কাবুল: পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের সীমান্ত এলাকায় চলমান সংঘাতের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতা নিয়ে দাবি করেছে তালেবান সরকার। আফগানিস্তানের সরকারি মুখপাত্র জাবিহুল্লাহ মুজাহিদ এক সাক্ষাৎকারে জানান, আফগানিস্তান-পাকিস্তান সীমান্তে উত্তেজনা বৃদ্ধি পাওয়ার সময় বিভিন্ন দেশ আফগান সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ করে পরিস্থিতি শান্ত করার আহ্বান জানিয়েছে, এর মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রও ছিল।
মুজাহিদ বলেন, “পাকিস্তান-আফগানিস্তান সীমান্তে সংঘাতের সময় বেশ কয়েকটি দেশ আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে। তারা উত্তেজনা প্রশমনের জন্য আহ্বান জানায় এবং পাকিস্তানের সঙ্গে মধ্যস্থতার আগ্রহ প্রকাশ করে। এসব দেশের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধিরাও ছিল। আমরা এই উদ্যোগকে স্বাগত জানাই এবং আশা করি, যুক্তরাষ্ট্র তার প্রভাব ব্যবহার করে আফগানদের পাশে দাঁড়াবে।”
এছাড়া, তিনি আরও বলেন যে, আফগানিস্তান চায় অন্যান্য দেশ যেন এই সংকটে সহযোগিতা করে, এবং আফগান জনগণের স্বার্থে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় সঠিক পদক্ষেপ গ্রহণ করে।
সম্প্রতি পাকিস্তান আফগানিস্তানে তালেবান সরকারের মদতপুষ্ট একটি নিষিদ্ধ সশস্ত্র গোষ্ঠী, তেহরিক-ই তালেবান পাকিস্তান (টিটিপি)-এর বিষয়ে অভিযোগ করে আসছে। ইসলামাবাদ দাবি করে আসছে যে, আফগান তালেবান গোষ্ঠী এই সশস্ত্র গোষ্ঠীকে সহায়তা প্রদান করছে। তবে কাবুল বরাবরই এ ধরনের অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছে।
গত ৯ অক্টোবর পাকিস্তানের বিমান বাহিনী আফগানিস্তানে বিমান অভিযান পরিচালনা করে। ওই অভিযানে টিটিপির শীর্ষ নেতা নূর ওয়ালি মেহসুদ এবং ক্বারি সাইফুল্লাহ মেহসুদসহ বেশ কয়েকজন শীর্ষ নেতা নিহত হন। এরপর ১১ অক্টোবর আফগান সেনাবাহিনী পাকিস্তানের খাইবার পাখতুনখোয়া প্রদেশের সীমান্তবর্তী সেনাচৌকিগুলোতে হামলা চালায়। পাকিস্তানও পাল্টা জবাব দিতে শুরু করে। এই সংঘাত ১৪ অক্টোবর পর্যন্ত চলতে থাকে।
পাকিস্তানি সেনাবাহিনী জানিয়েছে, সংঘাতে ২ শতাধিক আফগান সেনা এবং ২৩ জন পাকিস্তানি সেনা নিহত হয়েছেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে ১৫ অক্টোবর দুই দেশের সরকারের সম্মতিতে ৪৮ ঘণ্টার যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করা হয়, যা পরবর্তীতে আরও বাড়ানো হয়। বর্তমানে দুই দেশের মধ্যে যুদ্ধবিরতি চলমান রয়েছে।
এদিকে, আফগানিস্তানে পলিসি বিষয়ক অধ্যাপক আবদুলওয়াহিদ হাকিমি মনে করেন, পাকিস্তানের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের যে প্রভাব রয়েছে, তা সঠিকভাবে ব্যবহার করলে এ অঞ্চলের নিরাপত্তা পরিস্থিতির উন্নতি হতে পারে। তিনি তোলো নিউজকে বলেন, “পাকিস্তানের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের প্রচুর প্রভাব রয়েছে এবং যদি ওয়াশিংটন সেই প্রভাব সঠিকভাবে ব্যবহার করে, তাহলে এটি এই অঞ্চলের জন্য ভালো হবে।”
এর আগেও, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের মধ্যে উত্তেজনা হ্রাস করার বিষয়টি ‘সহজ’ বলে মন্তব্য করেছিলেন। পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানও আফগানিস্তানের সঙ্গে শান্তিপূর্ণ আলোচনা চালানোর প্রতি আগ্রহ প্রকাশ করেছিলেন।
এটি স্পষ্ট যে, পাকিস্তান-আফগানিস্তান সীমান্তে চলমান সংঘাতের প্রেক্ষাপটে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের অবদান এবং বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতা অনেক গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের যথাযথ প্রভাব প্রয়োগের মাধ্যমে এ অঞ্চলে শান্তি প্রতিষ্ঠার প্রচেষ্টা কার্যকর হতে পারে, তবে তা সম্পূর্ণভাবে নির্ভর করবে আন্তর্জাতিক রাজনৈতিক সমঝোতা এবং কূটনৈতিক সম্পর্কের ওপর।
অতএব, আফগানিস্তান এবং পাকিস্তানের মধ্যে সংঘাতের ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে, তবে তা সফল হতে হলে কেবল মধ্যস্থতার মাধ্যমে নয়, বরং দীর্ঘমেয়াদী এবং সুষ্ঠু কূটনৈতিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার ওপর গুরুত্ব দিতে হবে।