পাকিস্তান ক্রিকেটে আবারও নেতৃত্ব পরিবর্তনের পালা। সর্বশেষ পরিবর্তনে সাদা বলের ক্রিকেটে (ওয়ানডে ফরম্যাটে) মোহাম্মদ রিজওয়ানকে অধিনায়কত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে, তার স্থলাভিষিক্ত হয়েছেন পেসার শাহিন শাহ আফ্রিদি। সোমবার রাতে এক বিবৃতিতে এ সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছে পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ড (পিসিবি)। তবে সিদ্ধান্তের কারণ ব্যাখ্যা করা হয়নি।
সূত্রমতে, ইসলামাবাদে অনুষ্ঠিত এক অভ্যন্তরীণ সভায় জাতীয় নির্বাচক কমিটি এবং সাদা বলের কোচ মাইক হেসনের উপস্থিতিতে এ সিদ্ধান্ত হয়। হেসনের সুপারিশেই বোর্ড সভাপতি মহসিন নাকভি এই সভা ডেকেছিলেন, যেখানে নেতৃত্ব পরিবর্তনের বিষয়টি চূড়ান্ত হয়।
পিসিবির এই আকস্মিক সিদ্ধান্ত নিয়ে কড়া সমালোচনা করেছেন পাকিস্তানের সাবেক অধিনায়ক ও উইকেটরক্ষক রশিদ লতিফ। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ‘এক্স’-এ দেওয়া এক পোস্টে তিনি বলেন,
“শাহিন শাহ আফ্রিদিকে ওয়ানডে অধিনায়ক করা হলো। সাধারণত রাজনীতিতে ক্ষমতা ধরে রাখার জন্য ‘ডিভাইড অ্যান্ড রুল’ নীতি প্রয়োগ করা হয়। পাকিস্তানই একমাত্র দল যারা সঠিক প্রক্রিয়ায় অধিনায়ক নির্বাচন করতে ব্যর্থ।”
তিনি অভিযোগ করেন, দলে বিভাজন তৈরি করেই বিভিন্ন সময়ে নেতৃত্ব পরিবর্তন করা হচ্ছে। তার বক্তব্যে ইঙ্গিত ছিল, রিজওয়ানকে সরিয়ে দেওয়ার পেছনে ক্রিকেটীয় যুক্তির চেয়ে রাজনৈতিক প্রভাবই বেশি প্রাধান্য পেয়েছে।
রশিদ লতিফের পোস্টে সংযুক্ত একটি ছবি চাঞ্চল্য তৈরি করেছে, যেখানে রিজওয়ানের একটি ছবিতে ফিলিস্তিনের পতাকা যুক্ত করা হয়। জানা গেছে, রিজওয়ান বিভিন্ন সময়ে ফিলিস্তিন ও গাজার পক্ষে প্রকাশ্যে সমর্থন জানিয়ে আসছিলেন। ধারণা করা হচ্ছে, এই অবস্থান হয়তো তাকে কোচ বা বোর্ড কর্তৃপক্ষের বিরূপ মনোভাবের শিকার করেছে। যদিও এ বিষয়ে পিসিবি আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো মন্তব্য করেনি।
ঘন ঘন নেতৃত্ব পরিবর্তনের ধারাবাহিকতা:
পাকিস্তান ক্রিকেটে নেতৃত্বের পরিবর্তন এখন নিয়মিত চিত্র হয়ে উঠেছে। রশিদ লতিফ তার পোস্টে একটি তালিকা তুলে ধরেছেন, যেখানে দেখা যাচ্ছে ২০২৩ সালের মার্চ থেকে ২০২৫ সালের অক্টোবর পর্যন্ত মোট ৯ বার অধিনায়ক পরিবর্তন হয়েছে।
সাম্প্রতিক সময়ের কিছু উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন নিম্নরূপঃ
১৩ মার্চ ২০২৩: আফগানিস্তান সিরিজে অধিনায়ক শাদাব খান
১৫ নভেম্বর ২০২৩: বাবর আজম তিন ফরম্যাটের নেতৃত্ব ছাড়েন
১৫ নভেম্বর ২০২৩: শাহিন আফ্রিদিকে টি-টোয়েন্টির দায়িত্ব দেওয়া হয়
২৯ মার্চ ২০২৪: শাহিনকে সাদা বলের নেতৃত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়
৩১ মার্চ ২০২৪: বাবর আজম পুনরায় টি-টোয়েন্টি অধিনায়ক
২৭ অক্টোবর ২০২৪: মোহাম্মদ রিজওয়ান ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টির অধিনায়ক
৪ মার্চ ২০২৫: সালমান আলি আগা টি-টোয়েন্টির দায়িত্ব পান
২০ অক্টোবর ২০২৫: ওয়ানডে অধিনায়ক হন শাহিন শাহ আফ্রিদি
এত ঘনঘন নেতৃত্ব পরিবর্তনের কারণে দলীয় স্থিতিশীলতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে ক্রিকেট মহলে।মোহাম্মদ রিজওয়ান সম্প্রতি দলের অন্যতম নির্ভরযোগ্য ব্যাটার হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। তিনি কিপার-ব্যাটার হিসেবে ধারাবাহিকতা বজায় রেখেছেন এবং ফরম্যাট অনুযায়ী খাপ খাওয়ানোর সামর্থ্যও দেখিয়েছেন। তবে অধিনায়ক হিসেবে তার নেতৃত্বদানের মেয়াদ ছিল অত্যন্ত স্বল্প, ফলে মাঠের পারফরম্যান্স দিয়ে মূল্যায়নের পর্যাপ্ত সুযোগ মিলেনি।
শাহিন আফ্রিদি পূর্বে সংক্ষিপ্ত সময়ের জন্য টি-টোয়েন্টি দলের অধিনায়ক ছিলেন, তবে সেখান থেকেও তাকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছিল। এখন তাকে ওয়ানডে দলের দায়িত্ব দেওয়া হলো, যদিও তার অধিনায়কত্বের অভিজ্ঞতা ও সক্ষমতা নিয়ে বিশ্লেষকদের মধ্যে দ্বিধা রয়েছে।
পাকিস্তান ক্রিকেটে নেতৃত্বের অস্থিরতা নতুন নয়, তবে সাম্প্রতিক সময়ে তা আরও প্রকট হয়ে উঠেছে। মোহাম্মদ রিজওয়ানের জায়গায় শাহিন আফ্রিদির নিয়োগ সেই ধারাবাহিকতারই অংশ। সাবেকদের অভিযোগ ও ইঙ্গিত, বিশেষ করে ধর্মীয় ও রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট সামনে এনে, এই সিদ্ধান্তকে আরও বিতর্কিত করেছে। নেতৃত্বের এই অনিশ্চয়তা মাঠের পারফরম্যান্সেও প্রভাব ফেলতে পারে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।