চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে চাকসু ও হল সংসদের নির্বাচিত প্রার্থীদের শপথ গ্রহণ
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (চাকসু) ও হল সংসদের নির্বাচিত প্রার্থীরা আজ, বৃহস্পতিবার, শপথ গ্রহণ করেছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান অনুষদের মিলনায়তনে দুপুর ১২টায় এ অনুষ্ঠানটি অনুষ্ঠিত হয়। তবে, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) ধর্ষণ মামলা নিয়ে ফেসবুকে বিতর্কিত মন্তব্য করার পর সমালোচনার মুখে পড়া চাকসুর নির্বাহী সদস্য আকাশ দাস শপথ অনুষ্ঠানে উপস্থিত হননি।
শপথ গ্রহণের অনুষ্ঠানটি শুরু হয় বেলা সাড়ে ১১টায়। অনুষ্ঠানের শুরুতে বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই শহীদ, হৃদয় চন্দ্র তড়ুয়া ও মো. ফরহাদ হোসেনের স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। এরপর, বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মুহাম্মদ ইয়াহইয়া আখতার চাকসুর নির্বাচিত প্রার্থীদের শপথ পাঠ করান। হল সংসদের প্রতিনিধিদের শপথ পড়ান সংশ্লিষ্ট আবাসিক হলের প্রাধ্যক্ষগণ।
এ প্রসঙ্গে প্রধান নির্বাচন কমিশনার অধ্যাপক মনির উদ্দিন বলেন, “চাকসু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। দীর্ঘ সময় ধরে চাকসু অনুপস্থিত থাকার পর, বর্তমান নির্বাচিত প্রতিনিধিরা এখন নিজেদের দাবি জানাতে এবং শিক্ষার্থীদের মধ্যে সহমত ও শ্রদ্ধাবোধ প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হবেন।”
এ অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ-উপাচার্য (একাডেমিক) অধ্যাপক মোহাম্মদ শামীম উদ্দিন খান, সহ-উপাচার্য (প্রশাসনিক) অধ্যাপক মো. কামাল উদ্দিন, প্রক্টর অধ্যাপক হোসেন শহীদ সরওয়ার্দী, এবং চাকসুর সাবেক নেতৃবৃন্দসহ অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা।
চাকসু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় গত ১৫ অক্টোবর। এতে ভিপি ও জিএস পদে ইসলামী ছাত্রশিবির-সমর্থিত মো. ইব্রাহীম সাঈদ বিন হাবিব নির্বাচিত হন। এ ছাড়া, এজিএস পদে ছাত্রদলের আয়ুবুর রহমান নির্বাচিত হন। অন্য ২৩টি পদের মধ্যে ২২টি পদের জন্য ছাত্রশিবির-সমর্থিত প্যানেলের প্রার্থীরা জয়ী হন।
চাকসুর নির্বাচিত নির্বাহী সদস্য আকাশ দাস, যিনি শিবির-সমর্থিত ‘সম্প্রীতির শিক্ষার্থী জোট’ প্যানেল থেকে প্রার্থী হয়েছিলেন, সম্প্রতি বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) ধর্ষণ ঘটনা নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্য করেন। ১৫ অক্টোবর রাতে তিনি নিজের ফেসবুক আইডি থেকে ধর্ষণ ঘটনার সঙ্গে ভুক্তভোগীকে সম্পর্কিত মন্তব্য করেন, যা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তীব্র সমালোচনার সৃষ্টি করে। তিনি পোস্টে বলেন, তদন্ত করলে ভুক্তভোগীরও দোষ বেশি পাওয়া যাবে এবং ঘটনাটির জন্য এক্ষেত্রে ভুক্তভোগীকেই দায়ী করেন। এক ঘণ্টার মধ্যে তিনি পোস্টটি মুছে দিয়ে দুঃখপ্রকাশ করেন।
তবে, এ ঘটনার পর চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ শুরু হয় এবং চাকসু ও হল সংসদের নির্বাচিত নেতৃবৃন্দ আকাশ দাসের সঙ্গে শপথ নিতে আপত্তি জানান। শপথ অনুষ্ঠানে উপস্থিত না থাকার বিষয়ে আকাশ দাস জানান, “যেহেতু শপথ অনুষ্ঠানে আমার উপস্থিতি সংঘাতমূলক পরিস্থিতি তৈরি করতে পারে, তাই আমি শপথ অনুষ্ঠানে উপস্থিত হইনি।”
আকাশ দাসের অনুপস্থিতির বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক কর্তৃপক্ষের বক্তব্য ছিল, “চাকসুর নির্বাচিত সদস্যরা যদি শপথ গ্রহণে অংশগ্রহণ না করেন, তবে তারা আলাদাভাবে উপাচার্যের সঙ্গে যোগাযোগ করে শপথ নিতে পারবেন। তবে, আকাশ দাসের বিষয়ে অভিযোগ থাকার কারণে তার শপথ গ্রহণ সম্পর্কে সিদ্ধান্ত নেবেন চাকসুর অন্যান্য নির্বাচিত সদস্যরা।”
চাকসু ও হল সংসদ নির্বাচনের মাধ্যমে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা তাদের দাবির প্রতি আরও সংগঠিত এবং নিয়মতান্ত্রিকভাবে প্রতিক্রিয়া জানাতে সক্ষম হবেন। তবে, আকাশ দাসের বিতর্কিত মন্তব্য এবং তার শপথ অনুষ্ঠানে অনুপস্থিতি বিষয়টি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররাজনীতিতে নতুন ধরনের উত্তেজনার সৃষ্টি করেছে, যা ভবিষ্যতে আরও আলোচনা ও বিশ্লেষণের জন্য উন্মুক্ত থাকবে।