পাকিস্তানের খাইবার পাখতুনখাওয়া প্রদেশের হাঙ্গু জেলার একটি সড়কে শক্তিশালী বোমা বিস্ফোরণে পুলিশের এক এসপিসহ তিন কর্মকর্তা নিহত হয়েছেন। শুক্রবার (২৪ অক্টোবর) সকালে রাস্তার পাশে পুঁতে রাখা বোমায় এই ভয়াবহ বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে।
প্রাথমিক তথ্য অনুযায়ী, বিস্ফোরণের আগে হাঙ্গু জেলার একটি পুলিশ থানায় হামলা চালানো হয়েছিল। নিহত পুলিশ কর্মকর্তারা সেই থানায় যাচ্ছিলেন, এমনটি জানিয়েছেন স্থানীয় পুলিশ প্রধান আদম খান। তবে তিনি বিস্ফোরণের পরবর্তী পরিস্থিতি বা হামলাকারীদের সম্পর্কে বিস্তারিত কোনো তথ্য দেননি।
পাকিস্তানের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহসিন নাকবি এই হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন। তিনি দাবি করেন, নিষিদ্ধ ঘোষিত তেহরিক-ই-তালিবান পাকিস্তান (টিটিপি) সন্ত্রাসীরা এই হামলা চালিয়েছে। টিটিপি পাকিস্তানে দীর্ঘ সময় ধরে সন্ত্রাসী কার্যক্রম চালিয়ে আসছে, এবং তাদের বিরুদ্ধে পাকিস্তান সরকারের পক্ষ থেকে একাধিক অভিযান পরিচালিত হয়েছে।
টিটিপি, যদিও একটি সম্পূর্ণ স্বাধীন সন্ত্রাসী দল, আফগান তালেবানের সঙ্গে তাদের সম্পর্কের বিষয়টি নিয়ে আন্তর্জাতিকভাবে অনেক আলোচনা হয়েছে। পাকিস্তান বারবার অভিযোগ করেছে যে, টিটিপির সদস্যরা আফগানিস্তানে তালেবানের আশ্রয়ে থাকে। তবে আফগান তালেবান বারবার এই অভিযোগ অস্বীকার করে এসেছে এবং তারা তাদের ভূখণ্ডে কোনো বিদেশি সন্ত্রাসী গোষ্ঠীকে আশ্রয় না দেওয়ার কথা বলেছে।
এদিকে, পাকিস্তান ও আফগানিস্তান মাঝারি সময়ে আরও উত্তপ্ত পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। চলতি মাসের মাঝামাঝিতে পাকিস্তান আফগানিস্তানের রাজধানী কাবুলে হামলা চালায়। পাকিস্তান দাবি করেছে, এই হামলা আফগানিস্তানের ভূখণ্ডে পাকিস্তান বিরোধী সন্ত্রাসী কার্যক্রমের জন্য করা হয়েছিল।
শুক্রবারের হামলার কিছুক্ষণ আগে পাকিস্তানের সেনাবাহিনী খাইবার পাখতুনখাওয়া প্রদেশের ট্যাংক বিভাগে টিটিপির একটি গোপন আস্তানায় অভিযান পরিচালনা করে। পাকিস্তানের সেনাবাহিনী জানায়, এই অভিযানে ৮ জন ‘ভারতীয় মদদপুষ্ট’ সন্ত্রাসী নিহত হয়েছে।
এদিকে, আফগানিস্তান এবং পাকিস্তান, যাদের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরেই রাজনৈতিক এবং সীমান্ত বিরোধ রয়েছে, বর্তমানে কাতারের মধ্যস্থতায় আলোচনায় বসেছে। আগামীকাল তুরস্কের ইস্তাম্বুলে দুই দেশের মধ্যে দ্বিতীয় দফা আলোচনা অনুষ্ঠিত হবে। তবে এর আগে পুলিশ বাহিনীর ওপর এই ভয়াবহ হামলা পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের সম্পর্কের আরও একটি জটিল অধ্যায়ের জন্ম দিয়েছে।
এই হামলা এবং সীমান্তের পরিস্থিতি আরও উদ্বেগজনক হয়ে উঠছে, বিশেষত যখন দুটি দেশ আন্তর্জাতিক চাপের মধ্যে রয়েছে এবং তারা নিজেদের সামরিক ও সন্ত্রাসবিরোধী কার্যক্রমের সমন্বয়ে একসঙ্গে কাজ করার জন্য আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে।
সূত্র: এপি