মিরপুরের ধীরে টার্ন নেওয়া উইকেটের বাস্তবতা মাথায় রেখে স্পিন নির্ভর কৌশল বেছে নিয়েছে সফরকারী ওয়েস্ট ইন্ডিজ। সিরিজের প্রথম ওয়ানডেতে স্পিনারদের বিপর্যয় দেখার পর, দ্বিতীয় ওয়ানডের আগে দলে উড়িয়ে আনা হয়েছে বাঁহাতি স্পিনার আকিল হোসেনকে। আর আজ (২১ অক্টোবর) ইতিহাস সৃষ্টি করে ওয়েস্ট ইন্ডিজ প্রথম পাওয়ার প্লের ১০ ওভারই স্পিন দিয়ে করিয়েছে।
বোলিং শুরু করেন আকিল হোসেন ও রোস্টন চেজ। আকিল হোসেন ৫ ওভারে ১ উইকেট নেন, আর চেজ করেন ৪ ওভার। বাকি এক ওভার করেন খ্যারি পিয়ের। ওয়ানডে ক্রিকেটে এই প্রথম কোনো ম্যাচে পাওয়ার প্লের ১০ ওভারে কেবল স্পিনার দিয়ে বোলিং করল ওয়েস্ট ইন্ডিজ।
স্পিন নির্ভর কৌশলে পিছিয়ে ছিল না স্বাগতিকরাও। বাংলাদেশ চার স্পিনার নিয়ে একাদশ সাজিয়েছে, যা সর্বশেষ দেখা গিয়েছিল ২০২২ সালের জুলাইয়ে গায়ানায় ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে। ওই ম্যাচেও একমাত্র পেসার ছিলেন মুস্তাফিজুর রহমান, যেমনটি দেখা গেল আজকের ম্যাচেও।
আজ একাদশে বিশেষজ্ঞ স্পিনার হিসেবে আছেন নাসুম আহমেদ ও তানভীর ইসলাম। অলরাউন্ডার হিসেবে মেহেদী হাসান মিরাজ ও রিশাদ হোসেন যুক্ত হয়েছেন দলে। পার্টটাইম স্পিনার হিসেবে আছেন সাইফ হাসান।
স্পিন নির্ভর এমন কৌশলের নেপথ্যে রয়েছে মিরপুরের উইকেটের চরিত্র। প্রথম ম্যাচেও দেখা গেছে, এই পিচে ব্যাট করা কঠিন এবং বোলারদের জন্য বাড়তি সুবিধাজনক।
টস জিতে ব্যাটিংয়ের সিদ্ধান্ত নিলেও বাংলাদেশ শুরু থেকেই চাপে পড়ে যায়। ইনিংসের শুরুতে নিয়মিত বিরতিতে উইকেট হারাতে থাকে স্বাগতিক দল। এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত বাংলাদেশ ৩০ ওভারে ১০১ রানে ৪ উইকেট হারিয়ে ব্যাট করছে।
এখন ক্রিজে আছেন ওপেনার সৌম্য সরকার (৪৪ রান) ও অধিনায়ক মেহেদী হাসান মিরাজ। সৌম্য কিছুটা ধৈর্য্য ধরে ইনিংস গড়ার চেষ্টা করছেন। তবে অন্যপ্রান্তে ব্যাটারদের নিয়মিত আসা-যাওয়ার কারণে দল চাপেই আছে।
এদিন ওপেনিংয়ে নামা সাইফ হাসান ৬ রান করে ফিরে যান। আগের ম্যাচে ব্যাট হাতে উজ্জ্বল থাকলেও, দ্বিতীয় ওয়ানডেতে ব্যর্থ হলেন তাওহীদ হৃদয়—১২ রানে আউট হন তিনি। চারে নামা নাজমুল হোসেন শান্ত ১৫ রান করেন। পাঁচে নামা মাহিদুল অঙ্কনও বড় ইনিংস গড়তে ব্যর্থ হন।
প্রথম ওয়ানডেতে স্পিনারদের কার্যকর ভূমিকা এবং মিরপুরের স্পিন সহায়ক উইকেট দ্বিতীয় ম্যাচেও দুই দলকে কৌশল বদলাতে বাধ্য করে। বিশেষ করে ওয়েস্ট ইন্ডিজের মতো traditionally পেস নির্ভর দলের এমন স্পিন-কেন্দ্রিক পরিকল্পনা দেখায় তারা পিচের বাস্তবতা বুঝতে পেরেছে।
২০১৯ সালের পর এই প্রথম কোনো ওয়ানডেতে বাংলাদেশের একাদশে চারজন স্পিনার খেলছেন। এর আগে, ২০২২ সালের জুলাইয়ে গায়ানায় ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে এই কৌশল নেওয়া হয়েছিল। সেদিন ৫ উইকেট নেন তাইজুল ইসলাম এবং মাত্র ১৬৮ রানে গুটিয়ে যায় ক্যারিবীয়রা। ম্যাচটি বাংলাদেশ জেতে ৪ উইকেট হাতে রেখে।
মিরপুরের ধীর উইকেটে দুই দলের স্পিন কৌশল স্পষ্টতই প্রাধান্য পেয়েছে দ্বিতীয় ওয়ানডেতে। তবে ব্যাটিংয়ের দিক থেকে বাংলাদেশ এখনো স্পিন মোকাবিলায় লড়ছে। শেষ পর্যন্ত কত রান জড়ো করতে পারে স্বাগতিকরা এবং স্পিনে ভর করে প্রতিপক্ষকে কতটা চাপে ফেলতে পারে—এটাই এখন দেখার বিষয়।