রাশিয়ার সঙ্গে চলমান যুদ্ধে ইউক্রেন শেষ পর্যন্ত জয়ী হতে পারবে না বলে মন্তব্য করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তবে তিনি বলেন, দেশটির মধ্যে যুদ্ধজয়ের সক্ষমতা এখনো রয়েছে।
সোমবার হোয়াইট হাউসে আয়োজিত এক সংবাদ ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বলেন, “তারা (ইউক্রেন) জিততে পারত। আমার মনে হয় না তারা পারবে; কিন্তু তারা চাইলে এখনও তা পারে।”
ট্রাম্প আরও বলেন, “আসলে যে কোনো কিছুই ঘটতে পারে। যুদ্ধ খুবই বিচিত্র একটি বিষয়। এখানে অনেক খারাপ ঘটনা ঘটে, আবার কিছু ভালো ব্যাপারও দেখা যায়।”
গত কয়েক সপ্তাহে ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে ট্রাম্পের দেওয়া বিভিন্ন বক্তব্যে পারস্পরিক অসঙ্গতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে। একদিকে তিনি বলছেন ইউক্রেন জয় পেতে পারবে না, অন্যদিকে তিনি আবার দাবি করেছেন ইউক্রেন দখলকৃত সব ভূখণ্ড পুনরুদ্ধার করবে।
ফক্স নিউজকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, “ইউক্রেনকে তার ভূখণ্ডের কিছু অংশের দখল ছেড়ে দিতে হবে। এই ত্যাগস্বীকার তাকে করতেই হবে। কারণ পুতিন কিছু না কিছু চাইবেন। রুশ বাহিনী লড়াই করেছে, এবং কিছু এলাকা তারা নিয়ন্ত্রণে নিয়েছে।”
এই মন্তব্য বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এর মাত্র কয়েক দিন আগেই তিনি বলেছিলেন, ইউক্রেন সব দখলকৃত অঞ্চল ফিরে পাবে। বিশ্লেষকদের মতে, এমন বক্তব্য ইউক্রেন যুদ্ধ সংক্রান্ত ট্রাম্প প্রশাসনের নীতিগত স্পষ্টতার অভাবকে ইঙ্গিত করে।
ইউক্রেনের বেসামরিক এলাকায় রাশিয়ার হামলার অভিযোগ প্রসঙ্গে ট্রাম্প বলেন, “হ্যাঁ, হামলা হচ্ছে, তবে যারা নিহত হচ্ছে— সবাই সামরিক।” তার দাবি অনুযায়ী, প্রতি সপ্তাহে উভয় পক্ষেই ৫ থেকে ৭ হাজার সেনা প্রাণ হারাচ্ছে।
এ বিষয়ে স্বাধীন কোনো আন্তর্জাতিক সংস্থা বা পর্যবেক্ষকের কাছ থেকে ট্রাম্পের বক্তব্যের সত্যতা নিশ্চিত করা যায়নি। তবে যুদ্ধ পর্যবেক্ষক সংস্থাগুলো বলছে, উভয় পক্ষেই ব্যাপক প্রাণহানি ও সামরিক ক্ষয়ক্ষতি ঘটছে।
২০২৫ সালের ২০ জানুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর ট্রাম্প জানিয়েছিলেন, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধ করা তার প্রশাসনের অগ্রাধিকার হবে। সে অনুযায়ী তিনি ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি এবং রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে একাধিকবার বৈঠক করেন।
তবে এখন পর্যন্ত কোনো সমঝোতার লক্ষণ দেখা যায়নি। সর্বশেষ তিনি ঘোষণা দিয়েছেন, রুশ প্রেসিডেন্ট পুতিনের সঙ্গে শিগগিরই বৈঠকে বসবেন তিনি। হাঙ্গেরির রাজধানী বুদাপেস্টে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হতে পারে বলে জানানো হয়েছে।
বিশ্লেষকদের মতে, ট্রাম্পের এমন মন্তব্য যুদ্ধ পরিস্থিতি সম্পর্কে একটি জটিল বার্তা দিচ্ছে। ইউক্রেনের জয়ের সম্ভাবনা একদিকে অস্বীকার করা এবং অন্যদিকে তা সম্ভাব্য বলে উল্লেখ করা তার প্রশাসনের দৃষ্টিভঙ্গিতে দ্বৈততা সৃষ্টি করছে। একইসঙ্গে ইউক্রেনকে ভূখণ্ড ছেড়ে দেওয়ার পরামর্শ যুদ্ধ-পরিস্থিতিতে কিয়েভের জন্য কৌশলগত ও নৈতিক চ্যালেঞ্জ তৈরি করতে পারে।
বিশেষজ্ঞদের আশঙ্কা, যুক্তরাষ্ট্রের এমন অবস্থান মস্কোকে আরও আগ্রাসী পদক্ষেপ নেওয়ার সুযোগ করে দিতে পারে, ফলে যুদ্ধের সময়সীমা ও পরিণতি আরও জটিল হয়ে উঠতে পারে।
সূত্র: আরটি, ফক্স নিউজ, হোয়াইট হাউস ব্রিফিং, আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থা সংকলন