ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে ফোনে কথা বলেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। এই আলোচনায় বাণিজ্য সম্পর্ক এবং রাশিয়া থেকে তেল আমদানি সীমিত করার বিষয়ে প্রধানত আলোচনা হয়েছে বলে জানিয়েছেন ট্রাম্প। তিনি দাবি করেছেন, মোদি তাকে আশ্বস্ত করেছেন যে, ভারত রাশিয়া থেকে তেল কেনা সীমিত করবে।
মঙ্গলবার হোয়াইট হাউসে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। তিনি জানান, মোদির সঙ্গে দীর্ঘ আলোচনা হয়েছে, তবে আলোচনার বড় অংশ জুড়ে ছিল বাণিজ্য এবং জ্বালানি সম্পর্কিত বিষয়। ট্রাম্প বলেন, “আমরা অনেক বিষয়ে কথা বলেছি, তবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ছিল বাণিজ্য সম্পর্ক। এছাড়া, ভারত রাশিয়া থেকে তেল কেনার ব্যাপারে কিছু সিদ্ধান্ত নিয়েছে।”
ট্রাম্প আরও বলেন, “মোদি আমাকে আশ্বস্ত করেছেন যে ভারত রাশিয়া থেকে খুব বেশি তেল কিনবে না, এবং তিনি চান যুদ্ধ দ্রুত শেষ হোক। আমি একইভাবে চাই।”
বর্তমানে রাশিয়ার তেলের সবচেয়ে বড় দুটি ক্রেতা দেশ হলো ভারত ও চীন। এই দুই দেশের জন্যই রাশিয়ার তেল আয়ের একটি বড় অংশ আসে, বিশেষ করে ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর থেকে।
গত কয়েক মাসে ভারত রাশিয়া থেকে তেল কেনার পরিমাণ বৃদ্ধি করেছে, যা পশ্চিমা দেশগুলোর উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ট্রাম্প প্রশাসন ভারতের প্রতি চাপ বৃদ্ধি করেছে এবং ইউক্রেন যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে রাশিয়ার ওপর কূটনৈতিক চাপ সৃষ্টি করতে চেষ্টা করছে। এই চাপের অংশ হিসেবে, ভারতীয় রপ্তানির ওপর শুল্ক আরোপের ঘোষণা দেওয়া হয়।
চলতি বছরের আগস্টে ট্রাম্প প্রশাসন ভারতীয় টেক্সটাইল, ওষুধ এবং গাড়ির যন্ত্রাংশসহ বিভিন্ন রপ্তানিপণ্যের ওপর শুল্ক বাড়িয়ে ৫০ শতাংশ করেছে। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প জানিয়েছেন, যদি ভারত রাশিয়া থেকে তেল আমদানি সীমিত না করে, তবে এই শুল্ক অপরিবর্তিত থাকবে অথবা আরও বাড়ানো হতে পারে।
দুদিন আগেই ট্রাম্প ভারতকে হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছিলেন, যদি ভারত রাশিয়া থেকে তেল কেনা বন্ধ না করে, তাহলে ভারতীয় পণ্যের ওপর “বিপুল পরিমাণ শুল্ক” আরোপ করা হবে। যদিও ভারত রাশিয়া থেকে ডিসকাউন্টে তেল কেনার পরিমাণ বৃদ্ধি করেছে, তবে সরকার এখনও এ ব্যাপারে তার অবস্থান স্পষ্ট করেনি।
এদিকে, ভারতের কাছে রাশিয়া থেকে তেল আমদানির সিদ্ধান্ত অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এটি তাদের শক্তিশালী শক্তি চাহিদা পূরণ করতে সহায়তা করে এবং তাদের অর্থনীতির জন্য একটি বড় উৎস। অন্যদিকে, পশ্চিমি দেশগুলো বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং অন্যান্য দেশের চাপও বাড়ছে, যাতে তারা রাশিয়া থেকে তেল কেনা কমিয়ে দেয়।
তবে, ট্রাম্প জানিয়েছেন যে এই আলোচনা শুধু তেল সম্পর্কিত নয়, বাণিজ্য সম্পর্কের উন্নয়নের জন্যও ছিল। তিনি বলেন, “আমরা ভারতীয় বাজারে আরও বাণিজ্যিক সুযোগ সৃষ্টির জন্য বিভিন্ন উপায় নিয়ে আলোচনা করেছি। এটি আমাদের দুই দেশের জন্যই লাভজনক হতে পারে।”
ট্রাম্পের এই মন্তব্যে পরিষ্কারভাবে জানানো হয়েছে যে, মার্কিন প্রশাসন ভারতের সঙ্গে বাণিজ্য সম্পর্ক আরও শক্তিশালী করতে চায়। তবে, রাশিয়া থেকে তেল কেনার বিষয়টি এখনও প্রধান বিতর্কের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে, যা দুই দেশের সম্পর্কের ওপর গভীর প্রভাব ফেলতে পারে।
মোদি ও ট্রাম্পের ফোনালাপ থেকে পরিষ্কার হয়েছে যে, ভারতের রাশিয়া থেকে তেল কেনার সিদ্ধান্ত এবং বাণিজ্যিক সম্পর্ক দুই দেশের মধ্যে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। যদিও মোদি ট্রাম্পকে আশ্বস্ত করেছেন যে তেল কেনা সীমিত করা হবে, তবে ভারত এই বিষয়ে স্পষ্ট অবস্থান নেবে কিনা, তা সময়ের সঙ্গে স্পষ্ট হবে।