণিজ্য উত্তেজনা অন্যতম কারণ। বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রের নতুন শুল্কনীতি আর বাণিজ্যবিরোধের কারণে চীন সরবরাহ সীমিত করার পদক্ষেপ নিয়েছে, যা মার্কিন কোম্পানিগুলোর জন্য সরবরাহ ঝুঁকি বাড়িয়েছে।
অস্ট্রেলিয়া বিশ্বের বড় খনিজ উৎপাদনকারী হলেও, প্রক্রিয়াজাতকরণের ক্ষেত্রে তারা এখনও চীনের ওপর নির্ভরশীল। এই ব্যবস্থার মাধ্যমে খনিজগুলোকে ব্যবহারযোগ্য পণ্য হিসেবে রূপান্তর করা হয়, যা আন্তর্জাতিক বাজারে সরবরাহ নিশ্চিত করার জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয়।
এই নতুন বিনিয়োগ ও সহযোগিতার মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র ও অস্ট্রেলিয়া বিরল খনিজের সরবরাহ নিরাপদ ও বহুমাত্রিক করার চেষ্টা করছে, যা ভবিষ্যতে বিশ্ব বাণিজ্যে চীনের একচ্ছত্র আধিপত্য কমাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। একই সঙ্গে, প্রযুক্তি ও প্রতিরক্ষা খাতে দুই দেশের স্বাধীনতা বৃদ্ধি পাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।