মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প, রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে নির্ধারিত বৈঠক বাতিল করার সিদ্ধান্ত সম্পর্কে বিবৃতি দিয়েছেন। হোয়াইট হাউসে এক সাংবাদিক সম্মেলনে তিনি জানান, বৈঠকটি বাতিল করার পেছনে তার মনে হওয়া অস্বস্তি ছিল এবং তিনি মনে করেছিলেন যে, সেখানে কোনো ফলপ্রসূ আলোচনা সম্ভব হবে না। তবে, ভবিষ্যতে এই বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হওয়ার সম্ভাবনা রেখেছেন ট্রাম্প।
বুধবার, ২৩ অক্টোবর, মার্কিন প্রেসিডেন্ট হোয়াইট হাউসে ন্যাটো মহাসচিব মার্ক রুটের সঙ্গে যৌথ সংবাদ সম্মেলনে বলেন, “আমরা প্রেসিডেন্ট পুতিনের সঙ্গে বৈঠক বাতিল করেছি। আমার কাছে ঠিক মনে হয়নি যে, আমরা যেখানে পৌঁছাতে চাই, সেখানে পৌঁছাতে পারব। এজন্য আমি বৈঠকটি বাতিল করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। তবে ভবিষ্যতে এটি হতে পারে।”
ট্রাম্পের এই মন্তব্যের আগে, তিনি রাশিয়ার সঙ্গে আলোচনায় কোনো অগ্রগতি না হওয়া নিয়ে হতাশা প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, “সত্যি বলতে, যতবারই আমি পুতিনের সঙ্গে আলোচনা করেছি, তা ভালো ছিল, কিন্তু কোনো ফল আসেনি। আলোচনা দিয়ে কিছু অর্জন করা সম্ভব হয়নি।”
এছাড়া, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ইউক্রেনে চলমান যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে রাশিয়ার বিরুদ্ধে নতুন নিষেধাজ্ঞা আরোপের ঘোষণা দেন। রাশিয়ার তেল কোম্পানি রসনেফট এবং লুকয়েলের ওপর এই নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। ট্রাম্প বলেন, “আমার মনে হয়েছিল, এই মুহূর্তে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা উচিত। আমরা অনেক দিন ধরে অপেক্ষা করেছি।” তিনি আরও জানান, “এই নিষেধাজ্ঞাগুলি ব্যাপক, তবে আমরা আশা করি এগুলো দীর্ঘস্থায়ী হবে না। আমাদের লক্ষ্য দ্রুত যুদ্ধ বন্ধ করা।”
এর আগে, ইউক্রেন যুদ্ধের পরিস্থিতি নিয়ে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক মহলে আলোচনা হয়েছে, তবে মার্কিন প্রশাসন এবং রাশিয়ার মধ্যে সরাসরি আলোচনার কোনো কার্যকর ফল আসেনি। ট্রাম্পের এই মন্তব্যে একটি সুনির্দিষ্ট ইঙ্গিত পাওয়া যায় যে, আন্তর্জাতিক শান্তি প্রতিষ্ঠা ও যুদ্ধবিরতির লক্ষ্যে আরো কার্যকর পদক্ষেপ নিতে রাশিয়ার প্রতি চাপ অব্যাহত থাকবে।
যুক্তরাষ্ট্রের নতুন নিষেধাজ্ঞা এবং ট্রাম্পের বক্তব্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের জন্য একটি সতর্কবার্তা। বিশেষ করে, ইউক্রেনের পরিস্থিতি যে আরো সংকটময় হয়ে উঠছে, তা স্পষ্ট। যদিও ট্রাম্পের ভাষায় কিছুটা আশা রয়েছে ভবিষ্যতে আলোচনার সম্ভাবনা নিয়ে, তবে বর্তমান বাস্তবতায় মার্কিন প্রশাসন রাশিয়ার ওপর আরো কঠোর পদক্ষেপ নিতে প্রস্তুত বলে মনে হচ্ছে।
এদিকে, রাশিয়া এবং যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে সম্পর্কের আরও অবনতি ঘটলে, বৈশ্বিক নিরাপত্তা পরিস্থিতিতে বড় ধরনের প্রভাব পড়তে পারে। বিশেষ করে, রাশিয়ার ওপর আরও চাপ সৃষ্টি করার সঙ্গে সঙ্গে, অন্যান্য আন্তর্জাতিক কূটনৈতিক ব্যবস্থা ও নিষেধাজ্ঞার আওতায় আসতে পারে আরও দেশ।
অবশ্য, ট্রাম্পের মন্তব্যে একটি গুরুত্বপূর্ন বিষয় উঠে এসেছে, তা হল, তিনি এও বলেন যে, দীর্ঘ সময় ধরে কিছু অগ্রগতি না হওয়া সত্ত্বেও তিনি ভবিষ্যতে পুতিনের সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যেতে প্রস্তুত। এই অবস্থান কূটনৈতিক সম্পর্কের টানাপড়েন সত্ত্বেও এক ধরনের নমনীয়তা প্রদর্শন করে, যা আন্তর্জাতিক রাজনৈতিক পরিসরে গুরুত্বপূর্ণ।
আসন্ন দিনগুলোতে রাশিয়ার বিরুদ্ধে আরও কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করা হতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে, তবে তা কতটা কার্যকর হবে এবং আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ওপর কী প্রভাব ফেলবে, তা সময়ই বলে দেবে।