দীর্ঘ নয় বছর ধরে চলা রোহিঙ্গা সংকটের সমাধান এখনও কার্যকর হয়নি, তবে সম্প্রতি একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। রোহিঙ্গাদের মধ্যে অভ্যন্তরীণ ঐক্য এবং প্রতিনিধিত্বশীল নেতৃত্বের অভাবের কারণে তাদের প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া বারবার বাধাগ্রস্ত হয়েছে। কিন্তু ইউনাইটেড কাউন্সিল অব রোহাং (ইউসিআর) নামে নতুন একটি নাগরিক সংগঠন গঠন করেছে রোহিঙ্গা সম্প্রদায়, যা তাদের ঐক্য এবং ভবিষ্যতের পথকে আরও সুস্পষ্ট করতে সহায়ক হতে পারে।
বৃহস্পতিবার (২৩ অক্টোবর) বিকেল ৪টায় উখিয়ার ১৬ নম্বর রোহিঙ্গা ক্যাম্পের একটি কমিউনিটি সেন্টারে অনুষ্ঠিত হয় ইউসিআরের নির্বাচিত প্রতিনিধিদের শপথ গ্রহণ এবং আত্মপ্রকাশ অনুষ্ঠান। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার আবু সালেহ মোহাম্মদ ওবায়দুল্লাহ।
ইউসিআরের গঠন প্রক্রিয়া ছিল খুবই সুস্পষ্ট এবং শান্তিপূর্ণ। শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনারের অনুমতি নিয়ে কক্সবাজারের ৩৩টি ক্যাম্পে প্রতিনিধি নির্বাচন কার্যক্রম পরিচালিত হয়। এতে প্রথমবারের মতো রোহিঙ্গাদের বৈধভাবে প্রতিনিধিত্ব করার জন্য একটি আনুষ্ঠানিক নাগরিক সংগঠন গঠন করা হলো। সংগঠনটি ৩,৬৯৩ জন ভোটারের মাধ্যমে গঠিত, যাদের মধ্যে ইমাম, শিক্ষক, নারী প্রতিনিধি, যুবক, কমিউনিটি ডাক্তার, ব্যবসায়ী সহ বিভিন্ন শ্রেণি ও পেশার মানুষ অন্তর্ভুক্ত ছিলেন।
এই ভোট কার্যক্রম সম্পূর্ণভাবে স্বচ্ছ, নিরপেক্ষ এবং রোহিঙ্গাদের মধ্যে ঐক্য ও জবাবদিহিতার প্রতীক হিসেবে উদ্ভূত হয়েছে। ইউসিআর প্রথমে ৫০০ সদস্যের কাউন্সেলর কংগ্রেস গঠন করেছে এবং পরবর্তীতে কংগ্রেস থেকে ২৮ জন নির্বাহী সদস্য ও ৫ জন সভাপতি নির্বাচিত হয়েছেন।
ইউসিআর মূলত রোহিঙ্গাদের জন্য একটি স্থায়ী, ঐক্যবদ্ধ নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্য নিয়ে গঠন করা হয়েছে, যা তাদের সম্মানজনক প্রত্যাবাসন এবং ভবিষ্যতের জন্য কার্যকর প্ল্যাটফর্ম হিসেবে কাজ করবে। সংগঠনটি আন্তর্জাতিক ও স্থানীয় দাতাদের সঙ্গে যোগাযোগ সহজতর করবে এবং শরণার্থী শিবিরে শান্তি ও শৃঙ্খলা বজায় রাখতে সহায়তা করবে।
মোহাম্মদ ফুরকান মির্জা, ইউসিআরের সমন্বয় কমিটির আহ্বায়ক, বলেছেন, “আমরা প্রমাণ করেছি রোহিঙ্গারা শান্তিপূর্ণ, স্বচ্ছ ও দায়িত্বশীলভাবে নিজেদের সংগঠিত করতে পারে। ইউসিআর আমাদের ঐক্য, জবাবদিহিতা এবং মর্যাদাপূর্ণ ভবিষ্যতের প্রতীক।”
এই উদ্যোগটি রোহিঙ্গাদের মধ্যে একটি ঐতিহাসিক পদক্ষেপ হিসেবে দেখা হচ্ছে, যা তাদের সুসংগঠিত হয়ে ভবিষ্যতে নিজেদের অধিকার ও দাবি জানাতে আরও কার্যকর ভূমিকা রাখবে।
ইউসিআরের সদস্যরা আশাবাদী যে, সংগঠনটি রোহিঙ্গা জনগণের জন্য একটি সুরক্ষা এবং ঐক্যবদ্ধ নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠা করবে। তাদের নেতৃত্বের মাধ্যমে রোহিঙ্গারা মিয়ানমারে ফিরে যাওয়ার জন্য আরও সুসংহত এবং সংগঠিত হয়ে কাজ করতে পারবেন, যা তাদের প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করতে সহায়তা করবে।