বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত মার্কিন নাগরিক এনায়েত করিম চৌধুরীকে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে উৎখাতে অন্য দেশের গোয়েন্দা সংস্থার এজেন্ট হিসেবে কাজ করার অভিযোগে ঢাকার রমনা মডেল থানার সন্ত্রাস বিরোধী আইনের মামলায় ৫ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত।
বুধবার (২২ অক্টোবর) ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট জি এম ফারহান ইসতিয়াকের আদালত শুনানি শেষে এ রিমান্ডের আদেশ দেন। এর আগে, এই মামলায় দুই দফায় তাকে সাত দিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়।
১৩ সেপ্টেম্বর সকালে ঢাকার মিন্টো রোডের মন্ত্রী পাড়ায় সন্দেহজনকভাবে গাড়ি চালাচ্ছিলেন এনায়েত করিম চৌধুরী। পুলিশের কাছে তাকে থামানোর পর, তিনি কোনো সন্তোষজনক জবাব দিতে পারেননি এবং তার গাড়ি থেকে দুটি আইনফোন জব্দ করা হয়। ফোন বিশ্লেষণের পর, কর্তৃপক্ষ জানতে পারে যে, তার কাছে বর্তমান সরকার ও দেশের নিরাপত্তা পরিস্থিতি নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য রয়েছে।
জিজ্ঞাসাবাদে এনায়েত করিম জানান যে, তিনি বাংলাদেশের বংশোদ্ভূত মার্কিন নাগরিক এবং একটি বিশেষ দেশের গোয়েন্দা সংস্থার চুক্তিভিত্তিক এজেন্ট। তিনি বর্তমান সরকারের প্রতি মার্কিন সরকারের হতাশা সম্পর্কে মন্তব্য করেন এবং বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে উৎখাত করে নতুন জাতীয় বা তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠন করার উদ্দেশ্যে কাজ করছেন বলে জানান।
মামলার অভিযোগে বলা হয়েছে, এনায়েত করিম চৌধুরী ৬ সেপ্টেম্বর ঢাকায় এসে সোনারগাঁও হোটেলে অবস্থান করেন এবং পরবর্তী সময়ে গুলশানে এক জায়গায় চলে যান। তিনি সেসময় বাংলাদেশ সরকারের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের সঙ্গে গোপন বৈঠক করেন এবং দেশের রাজনৈতিক নেতা ও ব্যবসায়ী মহলের সঙ্গে সম্পর্ক তৈরি করেন।
এনায়েত করিম দাবি করেছেন, আমেরিকা পরিকল্পনা করছে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা পুনঃপ্রতিষ্ঠিত করতে, যাতে সেনাবাহিনী সমর্থিত একটি নতুন জাতীয় সরকার গঠিত হয়। এর জন্য তিনি বাংলাদেশে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সরকারি কর্মকর্তাদের তথ্য সংগ্রহ করেছেন এবং তা বিদেশী গোয়েন্দা সংস্থার কাছে হস্তান্তর করেছেন।
এদিকে, মামলায় তার সহযোগী গোলাম মোস্তফা আজাদ, জাতীয় পার্টির রওশনপন্থি অংশের মহাসচিব কাজী মো. মামুনুর রশীদ, সাংবাদিক মো. আজহার আলী সরকার, এবং যুব সংহতির কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব রিফাতুল ইসলাম পাভেলকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তারা বর্তমানে কারাগারে আটক রয়েছেন।
এনায়েত করিমের ৫ দিনের রিমান্ডের আদেশে আদালত আসামির বিরুদ্ধে আনা অভিযোগের সত্যতা যাচাইয়ের জন্য তাকে আরও জিজ্ঞাসাবাদ করার অনুমতি দিয়েছে। আসামিপক্ষের আইনজীবী রিমান্ড বাতিলের জন্য জামিনের আবেদন করেছিলেন, কিন্তু আদালত সেই আবেদন নামঞ্জুর করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
এদিকে, এই মামলার তদন্ত এবং এর ভবিষ্যত প্রভাব সম্পর্কে বাংলাদেশে নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞরা সতর্কতা প্রকাশ করেছেন। তারা মনে করেন, এমন অভিযোগ এবং আন্তর্জাতিক সম্পর্কের মধ্যে এই ধরনের জটিলতা বাংলাদেশের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ হতে পারে, বিশেষ করে সরকার ও বিরোধী দলের মধ্যে রাজনৈতিক উত্তেজনা চলমান থাকলে।