বাংলাদেশের একমাত্র প্রবাল দ্বীপ সেন্টমার্টিনে পরিবেশ রক্ষা ও টেকসই পর্যটন নিশ্চিত করতে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় সম্প্রতি ১২ দফা নির্দেশনা জারি করেছে। এই উদ্যোগটি দ্বীপের পরিবেশ, জীববৈচিত্র্য এবং প্রতিবেশ রক্ষা করতে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
২০২৩ সালের ২২ অক্টোবর, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উপ-সচিব আব্দুল্লাহ আল মামুন স্বাক্ষরিত প্রজ্ঞাপনটি প্রকাশ করা হয়। এর মাধ্যমে সেন্টমার্টিন দ্বীপে পর্যটন কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণ এবং পরিবেশ সংরক্ষণের জন্য ১২টি দফা নির্দেশনা বাস্তবায়নের কথা বলা হয়েছে। কক্সবাজার জেলা পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিচালক মো. জমির উদ্দিন জানিয়েছেন, এই নির্দেশনাগুলো দ্বীপের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণের জন্য অত্যন্ত জরুরি এবং এগুলোর বাস্তবায়ন নিশ্চিত করা হবে।
নতুন নির্দেশনা অনুযায়ী, সেন্টমার্টিনে ডিসেম্বর ও জানুয়ারিতে পর্যটকদের রাত্রিযাপনের অনুমতি দেওয়া হয়েছে, তবে নভেম্বরে শুধুমাত্র দিনে ভ্রমণের অনুমতি থাকবে। ফেব্রুয়ারিতে সেন্টমার্টিনে পর্যটক যাতায়াত সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ থাকবে।
এছাড়া, সেন্টমার্টিনে পর্যটকদের জন্য আরও কিছু নতুন নিয়ম আরোপ করা হয়েছে। বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ) এখন থেকে পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন ছাড়া সেন্টমার্টিনে কোনো নৌযান চলাচলের অনুমতি দিতে পারবে না। পর্যটকদের অবশ্যই বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ডের অনুমোদিত ওয়েবসাইট থেকে অনলাইনে টিকিট সংগ্রহ করতে হবে। প্রতিটি টিকিটে ট্রাভেল পাস এবং কিউআর কোড থাকতে হবে, এবং কিউআর কোড ছাড়া টিকিট অবৈধ বলে গণ্য হবে।
এছাড়া, সেন্টমার্টিন দ্বীপে প্রতি দিন সর্বোচ্চ দুই হাজার পর্যটক প্রবেশ করতে পারবেন, যাতে দ্বীপের পরিবেশে অতিরিক্ত চাপ না পড়ে। রাতের বেলা সৈকতে আলো জ্বালানো, শব্দ সৃষ্টি, বারবিকিউ পার্টি আয়োজন, কেয়া বনে প্রবেশ, এবং সামুদ্রিক জীব বা প্রবাল সংগ্রহ কঠোরভাবে নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
দ্বীপের সৈকতে মোটরচালিত যানবাহন যেমন মোটরসাইকেল বা সি-বাইক চলাচলও সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ। এছাড়া, পলিথিন এবং একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিক সামগ্রী যেমন চিপসের প্যাকেট, প্লাস্টিক চামচ, স্ট্র, শ্যাম্পুর মিনিপ্যাক ব্যবহার থেকে পর্যটকদের বিরত থাকতে বলা হয়েছে। পর্যটকদের নিজেদের পানি ফ্লাস্ক সঙ্গে রাখার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে, যাতে প্লাস্টিকের বোতল ব্যবহার কমানো যায় এবং পরিবেশের ওপর চাপ কমে।
সরকার মনে করে, এসব নির্দেশনা বাস্তবায়নের মাধ্যমে সেন্টমার্টিন দ্বীপের নাজুক পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষিত থাকবে। এই উদ্যোগটি দ্বীপটিকে একটি পরিবেশবান্ধব পর্যটনের আদর্শ গন্তব্য হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে সহায়ক হবে। পাশাপাশি, সেন্টমার্টিন দ্বীপের সঠিকভাবে সংরক্ষণ এবং দায়িত্বশীল পর্যটন নিশ্চিত করা হলে এটি ভবিষ্যতে টেকসই পর্যটন শিল্পের একটি গুরুত্বপূর্ণ উদাহরণ হতে পারে।
এই পদক্ষেপটি স্থানীয় জনগণের জন্যও সুবিধাজনক হবে, কারণ এটি দ্বীপের পরিবেশ রক্ষা করতে সাহায্য করবে এবং স্থানীয় সম্প্রদায়ের জন্য নতুন সুযোগ তৈরি করবে। পরিবেশ সংরক্ষণ এবং টেকসই পর্যটন ব্যবস্থার উন্নয়ন দেশের পর্যটন খাতের জন্য একটি ইতিবাচক দৃষ্টান্ত স্থাপন করবে।
সেন্টমার্টিনে পরিবেশবান্ধব পর্যটন নিশ্চিত করতে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের ১২ দফা নির্দেশনা দ্বীপটির পরিবেশ রক্ষায় একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ হিসেবে দেখা হচ্ছে। এটি সেন্টমার্টিনকে একটি পরিবেশবান্ধব পর্যটন গন্তব্য হিসেবে বিশ্বে পরিচিত করার পথে একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক হতে পারে।