যুক্তরাষ্ট্রের ট্রেজারি মন্ত্রণালয় কলম্বিয়ার প্রেসিডেন্ট গুস্তাভো পেত্রো, তার স্ত্রী এবং ছেলেকে নিষেধাজ্ঞার আওতায় আনতে ঘোষণা করেছে। গতকাল, শুক্রবার, ট্রেজারি মন্ত্রী স্কট বেসেন্ট এক বিবৃতিতে এ নিষেধাজ্ঞার বিস্তারিত জানান।
বিবৃতিতে পেত্রোকে “মাদক ব্যবসায়ীদের পৃষ্ঠপোষক” হিসেবে চিহ্নিত করে মন্ত্রী বলেন, “প্রেসিডেন্ট পেত্রো ক্ষমতায় আসার পর থেকেই কলম্বিয়ায় কোকেন উৎপাদন বিপুলভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। ২০২২ সালের পর থেকে দেশটির কোকেন উৎপাদন গত কয়েক দশকের মধ্যে সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছেছে। এই বিপুল পরিমাণ কোকেন যুক্তরাষ্ট্রে প্রবাহিত হয়ে মার্কিন নাগরিকদের জীবনকে বিপজ্জনক করে তুলছে।”
যুক্তরাষ্ট্রের ট্রেজারি মন্ত্রণালয় আরও দাবি করেছে, পেত্রো প্রশাসন মাদক ব্যবসায়ী ও পাচারকারীদের দমন করার পরিবর্তে তাদের পৃষ্ঠপোষকতা করছে, যা যুক্তরাষ্ট্রে মাদক পাচারের অব্যাহত প্রবাহের অন্যতম কারণ বলে তারা উল্লেখ করেছে।
নিষেধাজ্ঞা জারির পর, কলম্বিয়ার প্রেসিডেন্ট গুস্তাভো পেত্রো সোশ্যাল মিডিয়ায় এক বার্তায় ট্রেজারি মন্ত্রণালয়ের দাবি অস্বীকার করেছেন। তিনি বলেছেন, “যুক্তরাষ্ট্রের ট্রেজারি মন্ত্রণালয় যে তথ্য দিয়েছে, তা একেবারে মিথ্যা। আমার সরকারের অধীনে কোকেন উৎপাদন বেড়েছে না কমেছে, সেটা বাস্তবতা দেখলেই পরিষ্কার।” পেত্রো আরও দাবি করেছেন, তার সরকারের আমলে সবচেয়ে বেশি পরিমাণ কোকেন জব্দ করা হয়েছে, যা বিশ্ব ইতিহাসে এক নজিরবিহীন ঘটনা।
মাদক পাচার ও মাদক ব্যবসার বিরুদ্ধে বিশ্বের বৃহত্তম অভিযানে যুক্তরাষ্ট্র গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। গত দুই মাসে, যুক্তরাষ্ট্রের নৌবাহিনী সাগরে অভিযান চালিয়ে ১০টি মাদক পাচারকারী নৌযান ধ্বংস করেছে, যার ফলে কমপক্ষে ৪৩ জন নিহত হয়েছে। পেত্রো এই ধরনের নৌযান হামলা বন্ধ করার জন্য ট্রাম্প প্রশাসনকে একাধিকবার আহ্বান জানান, তবে যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে এর কোন ইতিবাচক সাড়া পাওয়া যায়নি। বরং ট্রাম্প একাধিকবার পেত্রোকে “ঠগ” ও “মাদক পাচারকারী” হিসেবে উল্লেখ করেন।
পেত্রোর সাথে ট্রাম্পের সম্পর্ক আরও উত্তেজনাপূর্ণ হয়ে ওঠে ২০২৫ সালের জানুয়ারিতে, যখন ট্রাম্প দ্বিতীয়বারের জন্য প্রেসিডেন্ট হিসেবে ক্ষমতা গ্রহণ করেন। তার পর থেকে কলম্বিয়ার প্রেসিডেন্টের সাথে বিভিন্ন বিষয়ে দ্বন্দ্ব শুরু হয়। জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে অংশগ্রহণের জন্য নিউইয়র্কে যাওয়ার পরিকল্পনা করেছিলেন পেত্রো, তবে যুক্তরাষ্ট্র তাকে ভিসা না দেওয়ায় তিনি সেখানে যেতে পারেননি। যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা প্রত্যাখ্যানের কারণ হিসেবে পেত্রোর ফিলিস্তিনপন্থি অবস্থান এবং গাজায় ইসরায়েলি বাহিনীর অভিযানের বিরুদ্ধে তার সমালোচনা উঠে এসেছে।
এর আগে, গত সপ্তাহে, ট্রাম্প কলম্বিয়ায় মার্কিন সহায়তা স্থগিত করার ঘোষণা দেন এবং দেশটির ওপর উচ্চ শুল্ক আরোপের হুমকি দেন। ট্রেজারি মন্ত্রণালয় নিষেধাজ্ঞা জারির পর পেত্রো সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি প্রতিবাদী বার্তা পোস্ট করেন, যেখানে তিনি লাতিন আমেরিকার বামপন্থি বিপ্লবীদের একটি জনপ্রিয় স্লোগান উল্লেখ করেন: “আমরা এক পা-ও পিছু হটব না এবং কখনও হাঁটু গেড়ে বসব না।”
এই দ্বন্দ্বের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র ও কলম্বিয়ার সম্পর্ক আরও জটিল হয়ে উঠছে, যা দুই দেশের ভবিষ্যৎ কূটনৈতিক সম্পর্কের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ হতে পারে।
সূত্র: রয়টার্স