আগামী ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ নির্বাচনের একটি হিসেবে চিহ্নিত করেছেন নির্বাচন কমিশনাররা। বুধবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের (ইউএনও) উদ্দেশ্যে দেওয়া এক বক্তব্যে, তাঁরা ভোটগ্রহণ প্রক্রিয়া সুষ্ঠু ও অবাধ করতে প্রস্তুত থাকার পাশাপাশি নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘনকারী কোনো পক্ষকেই ছাড় না দেওয়ার নির্দেশ দেন।
বুধবার (২২ অক্টোবর) আগারগাঁওয়ে অনুষ্ঠিত নির্বাচন ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত একটি প্রশিক্ষণ সভায় অংশগ্রহণ করেন নির্বাচন কমিশনার আনোয়ারুল ইসলাম সরকার এবং আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ। নির্বাচনী কর্মকর্তাদের উদ্দেশ্যে তারা বলেন, আসন্ন সংসদ নির্বাচন বাংলাদেশের ইতিহাসে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ এবং পরিণতিযুক্ত (কনসিকন্সিয়াল) হবে, এবং এর জন্য ইউএনওদের সতর্ক এবং প্রস্তুত থাকতে হবে।
ইসি আনোয়ারুল ইসলাম সরকার তাদের বলেন, ‘‘এটি এমন একটি নির্বাচন যা দেশের ভবিষ্যতের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আপনাদের কাজ হবে জনগণের আস্থা অর্জন করা, তাই কোনোভাবেই রাজনৈতিক পক্ষপাতিত্ব করা যাবে না।’’ তিনি আরও যোগ করেন, ‘‘নির্বাচন পরিচালনা করতে গিয়ে যদি আপনি নিজের সততা ও দায়িত্ববোধ না দেখাতে পারেন, তাহলে আপনার কাজের উদ্দেশ্য সঠিক হবে না।’’
ইসি সানাউল্লাহ বলেন, ‘‘অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশ নিশ্চিত করতে ইউএনওদের এখন থেকেই প্রস্তুত থাকতে হবে। কোনওভাবেই রাজনৈতিক পক্ষের সঙ্গে সম্পর্ক রাখবেন না, কারণ নির্বাচন কমিশন কারও পক্ষে বা বিপক্ষে কাজ করার অনুমতি দেয় না।’’ তিনি এই নির্বাচনকে বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে ‘কনসিকন্সিয়াল’ নির্বাচনের হিসেবে উল্লেখ করে ইউএনওদের আরো সতর্ক ও দায়িত্বশীল হওয়ার আহ্বান জানান।
এছাড়া, নির্বাচন কমিশনাররা জানান, প্রশাসনের কর্মকর্তাদের মনোবল এবং সততার ওপর সরকার দৃঢ় মনোভাব পোষণ করছে। ইসি আনোয়ারুল ইসলাম সরকার বলেন, ‘‘সরকারের কাছে এই নির্বাচন একটি পরীক্ষা, যেখানে সরকারি কর্মকর্তারা তাদের সততা এবং নিষ্ঠা প্রমাণ করতে পারবেন।’’ তিনি ইউএনওদের উদ্দেশ্যে বলেন, ‘‘অস্তিত্বের প্রশ্নে কাজ করতে হবে, এবং কোনো ধরনের ভয় বা অনিশ্চয়তা আপনাদের কাজের গতিকে বাধাগ্রস্ত করতে পারবে না।’’
এ সময় আনোয়ারুল ইসলাম সরকার নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘনকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার কথা উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, ‘‘যতই চাপ আসুক না কেন, নির্বাচনের আগে যদি কেউ আচরণবিধি ভাঙে, তবে তাকে শাস্তি দেওয়া হবে।’’ এর পাশাপাশি, তিনি মোবাইল কোর্ট পরিচালনার বিষয়েও গুরুত্ব দেন এবং বলেন, ‘‘মোবাইল কোর্ট অবশ্যই নিয়মিত পরিচালনা করতে হবে এবং এর কার্যক্রমের প্রতি স্বচ্ছতা রাখতে হবে।’’
এ নির্বাচনী নির্দেশনাগুলোর মধ্যে নির্বাচন কমিশনের দৃঢ় অঙ্গীকারটি পরিষ্কারভাবে প্রতিফলিত হচ্ছে—সরকারি কর্মকর্তা বা অন্য কোনো ব্যক্তি যেন নির্বাচনে কোনো ধরনের পক্ষপাতিত্ব বা অবৈধ কার্যক্রমে যুক্ত না হন। ইউএনওদের উপর এই তীব্র নির্দেশনা, আসন্ন নির্বাচনে সরকারি কর্মকর্তাদের নিরপেক্ষ ভূমিকা রাখার জন্য তাদেরকে রাজনৈতিক প্রভাব থেকে মুক্ত থাকার কথা মনে করিয়ে দেয়।
এ ছাড়া, নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘনের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার নির্দেশনাটি ভোটারদের মধ্যে সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিত করার উদ্দেশ্যে। মোবাইল কোর্ট চালু করে নির্বাচনের আগের দিনগুলোতে প্রার্থী বা তাদের সমর্থকদের দ্বারা যে কোনো ধরনের অনিয়ম বা বিশৃঙ্খলা রোধ করার জন্য কমিশন আগেভাগে প্রস্তুতি নিচ্ছে।
এই প্রেক্ষাপটে, নির্বাচন কমিশন এবং সরকারি কর্মকর্তাদের যৌথ প্রচেষ্টা নির্বাচনের সুষ্ঠুতা বজায় রাখতে সাহায্য করবে, তবে মাঠ পর্যায়ে এর বাস্তবায়ন কতটুকু কার্যকর হবে, তা সময়ই বলে দেবে।
অতীতের নির্বাচনে বিভিন্ন সময় প্রশাসন এবং রাজনৈতিক পক্ষগুলোর মধ্যে সম্পর্কের টানাপোড়েন ঘটেছিল, তবে এবার নির্বাচন কমিশন স্পষ্ট বার্তা দিচ্ছে যে কোনো ধরনের অপ্রীতিকর পরিস্থিতি বা অনিয়মের জন্য প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের ক্ষমা নেই। ইউএনওদের সততা এবং সাহসিকতার সাথে দায়িত্ব পালন করার তাগিদ এবং আচরণবিধি লঙ্ঘনকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের উদ্যোগ গ্রহণ করায় আগামী নির্বাচনটি আরও অধিকতর সুষ্ঠু এবং নিরপেক্ষ হতে পারে বলে আশা করা যাচ্ছে।