২০০২ সালের ৩০ আগস্ট তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেতা শেখ হাসিনার গাড়িবহরে হামলার ঘটনায় দায়ের করা অস্ত্র আইন ও বিশেষ ক্ষমতা আইনের মামলায় সাতক্ষীরা বিএনপির সাবেক এমপি হাবিবুল ইসলাম হাবিবসহ ৪৪ আসামিকে খালাস দিয়েছেন হাইকোর্ট। এই মামলায় হাবিবুল ইসলাম হাবিবকে পূর্বে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছিল।
বুধবার (২২ অক্টোবর) বিচারপতি মুহাম্মদ মাহবুব উল ইসলাম এবং বিচারপতি মুবিনা আসাফের নেতৃত্বাধীন হাইকোর্ট বেঞ্চ এই রায় ঘোষণা করেন।
২০০২ সালের ৩০ আগস্ট তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেতা শেখ হাসিনা সাতক্ষীরার কলারোয়া উপজেলার চন্দনপুর ইউনিয়নে এক মুক্তিযোদ্ধার ধর্ষিতা স্ত্রীর চিকিৎসা পরিদর্শনে যান। ফেরার পথে কলারোয়া উপজেলা বিএনপি অফিসের সামনে তার গাড়িবহরে হামলা চালানো হয়। হামলার সময় শেখ হাসিনাকে লক্ষ্য করে গুলি ছোড়া হয়, বোমা বিস্ফোরণ ঘটানো হয় এবং গাড়ি ভাঙচুর করা হয়।
এ ঘটনায় তৎকালীন সময়েই হত্যাচেষ্টা, বিস্ফোরক দ্রব্য ও অস্ত্র আইনে তিনটি মামলা দায়ের করা হয়। মামলাটির তদন্ত শেষে হাবিবুল ইসলাম হাবিবসহ ৪৪ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করা হয়। তবে, বুধবার হাইকোর্টের রায়ে সব আসামিকে খালাস দেওয়া হয়েছে।
হাইকোর্টের রায়ে আদালত আসামিদের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ যথাযথ প্রমাণিত না হওয়ায় তাদের খালাস দেয়। আসামিদের পক্ষের আইনজীবী আমিনুল ইসলাম এবং রাষ্ট্রপক্ষের ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মজিবুর রহমান আদালতে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করেন।
এদিকে, মামলার রায়ের পর হাবিবুল ইসলাম হাবিবের আইনজীবী সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন। তিনি জানান, দীর্ঘ বিচারপ্রক্রিয়ার পর তাদের পক্ষে রায় এসেছে।
২০০২ সালের এই হামলা সংক্রান্ত একটি আরেকটি মামলায়, ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে হাইকোর্ট হাবিবুল ইসলাম হাবিবকে ১০ বছরের সাজা থেকে খালাস দেয়। বিচারপতি মোহাম্মদ আলী এবং বিচারপতি শেখ তাহসিন আলীর বেঞ্চ ওই মামলায় রায় দিয়েছিল।
এ রায়ের পর রাজনৈতিক মহলে বিভিন্ন প্রতিক্রিয়া উঠেছে। বিএনপি নেতারা রায়ের প্রশংসা করেছেন, তবে আওয়ামী লীগ নেতারা এই রায় নিয়ে হতাশা প্রকাশ করেছেন। বিশেষ করে, এই হামলার ঘটনায় শেখ হাসিনার জীবন বিপদের মুখে পড়েছিল, তাই রায়ের পর ক্ষোভও প্রকাশ করছেন দলের কিছু নেতারা।
এ রায় বাংলাদেশে রাজনৈতিক সহিংসতা এবং বিচারব্যবস্থার নিরপেক্ষতা নিয়ে নতুন আলোচনা সৃষ্টি করবে বলে মনে করছেন আইন বিশেষজ্ঞরা। তাদের মতে, মামলার দীর্ঘ বিচারপ্রক্রিয়া এবং আসামিদের খালাসের ঘটনা জনগণের মধ্যে অনিশ্চয়তা সৃষ্টি করতে পারে, তবে বিচার ব্যবস্থার স্বাধীনতা এবং সঠিক প্রমাণের ভিত্তিতে বিচার হওয়াই মূল বিষয় হওয়া উচিত।
এই মামলার রায় রাজনৈতিক অঙ্গনে বিভিন্ন প্রশ্ন উত্থাপন করেছে, তবে আইনগতভাবে এটি একটি বড় সিদ্ধান্ত হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে।