জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক) মঙ্গলবার ১৩টি উন্নয়ন প্রকল্প অনুমোদন দিয়েছে, যাদের বাস্তবায়নে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে এক হাজার ৯৮৮ কোটি ৭ লাখ টাকা। এসব প্রকল্পের মাধ্যমে দেশের বিভিন্ন সেক্টরে উন্নয়ন ত্বরান্বিত হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
ঢাকার শেরেবাংলা নগরের এনইসি সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত একনেক বৈঠকটি ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত হয়। পরিকল্পনা কমিশনের পক্ষ থেকে জানানো হয়, অনুমোদিত প্রকল্পগুলোর মধ্যে তিনটি নতুন, সাতটি সংশোধিত এবং তিনটি প্রকল্পের মেয়াদ বৃদ্ধির জন্য অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এসব প্রকল্পের জন্য সরকারের নিজস্ব অর্থায়ন, ঋণ এবং সরকারি কোষাগার থেকে প্রয়োজনীয় তহবিল বরাদ্দ করা হবে।
অনুমোদিত প্রকল্পগুলোর জন্য ঋণ হিসেবে ৫৩ কোটি ২ লাখ টাকা, সংস্থার নিজস্ব অর্থায়ন থেকে ৫০ কোটি টাকা এবং বাকি অর্থ সরকারি কোষাগার থেকে ব্যয় করা হবে। এই প্রকল্পগুলোর বাস্তবায়ন দেশের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ খাত যেমন কৃষি, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা, পল্লী উন্নয়ন, গৃহায়ন, সড়ক পরিবহন, বিদ্যুৎ ও স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে হবে।
প্রকল্পগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো—কৃষি মন্ত্রণালয়ের ‘পিআরও-অ্যাক্ট বাংলাদেশ: রেজিলিয়েন্স স্ট্রেন্থেনিং থ্রু এগ্রি-ফুড সিস্টেমস ট্রান্সফর্মেশন ইন কক্সবাজার’ প্রকল্প, যা স্থানীয় কৃষি ও খাদ্য ব্যবস্থার শক্তিশালীকরণে গুরুত্ব দিবে। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের ‘গ্রামীণ মাটির রাস্তার টেকসইকরণের লক্ষ্যে হেরিং বোন বন্ড করণ (২য় পর্যায়)’ প্রকল্পটি গ্রামীণ সড়ক উন্নয়নে অবদান রাখবে।
পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের অধীনে তিনটি প্রকল্প অনুমোদিত হয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে খুলনা বিভাগের পল্লী অবকাঠামো উন্নয়ন, জামালপুর শহরের নগর স্থাপত্য পুনঃসংস্কার ও সাংস্কৃতিক কেন্দ্র উন্নয়ন এবং গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের অভ্যন্তরীণ রাস্তা ও ফুটপাত নির্মাণ। এ ছাড়া গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের ‘উত্তরা লেক উন্নয়ন’ প্রকল্পও অনুমোদিত হয়েছে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জন্য অনুমোদিত প্রকল্প হলো অস্ট্রেলিয়ার ক্যানবেরায় বাংলাদেশ চ্যান্সারি ভবন নির্মাণ। সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের আওতায় ‘কিশোরগঞ্জ (বিন্নাটি)-পাকুন্দিয়া-মির্জাপুর টোক জেলা মহাসড়ক যথাযথমানে উন্নীতকরণ’ প্রকল্প অনুমোদিত হয়েছে।
শিল্প মন্ত্রণালয়ের জন্য ‘বিএসটিআই’র পদার্থ ও রসায়ন পরীক্ষণ ল্যাবরেটরির সম্প্রসারণ ও আধুনিকায়ন’ প্রকল্প এবং বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের ‘ঘোড়াশাল ৩য় ইউনিট রি-পাওয়ারিং প্রকল্প’ অনুমোদিত হয়েছে।
স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের ‘মানসিক হাসপাতাল, পাবনা’ প্রকল্পকে আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে রূপান্তর করা হবে। রেলপথ মন্ত্রণালয়ের অধীনে দুইটি প্রকল্প অনুমোদিত হয়েছে, যা বাংলাদেশের পশ্চিমাঞ্চল ও পূর্বাঞ্চলের লেভেল ক্রসিং গেইটসমূহের পুনর্বাসন ও মান উন্নয়ন সংক্রান্ত।
বৈঠকে অংশগ্রহণ করেন পরিকল্পনা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ, আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল, স্বরাষ্ট্র এবং কৃষি উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী (অব.), শিল্প এবং গৃহায়ন ও গণপূর্ত উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান, বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ, সড়ক পরিবহন ও সেতু এবং রেলপথ উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন; পানি সম্পদ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান, স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় ও যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ উপদেষ্টা নূরজাহান বেগম, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ উপদেষ্টা ফারুক ই আজম এবং পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেনসহ সংশ্লিষ্টরা।
একনেকের এই সিদ্ধান্তগুলো দেশের বিভিন্ন খাতে অবকাঠামোগত উন্নয়ন, সেবার গুণগত মান বৃদ্ধি এবং স্থায়ী উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। এসব প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে দেশের অর্থনীতি এবং জনসেবার মানে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন আসার প্রত্যাশা করা হচ্ছে।