নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা পুনর্বহাল করার দাবিতে করা আপিলের দ্বিতীয় দিনের শুনানি আজ মঙ্গলবার (২২ অক্টোবর) সকাল ৯টা ৩৫ মিনিটে শুরু হয়েছে। প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বে সাত বিচারপতির পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে এই শুনানি চলছে।
এই আপিলের শুনানিতে রিটের পক্ষে যুক্ত আছেন বিশিষ্ট আইনজীবী ড. শরীফ ভূঁইয়া, আর রাষ্ট্রপক্ষের পক্ষে শুনানি করছেন অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল ব্যারিস্টার অনীক আর হক।
গত ২১ অক্টোবর এই মামলা সংক্রান্ত প্রথম দিনের শুনানি অনুষ্ঠিত হয়, যেখানে আইনজীবীরা তাদের-নিজেদের যুক্তি উপস্থাপন করেন।
গত ২৭ আগস্ট, তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বাতিলের রায় পুনর্বিবেচনা (রিভিউ) চেয়ে করা আবেদনের শুনানি শেষে, আপিলের অনুমতি প্রদান করা হয়। এরপর, ড. বদিউল আলম মজুমদার, বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ারসহ পাঁচ ব্যক্তি এই আপিল দায়ের করেন।
১৯৯৬ সালে ত্রয়োদশ সংশোধনীর মাধ্যমে সংবিধানে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা অন্তর্ভুক্ত করা হয়, যা জাতীয় সংসদে গৃহীত হয়। তবে, ১৯৯৮ সালে ত্রয়োদশ সংশোধনীর বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে রিট দায়ের করেন অ্যাডভোকেট এম সলিম উল্লাহসহ তিন আইনজীবী। ২০০৪ সালের ৪ আগস্ট হাইকোর্ট তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থাকে বৈধ ঘোষণা করে রায় দেয়।
তবে এই রায়ের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে আপিল করা হয় এবং ২০১১ সালের ১০ মে সংখ্যাগরিষ্ঠ রায়ে ত্রয়োদশ সংশোধনী বাতিল ঘোষণা করা হয়। এর পরেই, তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বিলোপসহ পঞ্চদশ সংশোধনী আইন পাস করা হয় এবং ২০১১ সালের ৩ জুলাই গেজেট আকারে প্রকাশ করা হয়।
২০২৪ সালের ৫ আগস্ট, নতুন সরকারের অধীনে এই রায় পুনর্বিবেচনা চেয়ে সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদারসহ পাঁচ বিশিষ্ট ব্যক্তি আবেদন করেন। এই আবেদনকারীরা হলেন তোফায়েল আহমেদ, এম হাফিজউদ্দিন খান, জোবাইরুল হক ভূঁইয়া এবং জাহরা রহমান।
এছাড়া, ১৬ অক্টোবর বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর আপিল বিভাগের রায় পুনর্বিবেচনা চেয়ে আবেদন করেন। এর এক বছর আগে, ২৩ অক্টোবর জামায়াতে ইসলামী সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ারও একই দাবিতে রিভিউ আবেদন করেছিলেন।
এদিকে, গত বছর নওগাঁর রানীনগরের নারায়ণপাড়ার বাসিন্দা বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. মোফাজ্জল হোসেনও আপিল বিভাগের রায় পুনর্বিবেচনা চেয়ে আবেদন করেন।
আজকের শুনানির পরবর্তী পদক্ষেপ কী হবে তা আদালতের রায় এবং আইনজীবীদের যুক্তি-তর্কের ভিত্তিতে নির্ধারিত হবে। তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা পুনর্বহাল বা না করার বিষয়ে আদালতের সিদ্ধান্ত বাংলাদেশের রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলতে পারে, বিশেষ করে আসন্ন নির্বাচনের প্রেক্ষাপটে।
এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ আইনগত প্রক্রিয়া, যেখানে দেশের রাজনীতির ভবিষ্যত নির্ধারণে আদালতের ভূমিকা বড় হতে পারে।