ইউক্রেনে তাৎক্ষণিক যুদ্ধবিরতির বিষয়ে রাশিয়ার অনীহার কারণে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের মধ্যে নির্ধারিত দ্বিপক্ষীয় বৈঠক অনির্দিষ্টকালের জন্য স্থগিত করা হয়েছে। মঙ্গলবার (২১ অক্টোবর) ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স হোয়াইট হাউস সূত্রের বরাতে এ তথ্য জানিয়েছে।
হোয়াইট হাউসের একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা রয়টার্সকে জানান, “রাশিয়ার সঙ্গে আসন্ন বৈঠক উপলক্ষে ইউক্রেনে যুদ্ধবিরতি চেয়ে মস্কোকে অনুরোধ করা হয়েছিল। তবে রুশ পক্ষ তাতে সম্মতি না দেওয়ায় বর্তমান প্রেক্ষাপটে বৈঠকটি অর্থবহ হবে না বলে বিবেচনা করছে হোয়াইট হাউস।”
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এবং জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা মার্কো রুবিও সম্প্রতি রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভের সঙ্গে ফোনালাপে ইউক্রেনে যুদ্ধবিরতি চেয়ে বৈঠকের প্রাক-শর্ত দেন। ল্যাভরভ তখন তাৎক্ষণিক কোনো প্রতিক্রিয়া না দিলেও পরে মস্কোর পক্ষ থেকে জানানো হয়, “সংঘাতের এই পর্যায়ে তাৎক্ষণিক যুদ্ধবিরতি বাস্তবসম্মত নয়।”
এই অবস্থানের পরিপ্রেক্ষিতে হোয়াইট হাউস প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ও পুতিনের মধ্যকার নির্ধারিত বৈঠক স্থগিতের সিদ্ধান্ত নেয়। হোয়াইট হাউসের ভাষ্যমতে, বর্তমান পরিস্থিতিতে আলোচনায় কাঙ্ক্ষিত অগ্রগতি আশা করা যাচ্ছে না।
বৈঠক স্থগিত হওয়ার বিষয়ে হোয়াইট হাউসে সাংবাদিকদের এক মতবিনিময় সভায় প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বলেন, “আমি অকারণে আলোচনায় বসতে চাইনি। যখন মনে হয়েছে সঠিক পরিবেশ নেই, তখনই বৈঠক স্থগিতের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।”
তিনি আরও বলেন, “তবে এটা কোনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নয়। পরবর্তী দুই দিনে কী ঘটে তা নজরে রাখতে হবে। বৈঠক নতুন করে নির্ধারিত হতে পারে, যদি উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি হয়।”
২০২৪ সালের নির্বাচনে বিজয়ের পর ২০২৫ সালের ২০ জানুয়ারি ট্রাম্প দ্বিতীয়বারের মতো যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ গ্রহণ করেন। শপথ অনুষ্ঠানে তিনি রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ অবসানকে নিজের প্রশাসনের অন্যতম অগ্রাধিকার হিসেবে ঘোষণা করেছিলেন।
এরপর গত দশ মাসে একাধিকবার পুতিনের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ করেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। সর্বশেষ গত ১৫ আগস্ট আলাস্কায় দুই নেতার মধ্যে একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়, যদিও তা কোনো সিদ্ধান্ত ছাড়াই শেষ হয়।
চলতি অক্টোবরের শেষ দিকে হাঙ্গেরির রাজধানী বুদাপেস্টে পুতিনের সঙ্গে ফের বৈঠকে বসার পরিকল্পনার কথা গত সপ্তাহে ট্রাম্প নিজেই ঘোষণা করেছিলেন। তবে নির্দিষ্ট দিন-তারিখ তখনো জানানো হয়নি।
বৈঠক স্থগিতের ঘোষণার পর রাশিয়ার প্রেসিডেন্টের বিনিয়োগবিষয়ক দূত কিরিল দিমিত্রিয়েভ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে জানান, মস্কো এখনো দুই দেশের মধ্যে সম্ভাব্য বৈঠকের প্রস্তুতি চালিয়ে যাচ্ছে। তার ভাষায়, “রাশিয়া সংলাপের দরজা বন্ধ করেনি। আমাদের দিক থেকে প্রস্তুতি অব্যাহত আছে।”
ইউক্রেন যুদ্ধের দুই বছর পার হলেও এখনো সংঘাত চলমান রয়েছে। পশ্চিমা দেশগুলোর সামরিক সহায়তা, রাশিয়ার আক্রমণাত্মক কৌশল এবং কূটনৈতিক অচলাবস্থার কারণে শান্তিপূর্ণ সমাধানের সম্ভাবনা ক্ষীণ হয়ে পড়েছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, বর্তমান পরিস্থিতিতে যুদ্ধবিরতির পূর্বশর্তে বৈঠকের আয়োজন দুই দেশের মধ্যে আস্থার ঘাটতি এবং কৌশলগত পার্থক্যকে তুলে ধরছে। রাশিয়া যেখানে যুদ্ধক্ষেত্রে সুবিধাজনক অবস্থান ধরে রাখার চেষ্টা করছে, যুক্তরাষ্ট্র সেখানে দ্রুত একটি রাজনৈতিক সমাধান চায়—এ দ্বৈত অবস্থানই আলোচনার পথে প্রধান বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
বর্তমানে ট্রাম্প-পুতিন বৈঠক স্থগিত হলেও উভয় পক্ষ ভবিষ্যতে আলোচনার সম্ভাবনা উড়িয়ে দেয়নি। তবে সংঘাত বন্ধের জন্য নিরপেক্ষ মধ্যস্থতা, আন্তর্জাতিক চাপ এবং বাস্তবসম্মত সমাধান ছাড়া এই সংকট সমাধানে তাৎপর্যপূর্ণ অগ্রগতি আসার সম্ভাবনা কম বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।