ইসরায়েলি অর্থমন্ত্রী বাজায়েল স্মোরিচ সৌদি আরবের সাথে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপনের বিষয়ে বিতর্কিত মন্তব্য করেছেন। তিনি বলেছেন, “যদি সৌদি আরব ইসরায়েলকে স্বীকৃতি দেওয়ার পরিবর্তে স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র গঠন করার শর্ত দেয়, তবে আমরা তাদের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন করতে রাজি হব না। সৌদির নেতাদের মরুতে উট চড়ানো চালিয়ে যেতে বলব।”
এই মন্তব্যের পর ব্যাপক সমালোচনার সৃষ্টি হয়। সৌদি আরবসহ আন্তর্জাতিক মহল থেকে তার মন্তব্যের জন্য কঠোর প্রতিক্রিয়া আসে, যার ফলে তিনি পরে ক্ষমা প্রার্থনা করেন। স্মোরিচ বলেছেন, “সৌদি আরব সম্পর্কে আমার মন্তব্য অত্যন্ত অনুপযুক্ত ছিল। এর ফলে যদি সৌদি নেতাদের অপমান হয়ে থাকে, তবে আমি সেজন্য মাফ চাইছি।”
তবে ক্ষমা প্রার্থনা করার পরও স্মোরিচ স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র গঠনের বিরোধিতা করেছেন এবং সৌদি আরবের প্রতি তার অবস্থান পরিবর্তন হয়নি। তিনি বলেছেন, “আমি সৌদি আরবের কাছ থেকে আশা করি তারা আমাদের ক্ষতি করবে না এবং পশ্চিমতীরে ইহুদিদের ঐতিহাসিক ভূমির অধিকার থেকে বঞ্চিত করবে না।” একইসাথে, তিনি আশা প্রকাশ করেন যে সৌদি আরব তাদের সঙ্গে সত্যিকারের শান্তি স্থাপন করবে।
স্মোরিচের এই বক্তব্যের মাধ্যমে তিনি ইসরায়েলের ঐতিহাসিক ভূমি এবং পশ্চিমতীরের অধিকারের পক্ষে নিজেদের অবস্থান স্পষ্ট করেছেন, যা ফিলিস্তিনি জনগণের জন্য বিরাট চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়ায়।
এদিকে, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সৌদি আরব ও ইসরায়েলের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপনের সম্ভাবনা নিয়ে মন্তব্য করেছেন। ১৫ অক্টোবর টাইম ম্যাগাজিনের সঙ্গে একটি সাক্ষাৎকারে ট্রাম্প দাবি করেন, “আমি মনে করি আমরা সৌদি-ইসরায়েলের সম্পর্ক স্থাপনের খুব কাছে পৌঁছেছি। সৌদির গাজা ও ইরান সমস্যাগুলো এখন আর নেই, তাই তাদের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপন আমাদের জন্য আর কোনো বাধা সৃষ্টি করবে না।”
ট্রাম্পের এই মন্তব্য আন্তর্জাতিক রাজনৈতিক পরিপ্রেক্ষিতে একটি গুরুত্বপূর্ণ ইঙ্গিত দেয়, যা সৌদি আরব এবং ইসরায়েলের মধ্যে সম্পর্কের নতুন দিগন্ত খুলতে পারে।
স্মোরিচের বক্তব্য এবং ট্রাম্পের মন্তব্য ফিলিস্তিনের ভবিষ্যত, মধ্যপ্রাচ্যের রাজনৈতিক পরিস্থিতি এবং সৌদি-ইসরায়েল সম্পর্কের উপর গভীর প্রভাব ফেলতে পারে। সৌদি আরব, যা এখনও ফিলিস্তিনের স্বাধীনতার প্রতি সমর্থন দিয়ে আসছে, সেই দেশের সাথে ইসরায়েলের সম্পর্ক স্থাপন করা হলে, সেটি আরব বিশ্বের মধ্যে রাজনৈতিক অস্থিরতা সৃষ্টি করতে পারে।
এছাড়া, ইসরায়েলের উগ্রপন্থি নেতাদের মন্তব্য এবং তাদের অবস্থান আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছ থেকে আরও সমালোচনার মুখে পড়তে পারে, বিশেষ করে ফিলিস্তিনিদের প্রতি তাদের আচরণ এবং পশ্চিমতীরের উপর ইহুদি বসতি স্থাপন বিষয়ক নীতির কারণে।
স্মোরিচের সৌদি আরব সম্পর্কে বিতর্কিত মন্তব্য এবং ট্রাম্পের দাবি মধ্যপ্রাচ্যের রাজনৈতিক দৃশ্যপটের জন্য একটি নতুন চ্যালেঞ্জ তৈরি করেছে। এর ফলে, সৌদি আরব এবং ইসরায়েল সম্পর্ক স্থাপন বিষয়টি শুধু এই দুই দেশের জন্য নয়, বরং পুরো অঞ্চলের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে।