টানা আট দিন কর্মবিরতির পর আজ বুধবার (২২ অক্টোবর) থেকে দেশের সব বেসরকারি এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পাঠদান কার্যক্রম স্বাভাবিকভাবে শুরু হয়েছে। বাড়িভাড়া ভাতা বৃদ্ধিসহ কয়েকটি দাবিতে চলমান আন্দোলন সরকার আংশিকভাবে মেনে নেওয়ায় শিক্ষক নেতারা মঙ্গলবার আন্দোলন স্থগিতের ঘোষণা দেন।
জাতীয়করণ প্রত্যাশী এমপিও শিক্ষক-কর্মচারী জোটের সদস্যসচিব অধ্যক্ষ দেলোয়ার হোসেন আজিজী মঙ্গলবার দুপুরে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, “আমরা আমাদের যৌক্তিক দাবি আদায়ে আন্দোলন করেছি। সরকার আমাদের দাবির আংশিক প্রতিফলন ঘটিয়েছে। সে কারণে কর্মসূচি স্থগিত করছি এবং আগামীকাল (বুধবার) থেকেই শিক্ষকরা শ্রেণিকক্ষে ফিরে যাবেন।”
তিনি জানান, কর্মবিরতির কারণে শিক্ষার্থীদের যে পাঠদান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, তা পূরণে শিক্ষকরা অতিরিক্ত ক্লাস নেবেন। “বার্ষিক পরীক্ষার আগ পর্যন্ত প্রতি শনিবার অতিরিক্ত ক্লাস নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি,” বলেন অধ্যক্ষ আজিজী।
গত ১২ অক্টোবর থেকে দেশের বিভিন্ন স্থানে বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর শিক্ষক-কর্মচারীরা বাড়িভাড়া ভাতা ২০ শতাংশে উন্নীতকরণ, কর্মচারীদের উৎসব ভাতা ৭৫ শতাংশে বৃদ্ধি এবং চিকিৎসা ভাতা ১ হাজার ৫০০ টাকায় উন্নীত করার দাবিতে লাগাতার কর্মসূচি পালন করে আসছিলেন।
আন্দোলনের অংশ হিসেবে শিক্ষক-কর্মচারীরা জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে অবস্থান, কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে মানববন্ধন, সচিবালয় অভিমুখে পদযাত্রা এবং শাহবাগ মোড় অবরোধসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করেন। শিক্ষকদের আন্দোলনের ফলে দেশের বিভিন্ন স্থানে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে পাঠদান কার্যক্রম প্রায় সম্পূর্ণরূপে বন্ধ হয়ে যায়।
দীর্ঘ আলোচনার পর গতকাল (২১ অক্টোবর) অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ থেকে একটি প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়, যেখানে এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের বাড়িভাড়া ভাতা ধাপে ধাপে বাড়ানোর সিদ্ধান্ত জানানো হয়। প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী, বর্তমান বাজেট বাস্তবতার আলোকে বাড়িভাড়া ভাতা দুই ধাপে মোট ১৫ শতাংশে উন্নীত করা হবে।
প্রথম ধাপে, ২০২৫ সালের ১ নভেম্বর থেকে মূল বেতনের ৭.৫ শতাংশ (সর্বনিম্ন ২ হাজার টাকা) হারে বাড়িভাড়া ভাতা দেওয়া হবে।
দ্বিতীয় ধাপে, ২০২৬ সালের ১ জুলাই থেকে তা বাড়িয়ে মোট ১৫ শতাংশ কার্যকর করা হবে।
সরকারের এই সিদ্ধান্ত শিক্ষক সমাজে মিশ্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করলেও শিক্ষক নেতারা আন্দোলন স্থগিতের বিষয়ে ঐকমত্যে পৌঁছান এবং সরকারের সিদ্ধান্তকে যৌক্তিক আন্দোলনের একটি সফলতা হিসেবে আখ্যা দেন।
শিক্ষক নেতারা জানান, আন্দোলনের পুরোপুরি সমাপ্তি ঘটেনি, বরং এটি আপাতত স্থগিত রাখা হয়েছে। আন্দোলনের পূর্ণ দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত তারা প্রয়োজন অনুযায়ী ভবিষ্যতে পুনরায় কর্মসূচি দিতে পারেন বলেও ইঙ্গিত দেন।
অধ্যক্ষ দেলোয়ার হোসেন আজিজী বলেন, “আমরা আমাদের শিক্ষকদের স্বার্থে সবসময় রাজপথে থেকেছি। সরকার যদি পুনরায় উদাসীনতা দেখায়, তাহলে আমরা আবারও শান্তিপূর্ণভাবে আমাদের দাবি জানাতে প্রস্তুত থাকব।”
শিক্ষকদের আন্দোলনের ফলে দেশের অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ক্লাস বন্ধ থাকায় শিক্ষার্থীদের প্রস্তুতিতে বিঘ্ন ঘটে। বিশেষ করে এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার পূর্ববর্তী সময় হওয়ায় অভিভাবকরাও উদ্বেগ প্রকাশ করেন। আন্দোলন প্রত্যাহারের ঘোষণার পর শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মধ্যে স্বস্তি ফিরে এসেছে।
অন্যদিকে, শিক্ষাবিদরা মনে করছেন, এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের দীর্ঘদিনের ভাতাসংক্রান্ত সমস্যাগুলো একটি সমন্বিত নীতির মাধ্যমে সমাধান না করা হলে এই ধরনের আন্দোলন ভবিষ্যতেও পুনরাবৃত্তি হতে পারে।
সরকারের সদ্য ঘোষিত প্রজ্ঞাপন ও আন্দোলন স্থগিতের সিদ্ধান্তের ফলে দেশের শিক্ষা কার্যক্রমে স্বাভাবিকতা ফিরে এসেছে। তবে শিক্ষক সমাজের দাবি আংশিক পূরণ হওয়ায় এ বিষয়ে আরও আলোচনার প্রয়োজন রয়েছে বলে বিশ্লেষকরা মনে করছেন। একটি টেকসই এবং সমন্বিত শিক্ষানীতি বাস্তবায়নই পারে এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের দীর্ঘদিনের সমস্যার স্থায়ী সমাধান আনতে।