গত এক সপ্তাহে ইউক্রেনের ১০টি নতুন বসতি দখল করেছে রুশ সেনারা, যা তাদের চলমান সামরিক অভিযানের অংশ। ২৪ অক্টোবর, শুক্রবার রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।
মন্ত্রণালয়ের দেয়া তথ্য অনুযায়ী, ১৭ অক্টোবর থেকে ২৪ অক্টোবর— এই সাতদিনে রুশ বাহিনী ইউক্রেনের দোনেৎস্ক, দিনিপ্রোপেত্রোভস্ক, খারকিভ এবং জাপোরিজ্জিয়া প্রদেশের অন্তর্গত ১০টি নতুন লোকালয় দখল করেছে। রুশ সেনারা এই সময়সীমায় ইউক্রেনীয় বাহিনীর ২২টি সমরাস্ত্র ও সামরিক সরঞ্জামের ডিপোও ধ্বংস করেছে, যার ফলে ইউক্রেনীয় বাহিনী বড় ধরণের ক্ষতি হয়েছে বলে রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় দাবি করেছে।
এছাড়া, রুশ বাহিনী দাবি করেছে যে, ইউক্রেনীয় বাহিনী কয়েকবার বিমান হামলার চেষ্টা করলেও প্রতিবারই সেগুলো প্রতিহত করা হয়েছে। ১৭ অক্টোবর থেকে ২৪ অক্টোবর পর্যন্ত রুশ বাহিনীর কাছে ইউক্রেন হারিয়েছে একটি এসইউ-২৭ ফাইটার জেট, চারটি ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র, ১৮টি গাইডেড এভিয়েশন বোমা, ১৫টি হিমার্স রকেট এবং ১,৪৪১টি ড্রোন।
এদিকে, রুশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের এই বিবৃতির পর ইউক্রেনীয় সরকার বা তাদের পক্ষ থেকে এখনও কোনো প্রতিক্রিয়া জানানো হয়নি।
২০২২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ইউক্রেনে রুশ সামরিক অভিযানের সূচনা হয়, যার পেছনে মূলত ক্রিমিয়া উপদ্বীপের রুশ ভূখণ্ড হিসেবে স্বীকৃতি না দেওয়া এবং ইউক্রেনের ন্যাটো সদস্যপদ আবেদন ছিল। এই অভিযানের ফলস্বরূপ, রুশ বাহিনী ইউক্রেনের বিভিন্ন অঞ্চল দখল করে, যার মধ্যে দোনেৎস্ক, লুহানস্ক, জাপোরিজ্জিয়া এবং খেরসন প্রদেশ রয়েছে। এই চারটি প্রদেশের সম্মিলিত আয়তন ইউক্রেনের মোট ভূখণ্ডের প্রায় ১০ শতাংশ।
বর্তমানে, ইউক্রেনীয় বাহিনী রুশ বাহিনীর দখলকৃত অঞ্চলগুলো পুনরুদ্ধার করার জন্য মরিয়া চেষ্টা চালাচ্ছে, যদিও দুই দেশের সংঘাতের শেষ হওয়ার কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই সংঘাতের গতি এবং প্রকৃতি ভবিষ্যতে আরও তীব্র হতে পারে, কারণ প্রতিটি পক্ষই তাদের কৌশল এবং সক্ষমতা বাড়ানোর চেষ্টা করছে।
ইউক্রেনের দখল হারানো অঞ্চল পুনরুদ্ধারে চেষ্টার মধ্যে রুশ বাহিনী তাদের সামরিক শক্তি বৃদ্ধি করছে, এবং পশ্চিমা দেশগুলোর সাহায্যও ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে। এর মধ্যে ইউক্রেনের অস্ত্র সরবরাহ বৃদ্ধি এবং সেনা প্রশিক্ষণকেও গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।
এই দীর্ঘস্থায়ী যুদ্ধের ফলে শুধু সামরিক বাহিনীরই ক্ষতি হচ্ছে না, বরং মানবিক পরিস্থিতিও দিন দিন আরও খারাপ হচ্ছে। সংঘাতের কারণে লাখ লাখ মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছেন এবং তাদের জন্য জরুরি মানবিক সহায়তার প্রয়োজনীয়তা বাড়ছে।
এছাড়া, আন্তর্জাতিক পর্যায়ে এই যুদ্ধের ফলশ্রুতিতে বিশ্বব্যাপী নানান রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক উত্তেজনা তৈরি হয়েছে। বিশেষ করে, কৃষ্ণ সাগরের গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্য রুট এবং খনিজ সম্পদের ওপর যুদ্ধের প্রভাব পড়ছে।
অদূর ভবিষ্যতে সংঘাতের অবসান হওয়ার সম্ভাবনা কম, এবং শান্তি আলোচনা বা কূটনৈতিক সমাধানের দিকে কোনো স্থায়ী অগ্রগতি হয়নি। পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে উঠতে পারে, যা ইউক্রেন, রাশিয়া, এবং বিশ্বের অন্যান্য অঞ্চলের জন্য গভীর উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
সূত্র: আনাদোলু এজেন্সি