যুক্তরাষ্ট্রের ভাইস প্রেসিডেন্ট জে ডি ভ্যান্স সম্প্রতি স্বীকার করেছেন যে, ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকার শাসন ক্ষমতা কার হাতে থাকবে, তা এখনো স্পষ্ট নয়। তবে তিনি বলেন, এই মুহূর্তে গাজার পুনর্গঠন এবং তার অসামরিকীকরণে যুক্তরাষ্ট্রের গুরুত্বারোপ করার বিষয়ে মনোযোগ দিচ্ছে ওয়াশিংটন।
মঙ্গলবার, ২০ অক্টোবর ২০২৫ তারিখে যুক্তরাষ্ট্রের একটি উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধি দল ইসরায়েল সফরে পৌঁছেছে। এই দলের নেতৃত্ব দেন জে ডি ভ্যান্স, এবং তার সঙ্গে ছিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ এবং ট্রাম্পের জামাতা জ্যারেড কুশনার। ইসরায়েলের রাজধানী জেরুজালেমে অনুষ্ঠিত এক সংবাদ সম্মেলনে ভ্যান্স বলেন, “গাজায় যুদ্ধবিরতি নিয়ে আমরা যা প্রত্যাশা করেছিলাম, বাস্তবে পরিস্থিতি তার চেয়ে ভালো। আমরা আশা করছি যে, এই যুদ্ধবিরতির মাধ্যমে ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনের জনগণ গত দুই বছরের সংঘাতের স্মৃতি পেছনে ফেলে এগিয়ে যেতে পারবে।”
গাজার ভবিষ্যত শাসন ব্যবস্থার প্রশ্নে সাংবাদিকদের জিজ্ঞাসার উত্তরে, ভ্যান্স বলেন, “এ প্রশ্নের উত্তর আমি জানি না। তবে এখন আমাদের প্রয়োজন গাজাকে পুনর্গঠন করা এবং এটি নিশ্চিত করা যে, গাজা ভবিষ্যতে কখনো ইসরায়েলের নিরাপত্তা এবং স্থিতিশীলতার জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়াবে না।”
তিনি আরও বলেন, বর্তমানে গাজার শাসন ক্ষমতা নিয়ে কোনো নির্দিষ্ট অবস্থান নেয়া যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে সম্ভব নয়, তবে আপাতত তাদের মূল লক্ষ্য গাজার পুনর্গঠন এবং মানবিক সহায়তা প্রদান।
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর, গাজা থেকে ইসরায়েলের ভূখণ্ডে হামলা চালায় হামাস, যা শতাধিক মানুষের প্রাণ নেয় এবং ২৫০ জনকে অপহরণ করে গাজায় নিয়ে যায়। পরের দিন, ৮ অক্টোবর থেকে ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) গাজায় অভিযান শুরু করে, যার ফলে প্রায় ৬৭ হাজার ফিলিস্তিনি প্রাণ হারায় এবং ১ লাখ ৭০ হাজারেরও বেশি আহত হন।
২০২৩ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর, প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প গাজায় যুদ্ধবিরতি সংক্রান্ত একটি পরিকল্পনা প্রস্তাব করেন। ওই পরিকল্পনায় হামাস ও ইসরায়েল উভয়েই সম্মতি জানায় এবং ১০ অক্টোবর থেকে যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয়। ট্রাম্পের প্রস্তাবিত পরিকল্পনায় ২০টি পয়েন্ট ছিল, যার মধ্যে একটি ছিল গাজায় একটি অরাজনৈতিক টেকনোক্র্যাট সরকার গঠন করা। এই সরকারের অধীনে গাজার যাবতীয় কার্যক্রম পরিচালিত হবে।
ট্রাম্পের প্রস্তাব অনুযায়ী, যুদ্ধবিরতির পর একটি উচ্চপর্যায়ের কমিটি গঠন করা হবে, যার নেতৃত্ব দেবেন তিনি নিজে এবং সাবেক ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী টনি ব্লেয়ার। এই কমিটি গাজায় একটি টেকনোক্র্যাট সরকার গঠন করবে, যা গাজার প্রশাসনিক এবং মানবিক কার্যক্রম পরিচালনা করবে।
ট্রাম্পের পরিকল্পনা অনুযায়ী, হামাস এবং ফাতাহ উভয়েই টেকনোক্র্যাট সরকারের অংশ হতে ইচ্ছা প্রকাশ করেছে। তবে, ফাতাহ এবং হামাসের মধ্যে রাজনৈতিক মতাদর্শের বিপরীততা রয়েছে এবং দীর্ঘকাল ধরেই তারা একে অপরের প্রতি শত্রুতা প্রকাশ করেছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে, একে অপরের মধ্যে সমন্বয় এবং সহযোগিতা কঠিন হতে পারে।
গাজার ভবিষ্যত শাসন ব্যবস্থা এবং পুনর্গঠন বিষয়ক এই প্রচেষ্টা অস্বীকার করার উপায় নেই যে, এটি এক বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াবে। হামাস এবং ফাতাহ-এর মধ্যে গভীর বিরোধের কারণে, গাজার রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা প্রতিষ্ঠা করতে অনেক সময় এবং প্রচেষ্টা প্রয়োজন হতে পারে। তবে, যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে গাজার পুনর্গঠন এবং অসামরিকীকরণ প্রক্রিয়া কার্যকর করতে প্রয়োজনীয় সহায়তা প্রদান করা হবে বলে জানানো হয়েছে।
এদিকে, বিশ্বের বিভিন্ন দেশ এবং আন্তর্জাতিক সংস্থা গাজার শান্তিপূর্ণ পুনর্গঠন এবং স্থিতিশীলতা প্রতিষ্ঠার জন্য কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার উপর জোর দিয়েছে। বিশেষত, যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়া এবং মানবিক সহায়তা বৃদ্ধি পাওয়ার মাধ্যমে গাজার জনগণের দুর্দশা লাঘব করার প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকবে।
গাজার ভবিষ্যত শাসন ব্যবস্থা এবং মানবিক সহায়তা নিশ্চিত করতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে একযোগে কাজ করতে হবে। যদিও গাজার শাসন ক্ষমতার বিষয়টি এখনো পরিষ্কার হয়নি, তবে যুক্তরাষ্ট্র এবং তার মিত্ররা দেশটির পুনর্গঠন এবং স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করার জন্য দৃঢ় প্রতিজ্ঞ। আশা করা যায়, গাজার রাজনৈতিক সংকট শিগগিরই কোনো সমাধানে পৌঁছাবে, তবে এর জন্য রাজনৈতিক সংলাপ এবং সমঝোতার প্রয়োজন।