ঢাকা মেট্রোরেলের যাত্রীদের জন্য নতুন এক ভাড়ার নিয়ম কার্যকর করা হয়েছে, যা অনুযায়ী, কোনো যাত্রী যদি স্টেশন থেকে প্রবেশের পর যাত্রা না করে বেরিয়ে যান, তবে তাকে ১০০ টাকা ভাড়া দিতে হবে। পূর্বে পাঁচ মিনিটের মধ্যে স্টেশন থেকে বেরিয়ে গেলে ভাড়া কাটা হতো না, কিন্তু নতুন নিয়ম অনুযায়ী যাত্রীদের জন্য এই সুবিধা আর থাকছে না। সোমবার (২০ অক্টোবর) থেকে এই নিয়ম কার্যকর করা হয়েছে, এবং স্টেশনগুলোতে এর জন্য নোটিশও টাঙানো হয়েছে।
ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড (ডিএমটিসিএল) কর্তৃক প্রকাশিত এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, একই স্টেশন থেকে এক্সিট করলে ভাড়া কাটা হবে। পূর্বে যাত্রীরা যদি পাঁচ মিনিটের মধ্যে এক্সিট করতেন, তবে তারা কোনো ভাড়া দিতে হতো না। কিন্তু বর্তমানে এই সময়সীমা আর প্রযোজ্য নয়। স্টেশনে প্রবেশ করার পর যদি কোনো যাত্রী ভ্রমণ না করে সোজা বেরিয়ে যান, তাহলে তাকে ১০০ টাকা ভাড়া দিতে হবে।
কর্মকর্তাদের মতে, এখন থেকে স্টেশন থেকে এক্সিট নেওয়ার সময় ফ্রি এক্সিট আর সম্ভব হবে না। এ বিষয়ে কারওয়ান বাজার স্টেশনের এক কর্মকর্তা জানান, “এটি নতুন নিয়ম এবং গতকাল থেকে কার্যকর হয়েছে।” এর মাধ্যমে মেট্রোরেল সিস্টেমে সঠিক ভাড়া আদায়ের ব্যবস্থা নিশ্চিত করা হবে এবং অপ্রত্যাশিত প্রবেশ ও বের হওয়ার ঘটনা কমবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
ডিএমটিসিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফারুক আহমেদ এই নতুন নিয়ম সম্পর্কে অবহিত নন বলে মন্তব্য করেছেন। তিনি জানান, “আমি এ বিষয়ে কোনো তথ্য জানি না। তবে বর্তমানে মেট্রোরেলের নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে আরও শক্তিশালী করার জন্য কাজ চলছে।”
নতুন ভাড়া নিয়ম নিয়ে মেট্রোরেলের যাত্রীদের মধ্যে অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ‘ঢাকা মেট্রোরেল হেল্পলাইন’ নামের গ্রুপে এই নিয়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া প্রকাশ করেছেন যাত্রীরা। একাধিক পোস্টে হাজার হাজার যাত্রী তাদের মতামত জানিয়ে বলছেন, যদি কোনো যাত্রী জরুরি প্রয়োজনে অথবা হঠাৎ অসুস্থ হয়ে স্টেশন থেকে বেরিয়ে আসেন, সেক্ষেত্রে ১০০ টাকা ভাড়া কাটা অন্যায়। তারা দাবি করেছেন, ভাড়া ফাঁকি রোধের জন্য ন্যূনতম কোনো পরিমাণ ভাড়া কাটা যেতে পারে, তবে একযোগভাবে সব যাত্রীর কাছ থেকে একই পরিমাণ ১০০ টাকা নেওয়া অযৌক্তিক এবং অত্যধিক মনে হচ্ছে।
নতুন নিয়মের উদ্দেশ্য মূলত মেট্রোরেল ব্যবস্থায় ভাড়া ফাঁকি রোধ করা। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ঢাকায় যাত্রীদের প্রবেশ ও বের হওয়ার বিষয়ে অনিয়ম এবং দিকভ্রান্তির কারণে ভাড়া আদায়ের সঠিক প্রক্রিয়া নিশ্চিত করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তবে যাত্রীদের অসন্তোষের কারণ হতে পারে, ভাড়া প্রদানের এই নিয়মটি কিছু পরিস্থিতিতে কঠোর মনে হতে পারে। এমনকি যাদের জরুরি পরিস্থিতি বা অসুস্থতার কারণে স্টেশন থেকে দ্রুত বেরিয়ে আসার প্রয়োজন হতে পারে, তাদের জন্য এটি আর্থিকভাবে চাপ সৃষ্টি করতে পারে।
ডিএমটিসিএল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, মেট্রোরেলের নিরাপত্তা ও ব্যবস্থাপনার উন্নতি ঘটানোর জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। প্রতিষ্ঠানটি আশা করছে, নতুন নিয়মটি কিছু সময় পর যাত্রীদের কাছে স্বাভাবিক হয়ে যাবে এবং সিস্টেমে আরও স্বচ্ছতা ও শৃঙ্খলা ফিরবে। এছাড়া, যাত্রীদের অভ্যস্ত হওয়ার জন্য সুষ্ঠু প্রজ্ঞাপন এবং পরবর্তী সময়ের মধ্যে নির্দেশনা প্রদান করা হবে।
এদিকে, মেট্রোরেলের যাত্রীদের জন্য আরও কিছু সুবিধা ও পরিকল্পনা আসতে পারে, যেমন- অনলাইন টিকিটিং ব্যবস্থা আরো সহজীকরণ, এবং যাত্রীদের সুবিধার্থে ভাড়ার স্বচ্ছতা বজায় রাখার চেষ্টা।
ঢাকা মেট্রোরেলের নতুন ভাড়া নিয়মটি বেশ কিছু যাত্রীদের জন্য অস্বস্তির কারণ হলেও, এটি মেট্রো সিস্টেমে সঠিকভাবে ভাড়া আদায়ের এবং নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করার একটি পদক্ষেপ হিসেবে দেখা যেতে পারে। যাত্রীদের থেকে পাওয়া প্রতিক্রিয়ার ভিত্তিতে যদি কোনো পরিবর্তন আনা হয়, তবে সিস্টেম আরও উন্নত ও জনগণের চাহিদা অনুযায়ী কার্যকর হতে পারে।