গাজায় চলমান মানবিক সংকটের মধ্যে জাতিসংঘের ফিলিস্তিনি শরণার্থী সংস্থা ইউএনআরডব্লিউএ (UNRWA) এখন থেকে সেখানে কোনো মানবিক সহায়তা বিতরণে অংশ নেবে না বলে ঘোষণা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। যুক্তরাষ্ট্রের দাবি, ইউএনআরডব্লিউএ বর্তমানে হামাসের সহযোগী সংস্থা হিসেবে কাজ করছে, যা তাদের জন্য গ্রহণযোগ্য নয়। একই সঙ্গে, দেশটি গাজার ভবিষ্যৎ শাসনব্যবস্থায় হামাসের কোনো ধরনের সম্পৃক্ততা থাকতে পারে না বলেও স্পষ্ট করেছে।
শুক্রবার (২৪ অক্টোবর) ইসরায়েল সফরের সময় এক সংবাদ সম্মেলনে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও বলেন, ইউএনআরডব্লিউএ হামাসের সহযোগী সংস্থায় পরিণত হয়েছে, এবং তাদের কার্যক্রম আর যুক্তরাষ্ট্রের সহযোগিতা পাওয়ার যোগ্য নয়। তাঁর এই মন্তব্য ইসরায়েলি সরকারের অবস্থানের প্রতিধ্বনি হিসেবে দেখা যাচ্ছে, যেহেতু ইসরায়েলও ইউএনআরডব্লিউএ’র বিরুদ্ধে হামাসের সাথে সম্পর্ক থাকার অভিযোগ তুলেছে।
মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রীর মন্তব্যের পর, ইউএনআরডব্লিউএ একটি বিবৃতি প্রদান করেছে, যেখানে তারা দাবি করে যে গাজার মানবিক সংকট মোকাবেলায় তাদের উপস্থিতি অপরিহার্য। সংস্থাটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এক্স (পূর্ববর্তী টুইটার) এ পোস্ট করে আরও জানায়, আন্তর্জাতিক বিচার আদালত (আইসিজে) ইতিমধ্যেই এই প্রতিষ্ঠানের গাজার মানবিক সহায়তা কার্যক্রমের একমাত্র বিকল্প না থাকার বিষয়টি স্বীকার করেছে।
জাতিসংঘের মহাসচিবের উপ-মুখপাত্র ফারহান হকও এক বিবৃতিতে বলেন, “ইউএনআরডব্লিউএ’র সঙ্গে হামাসের কোনো সম্পর্ক নেই। গাজায় আমাদের মানবিক কার্যক্রমের মেরুদণ্ডই হলো ইউএনআরডব্লিউএ, এবং এটি ফিলিস্তিনিদের সহায়তায় অপরিহার্য ভূমিকা পালন করছে।” তিনি আরও জানান, সংস্থাটি দীর্ঘকাল ধরে গাজার জনগণের জন্য মানবিক সহায়তা প্রদান করে আসছে এবং সেখানে তাদের উপস্থিতি আরও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে।
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর, হামাসের নেতৃত্বে ইসরায়েলে আক্রমণের পর, ইসরায়েল ইউএনআরডব্লিউএ’র কিছু কর্মীর বিরুদ্ধে সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ তোলার পর সংস্থাটির কার্যক্রম নিষিদ্ধ করে। এর ফলে, গাজার মানবিক সহায়তার প্রবাহে বড় ধরনের বাধা সৃষ্টি হয়, যা পরিস্থিতিকে আরও সংকটাপন্ন করেছে।
গাজার মানবিক পরিস্থিতি বর্তমানে অত্যন্ত ভয়াবহ হয়ে উঠেছে। ২০২৩ সালে ইসরায়েলি অভিযানে প্রায় ৬৮,০০০ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন, এবং মানবিক সহায়তা পৌঁছাতে না পারার কারণে পরিস্থিতি আরও অবনতি ঘটছে। চিকিৎসা, খাদ্য, পানি, আশ্রয় এবং অন্যান্য মৌলিক প্রয়োজনীয়তাগুলোর অভাবে গাজার নাগরিকরা চরম দুর্দশার মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন। বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করেছেন যে, এই সংকট মোকাবেলায় দ্রুত আন্তর্জাতিক সহযোগিতা প্রয়োজন, বিশেষ করে ইউএনআরডব্লিউএ’র মানবিক কার্যক্রম যদি বন্ধ হয়ে যায়, তবে পরিস্থিতি আরও গুরুতর হয়ে উঠবে।
গাজায় মানবিক সহায়তার প্রবাহ বন্ধ হওয়ার ফলে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে বড় ধরনের চ্যালেঞ্জ সৃষ্টি হতে পারে। বিশেষ করে ফিলিস্তিনি জনগণের মৌলিক অধিকার এবং মানবিক সহায়তা নিশ্চিত করা অত্যন্ত জরুরি হয়ে পড়েছে। এই পরিস্থিতিতে, ইউএনআরডব্লিউএ এবং অন্যান্য আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর কার্যক্রমের উপর নির্ভরতা আরও বাড়ছে।
এদিকে, যুক্তরাষ্ট্রের মতো শক্তিশালী রাষ্ট্রের গাজার মানবিক সহায়তায় সীমাবদ্ধতার ঘোষণা, গাজার রাজনৈতিক পরিস্থিতি এবং আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে নতুন বিতর্ক সৃষ্টি করবে। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এই পদক্ষেপ শুধু গাজার মানবিক সংকটকেই তীব্র করতে পারে, বরং এই অঞ্চলের দীর্ঘস্থায়ী শান্তি প্রক্রিয়াতেও নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে।
গাজায় ইউএনআরডব্লিউএ’র কার্যক্রম বন্ধ হওয়ার সিদ্ধান্ত এবং সেখানে হামাসের উপস্থিতি নিয়ে আন্তর্জাতিক বিতর্কের মধ্যেই, গাজার মানবিক সংকট মোকাবেলায় দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি হয়ে পড়েছে। এই পরিস্থিতি শুধু ফিলিস্তিনিদের জন্য নয়, বরং আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তার জন্যও একটি গুরুত্বপূর্ণ চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।