গাজার প্রশাসন মঙ্গলবার (২২ অক্টোবর) জানিয়েছে, ইসরায়েল তাদের কাছে ৩০ জন ফিলিস্তিনির মরদেহ ফেরত দিয়েছে। এই পদক্ষেপটি যুদ্ধবিরতি চুক্তির একটি অংশ হিসেবে নেওয়া হয়েছে, যা ১০ অক্টোবর থেকে কার্যকর হয়েছে।
গত ২৯ সেপ্টেম্বর, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প গাজা সংকট সমাধানের জন্য একটি পরিকল্পনা প্রস্তাব করেন, যার মধ্যে যুদ্ধবিরতি, মানবিক সহায়তা এবং বন্দী বিনিময়ের শর্ত ছিল। হামাস এবং ইসরায়েল উক্ত পরিকল্পনায় সম্মতি জানিয়ে ১০ অক্টোবর থেকে যুদ্ধবিরতি শুরু করে। চুক্তির এক পয়েন্টে বলা হয়েছিল, গাজায় আটক সব জীবিত ইসরায়েলি জিম্মি মুক্তি পাবে এবং মৃত সকল জিম্মির মরদেহও ফেরত দেওয়া হবে। বিনিময়ে, ইসরায়েল তাদের কারাগারে আটক কিছু ফিলিস্তিনিকে মুক্তি দেবে।
ইসরায়েল, ট্রাম্পের পরিকল্পনা অনুযায়ী, প্রথমে ১৫ জন মৃত ইসরায়েলি জিম্মির মরদেহ ফেরত দেয়। এর পরপরই, ১৩ অক্টোবর জীবিত ইসরায়েলি জিম্মিদের মুক্তি দেওয়া হয় এবং মৃতদের মরদেহ হস্তান্তরের প্রক্রিয়া শুরু হয়। গাজার কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ১০ অক্টোবর যুদ্ধবিরতি শুরু হওয়ার পর থেকে এ পর্যন্ত মোট ১৯৫ জন ফিলিস্তিনির মরদেহ ফেরত দিয়েছে ইসরায়েল।
মঙ্গলবার, দুটি মৃত ইসরায়েলি জিম্মির মরদেহ ফেরত দেওয়ার পর, চুক্তির শর্ত অনুযায়ী, ৩০ জন ফিলিস্তিনির মরদেহ ইসরায়েল ফেরত দিয়েছে। গাজার প্রশাসন জানিয়েছে, বাকী ১৩ মরদেহও ফেরত দেওয়া হবে।
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর, হামাস ইসরায়েলের বিরুদ্ধে এক ভয়াবহ হামলা চালায়, যার ফলে ১,২০০ জন ইসরায়েলি নিহত হয় এবং ২৫০ জনকে জিম্মি করে গাজায় নিয়ে যায়। এর পরপরই, ইসরায়েল গাজায় সামরিক অভিযান শুরু করে, যার ফলস্বরূপ দুই বছরের মধ্যে ৬৭ হাজারেরও বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হন এবং ১ লক্ষ ৭০ হাজারের বেশি মানুষ আহত হন। এই সময়ের মধ্যে, হামাস কিছু ইসরায়েলি জিম্মিকে মুক্তি দিয়েছে এবং তারা বর্তমানে ৪৮ জন ইসরায়েলি জিম্মির মধ্যে ২০ জনকে জীবিত রাখার দাবি করেছে, বাকিরা মারা গেছে।
এদিকে, যুদ্ধবিরতির পর, জীবিত সব ইসরায়েলি জিম্মিকে মুক্তি দেওয়ার পর, মৃত জিম্মিদের মরদেহ হস্তান্তরের প্রক্রিয়া দ্রুত এগিয়ে চলছে।
এ ধরনের বন্দী ও মরদেহ বিনিময়ের মাধ্যমে, কিছুটা হলেও যুদ্ধবিরতির সময়কাল বৃদ্ধি পেতে পারে এবং মানবিক সহায়তার পথ সুগম হতে পারে। তবে, যুদ্ধের ফলে দীর্ঘদিনের ক্ষত এবং মানবিক সংকট এখনও অত্যন্ত গভীর। ফিলিস্তিনিদের জন্য এই পদক্ষেপগুলি শর্তাধীন হলেও, এটি একটি ইতিবাচক দিক হিসেবে দেখা যাচ্ছে যে, যুদ্ধের পরেও মানবিক সহায়তা এবং মর্যাদার বিষয়টি মাথায় রেখে কিছু পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।
এছাড়া, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এবং মধ্যস্থতাকারীরা আরও দীর্ঘমেয়াদি শান্তি আলোচনা এবং বন্দী বিনিময় নিয়ে কাজ করতে উৎসাহিত হচ্ছে, যা ভবিষ্যতে গাজা অঞ্চলের জন্য স্থিতিশীলতা এবং শান্তি প্রতিষ্ঠার সম্ভাবনা তৈরি করতে পারে।
ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে বন্দী এবং মরদেহ বিনিময়ের এই প্রক্রিয়া যুদ্ধবিরতির জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। তবে, এটি পুরো গাজা সংকটের সমাধান নয়, বরং একটি অস্থায়ী পদক্ষেপ যা ভবিষ্যতে আরও সুদূরপ্রসারী শান্তি আলোচনা ও সমাধানের পথ খুলতে সাহায্য করতে পারে।