ইসরায়েলি পার্লামেন্ট নেসেটে ফিলিস্তিনের পশ্চিম তীর অঞ্চলের দুই এলাকা জুদেয়া ও সামারিয়াকে আনুষ্ঠানিকভাবে ইসরায়েলের ভূখণ্ডে অন্তর্ভুক্ত করার বিল পাস হওয়ায় যুক্তরাষ্ট্র উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। দেশটির কর্মকর্তারা জানিয়ে দিয়েছেন যে, এই বিল গাজা শান্তি পরিকল্পনার জন্য একটি বড় ধরনের হুমকি হিসেবে দেখা হচ্ছে।
গতকাল (২২ অক্টোবর), ইসরায়েলি পার্লামেন্টে ১২০ আসনের নেসেটে এই বিলটি পাস হয়েছে। এতে ২৫ জন এমপি পক্ষে ভোট দেন, বিপক্ষে ভোট পড়েছে ২৪টি, এবং বাকি ৫১ জন এমপি ভোট দেওয়া থেকে বিরত ছিলেন। ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, এই বিলটি পশ্চিম তীরের জুদেয়া ও সামারিয়া অঞ্চলের ইসরায়েলি ভূখণ্ডে অন্তর্ভুক্তির প্রস্তাব করে।
এদিকে, এই বিলের পাস হওয়ার পর যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের জাতীয় নিরাপত্তা বিষয়ক উপদেষ্টা মার্কো রুবিও জানিয়ে দিয়েছেন যে, “এই বিলের সাথে আমাদের কোনো সমর্থন নেই। আমরা মনে করি, এটি গাজা শান্তি পরিকল্পনার বাস্তবায়নের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়াবে।” তিনি আরও বলেন, “ইসরায়েল একটি গণতান্ত্রিক দেশ এবং সেখানে বিল উত্থাপন এবং ভোটের মাধ্যমে বিল পাস করার প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ প্রাতিষ্ঠানিক, তবে বর্তমান সময়ের প্রেক্ষিতে এমন একটি পদক্ষেপ বিপর্যয়ের কারণ হতে পারে।”
ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় ১০ অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া যুদ্ধবিরতির পর, প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প একটি শান্তি পরিকল্পনা প্রস্তাব করেন, যা ২৯ সেপ্টেম্বর প্রকাশ করা হয়েছিল। এই পরিকল্পনায় ইসরায়েল এবং গাজা নিয়ন্ত্রণকারী হামাস গোষ্ঠীর মধ্যে শান্তি প্রতিষ্ঠার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল। তবে, ইসরায়েলের পশ্চিম তীরের দুই অঞ্চলের অন্তর্ভুক্তির এই বিল পাস হওয়ার পর, শান্তি পরিকল্পনার ভবিষ্যৎ নিয়ে নতুন উদ্বেগ সৃষ্টি হয়েছে।
এছাড়া, ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু এবং তার দল লিকুদ পার্টির এমপিরা এই বিলের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন। তবে, লিকুদ পার্টির নায়কত্বাধীন জোট সরকারের কিছু শরিক দল এই বিলের পক্ষে ভোট দিয়েছেন।
ফিলিস্তিনের পশ্চিম তীরের এই দুই অঞ্চল ১৯৬৭ সালে আরব-ইসরায়েল যুদ্ধের সময় ইসরায়েল দখল করে এবং সেই সময় থেকে এই দুই এলাকা ইসরায়েলের দখলে রয়েছে। বর্তমানে, এই অঞ্চলগুলোর ভবিষ্যৎ নিয়ে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মধ্যে বিতর্ক অব্যাহত রয়েছে।
ইসরায়েল এবং ফিলিস্তিনের মধ্যে দীর্ঘকালীন সংঘাতের মধ্যে একে অপরের ভূখণ্ডের মালিকানা নিয়ে রাজনৈতিক, ধর্মীয় ও সামাজিক বিরোধ বিরাজমান। ইসরায়েলি পার্লামেন্টে পশ্চিম তীরের জমি দখলের বিলটি পাস হওয়ার পর, বিশ্বের বিভিন্ন দেশ এবং মানবাধিকার সংস্থাগুলোর প্রতিক্রিয়া অনিশ্চিত। যুক্তরাষ্ট্রের পাশাপাশি, এই ঘটনাটি আরব দেশগুলোর মধ্যে বিশেষত ফিলিস্তিনের পক্ষে অবস্থান নেওয়া দেশগুলোর প্রতি উদ্বেগ সৃষ্টি করতে পারে।
ফিলিস্তিনের পশ্চিম তীরের দুই এলাকা ইসরায়েলের ভূখণ্ডে অন্তর্ভুক্ত করার বিলটির পাস ইসরায়েল ও ফিলিস্তিন শান্তি প্রক্রিয়ায় নতুন অস্থিরতা সৃষ্টি করতে পারে। বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রের কড়া প্রতিক্রিয়া এবং ইসরায়েলি সরকারে বিভাজন এ বিষয়টির ভবিষ্যৎ আরও জটিল করে তুলেছে। বিশ্ব রাজনীতি এবং মধ্যপ্রাচ্যের নিরাপত্তা পরিস্থিতি নির্ভর করছে, এই পরিবর্তন কি শান্তির জন্য সহায়ক হবে, না নতুর অশান্তির সৃষ্টি করবে।