২০২৩ সালের অক্টোবরে ইসরায়েলি সামরিক অভিযান শুরুর পর থেকে গাজা উপত্যকা ও পশ্চিম তীরে ২০ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি শিক্ষার্থী নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে ফিলিস্তিনের শিক্ষা মন্ত্রণালয়। একই সময়ে ধ্বংস হয়েছে শতাধিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, আহত হয়েছেন কয়েক হাজার শিক্ষক ও শিক্ষার্থী।
তুরস্কের রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা আনাদোলুর এক প্রতিবেদনে মঙ্গলবার (২১ অক্টোবর) এই তথ্য প্রকাশ করা হয়। প্রতিবেদনে বলা হয়, চলমান সংঘাতে গাজা ও পশ্চিম তীরের শিক্ষা খাত ভয়াবহ বিপর্যয়ের মুখে পড়েছে।
ফিলিস্তিন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, ইসরায়েলি হামলায় শুধুমাত্র গাজা অঞ্চলে ১৯,৯১০ জন এবং পশ্চিম তীরে ১৪৮ জন শিক্ষার্থী নিহত হয়েছেন।
এছাড়া, গাজায় আরও ৩০,০৯৭ জন শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন এবং পশ্চিম তীরে আহত হয়েছেন ১,০৪২ জন শিক্ষার্থী।
শুধু শিক্ষার্থী নয়, হামলার শিকার হয়েছেন শিক্ষকদের বড় একটি অংশও। মন্ত্রণালয় জানায়, এ পর্যন্ত গাজা ও পশ্চিম তীরে মোট ১,০৩৭ জন শিক্ষক ও শিক্ষা প্রশাসনের কর্মী নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন আরও ৪,৭৪০ জন, এবং অন্তত ২২৮ জন শিক্ষক ও কর্মকর্তা গ্রেপ্তার হয়েছেন ইসরায়েলি বাহিনীর হাতে।
ইসরায়েলি বিমান ও স্থল হামলায় গাজা উপত্যকায় ধ্বংস হয়েছে ১৭৯টি স্কুল ও ৬৩টি বিশ্ববিদ্যালয় ভবন। এ ছাড়া ১১৮টি সরকারি স্কুল এবং জাতিসংঘের সহায়তায় পরিচালিত ১০০টি স্কুল আংশিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ভাষ্য অনুযায়ী, গাজার অন্তত ৩০টি স্কুলকে পুরোপুরি নিবন্ধন তালিকা থেকে বাদ দিতে হয়েছে, কারণ সেগুলোর ভবন এবং অবকাঠামো সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়ে গেছে, পুনর্নির্মাণের অবস্থা নেই।
পশ্চিম তীরেও পরিস্থিতি উদ্বেগজনক। হেবরন ও তুবাসে দুটি স্কুল পুরোপুরি ধ্বংস হয়েছে এবং বারবার অভিযানের মুখে আরও আটটি বিশ্ববিদ্যালয় আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে জানায় মন্ত্রণালয়।
ফিলিস্তিনি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের দেওয়া পরিসংখ্যান অনুসারে, ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া ইসরায়েলি সামরিক অভিযানে গাজায় মোট নিহতের সংখ্যা ৬৮,২০০ জন ছাড়িয়েছে। আহত হয়েছেন প্রায় ১,৭০,৩০০ জন।
অধিকৃত পশ্চিম তীরেও সহিংসতা বেড়েছে উদ্বেগজনক হারে। সেখানে একই সময়ে অন্তত ১,০৫৬ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন, আহত হয়েছেন প্রায় ১০,৩০০ জন এবং গ্রেপ্তার করা হয়েছে ২০ হাজারেরও বেশি মানুষকে।
গ্রেপ্তারদের মধ্যে রয়েছে ১,৬০০ জন শিশু, যাদের অনেকেই এখনো বিচার ছাড়া আটক অবস্থায় রয়েছেন বলে মানবাধিকার সংস্থাগুলো অভিযোগ করেছে।
জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলো গাজায় চলমান সংঘর্ষে বেসামরিক নাগরিক এবং শিক্ষা খাতের উপর হামলা নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। জাতিসংঘের একাধিক প্রতিবেদন ও বিশেষজ্ঞরা ইসরায়েলের সামরিক অভিযানে শিশু, শিক্ষক এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে লক্ষ্য করার ঘটনাকে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইনের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন হিসেবে উল্লেখ করেছেন।
বিশ্লেষকরা বলছেন, এই দীর্ঘমেয়াদি আগ্রাসনের ফলে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম শিক্ষাবঞ্চিত হচ্ছে, যা শুধু ফিলিস্তিনি সমাজ নয়, গোটা অঞ্চলের স্থিতিশীলতার জন্য হুমকিস্বরূপ।
গাজা ও পশ্চিম তীরে চলমান সংঘাতে শিক্ষাখাতে যে বিপর্যয় নেমে এসেছে, তা শুধুমাত্র ভবন ধ্বংস বা শিক্ষার্থী হতাহত হওয়ার মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়—বরং এটি একটি প্রজন্মের শিক্ষা, মানসিক স্বাস্থ্য ও ভবিষ্যৎ জীবনের ওপর দীর্ঘস্থায়ী প্রভাব ফেলবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে ফিলিস্তিন কর্তৃপক্ষ যুদ্ধাপরাধ তদন্ত, শিক্ষা খাতের নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ এবং যুদ্ধবিধ্বস্ত অঞ্চলে জরুরি সহায়তা প্রদানের জন্য আহ্বান জানিয়েছে।