নয় বছর লিভারপুলে কাটিয়ে ২০২৪ সালে কোচিং ক্যারিয়ারে বিরতি নেন ইয়ুর্গেন ক্লপ। ক্লপের অধীনেই লিভারপুল প্রিমিয়ার লিগ, চ্যাম্পিয়নস লিগসহ একাধিক শিরোপা ঘরে তোলে। বিদায়ের সময় ক্লপ বলেছিলেন, “শক্তি ফুরিয়ে গেছে”—আর সহসাই কোচিংয়ে ফেরার ইচ্ছাও প্রকাশ করেননি।
বর্তমানে তিনি রেড বুল ফুটবল গ্রুপে ‘হেড অব সকার’ পদে দায়িত্ব পালন করছেন। তবে ‘ডায়রি অব এ সিইও’ নামের এক পডকাস্টে দেওয়া সাক্ষাৎকারে কোচিংয়ে ফেরার ইঙ্গিত দিয়েছেন এই জার্মান কোচ। যদিও বর্তমান অবস্থানে তিনি স্বাচ্ছন্দ্যেই আছেন বলে জানান।
ফেরার সম্ভাবনা একমাত্র লিভারপুলেই
ক্লপ পডকাস্টে বলেন, “আমি আগেই বলেছি, ইংল্যান্ডে ভিন্ন কোনো ক্লাবের কোচ হতে চাই না। যদি কোনোদিন ফিরি, সেটি হবে কেবল লিভারপুলে। হ্যাঁ, তাত্ত্বিকভাবে তা সম্ভব।”
তবে তিনি আরও স্পষ্ট করেন, এখনই কোচিংয়ে ফেরার কোনো পরিকল্পনা নেই। বরং বর্তমানে ফুটবলের বাইরের ভূমিকা তিনি উপভোগ করছেন। “আমি কোচিং মিস করছি না। প্রতিদিন বৃষ্টিতে তিন ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থাকা, সপ্তাহে একাধিক সংবাদ সম্মেলন, ড্রেসিংরুমে দীর্ঘ সময় কাটানো—এসব এখন আর আমার কাছে আকর্ষণীয় নয়,” বলেন ক্লপ।
তিনি জানান, দীর্ঘ ক্যারিয়ারে তিনি প্রায় ১,০৮০টি ম্যাচে কোচ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন, যা তার পেশাদার জীবনে উল্লেখযোগ্য সময় নিয়েছে।
কোচিংয়ে ফেরার বিষয়ে ক্লপ বলেন, “এই মুহূর্তে যদি আমাকে সিদ্ধান্ত নিতে বলা হয়, আমি বলব, আর কোচ হব না। তবে ভালো যে এখনই সিদ্ধান্ত নিচ্ছি না। ভবিষ্যতে কী হবে, সেটাই দেখা যাক।”
৫৮ বছর বয়সী ক্লপ জানিয়েছেন, বয়সের দিক থেকে তিনি এখনও কিছু করার অবস্থানে আছেন এবং কয়েক বছরের মধ্যেই এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে পারেন।
লিভারপুলের বর্তমান কোচ স্লটের প্রশংসা
ক্লপের বিদায়ের পর ডাচ কোচ আর্নে স্লট দায়িত্ব নিয়েছেন লিভারপুলের প্রধান কোচ হিসেবে। প্রথম মৌসুমেই দলকে প্রিমিয়ার লিগ শিরোপা এনে দেন তিনি। তবে পরবর্তী মৌসুমে দলে কিছু পরিবর্তন আসায় পারফরম্যান্সে ধারাবাহিকতা দেখা যাচ্ছে না।
স্লটের প্রশংসা করে ক্লপ বলেন, “সে দারুণ একজন কোচ ও মানুষ। দলের কাছ থেকে সেরাটা বের করে এনেছে এবং চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। আর্নে কী করতে পারে তা প্রমাণ করার চেষ্টা সে করেনি, বরং দলের সম্ভাবনাকে কাজে লাগিয়েছে।”
নতুন মৌসুমে লিভারপুল স্কোয়াড থেকে ট্রেন্ট আলেক্সান্ডার-আর্নল্ড, দারউইন নুনিয়েজ ও লুইস দিয়াজের মতো খেলোয়াড়দের বিদায়ের পর কিছুটা পুনর্গঠনের প্রয়োজন পড়ে। এ বিষয়ে ক্লপ বলেন, “পরিবর্তনের অবশ্যই প্রভাব পড়ে, এবং সেজন্য সময় প্রয়োজন। নতুন খেলোয়াড়েরা ভালো হলেও, তাদের মানিয়ে নিতে সময় লাগবে—এটা স্বাভাবিক।”
তিনি যোগ করেন, “শুরুর দিকে কিছু সমস্যা দেখা দিলে সেটি শুধু আগের খেলোয়াড়দের অনুপস্থিতির জন্য নয়, বরং পরিবর্তনের ফলে নতুন ছেলেদের সময় দিতে হবে। উন্নতির জন্য ধৈর্য জরুরি।”লিভারপুলে ক্লপের অবদান ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে, তবে তার প্রত্যাবর্তন এখনো অনিশ্চিত। আপাতত ফুটবলে ভিন্ন ভূমিকায় ব্যস্ত ক্লপ ভবিষ্যতের সিদ্ধান্ত ভবিষ্যতের জন্যই রেখে দিয়েছেন। তবে লিভারপুল সমর্থকদের জন্য তার কথাগুলো সামান্য আশার আলো হয়তো বয়ে আনবে। কারণ, যদি ফেরেন—তবে সেটি শুধুই লিভারপুলেই।