যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রস্তাবিত টেকনোক্র্যাট সরকারকে গাজার শাসন ক্ষমতা হস্তান্তরে রাজি হয়েছে গাজা উপত্যকা নিয়ন্ত্রণকারী সশস্ত্র রাজনৈতিক গোষ্ঠী হামাস। মিসরের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কায়রোতে অনুষ্ঠিত এক বৈঠকের পর এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। হামাস তাদের ওয়েবসাইটে এক বিবৃতিতে এই ঘোষণা দিয়েছে।
হামাসের হাইকমান্ড এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, “আমরা গাজা উপত্যকার প্রশাসনিক ক্ষমতা প্রস্তাবিত টেকনোক্র্যাট সরকারের কাছে হস্তান্তরে রাজি আছি। আমরা আশা করি, এই সরকার গাজার প্রশাসন ভালোভাবে পরিচালনা করবে এবং গাজার জনগণকে প্রয়োজনীয় পরিষেবা প্রদান করবে। পাশাপাশি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় ও আরব দেশগুলোর সঙ্গে সহযোগিতাপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখবে।”
এছাড়া, হামাস আরও বলেছে, “আমরা এই সরকার প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে গাজার উন্নয়ন ও শাসন ব্যবস্থায় পরিবর্তন আনার জন্য প্রস্তুত। আমাদের লক্ষ্য হল গাজার জনগণের কল্যাণ এবং ফিলিস্তিনি জাতির অধিকারের নিশ্চয়তা প্রদান করা।”
গত ২৯ সেপ্টেম্বর, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প গাজায় যুদ্ধের অবসান ঘটাতে একটি ২০ পয়েন্টের নতুন যুদ্ধবিরতি পরিকল্পনা উপস্থাপন করেন। ইসরায়েল এবং হামাস উভয়েই এই পরিকল্পনায় সম্মতি জানায় এবং ১০ অক্টোবর থেকে গাজায় যুদ্ধবিরতি শুরু হয়। ট্রাম্পের পরিকল্পনায় যুদ্ধবিরতির প্রথম পর্যায়ে গাজার আটক ইসরায়েলি জিম্মি এবং ইসরায়েলের কারাগারে বন্দি ফিলিস্তিনিদের মুক্তি দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। সেই সঙ্গে গাজায় ত্রাণ প্রবাহে বাধা দূর করা হবে।
এই যুদ্ধবিরতি পরিকল্পনার আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হল, প্রথম পর্যায়ের শেষে গাজায় একটি নিরপেক্ষ, অরাজনৈতিক এবং অসামরিক সরকার গঠন করার প্রস্তাব। এই সরকারটিকেই ‘টেকনোক্র্যাট’ সরকার হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। এর ফলে, হামাস গাজার শাসন ব্যবস্থায় পরিবর্তন আনতে এবং ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনিদের মধ্যে টানাপোড়েন কমাতে ভূমিকা রাখতে পারে।
এর আগে, হামাসের নেতারা বলেছিলেন যে, তারা গাজায় প্রস্তাবিত টেকনোক্র্যাট সরকারের অংশ হতে চায় এবং সরকারের নিরাপত্তা বিভাগের দায়িত্বে থাকতে চায়। তবে মিসরের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৃহস্পতিবারের বৈঠকের পর হামাস তার অবস্থান পরিবর্তন করে এবং গাজায় টেকনোক্র্যাট সরকারের শাসন ক্ষমতা হস্তান্তরের জন্য প্রস্তুত হওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়।
মিসর হামাসের সঙ্গে একটি গভীর আস্থার সম্পর্ক রয়েছে এবং গাজার যুদ্ধবিরতি উদ্যোগে মিসরের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। হামাস-ইসরায়েল যুদ্ধের শুরু থেকেই মিসর, যুক্তরাষ্ট্র ও কাতার এই তিন দেশ মধ্যস্থতাকারী হিসেবে কাজ করছে। হামাস ও মিসরের মধ্যে একাধিকবার উচ্চপর্যায়ের আলোচনা হয়েছে, যার ফলস্বরূপ গাজার যুদ্ধবিরতি পরিকল্পনায় সমর্থন ও সহযোগিতা অব্যাহত রাখা হয়েছে।
এছাড়া, হামাস তাদের রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ ফাতাহ দলের নেতাদের সঙ্গেও বৈঠক করেছে। সেসময়, হামাসের হাইকমান্ড জানায়, তাদের লক্ষ্য এখন একটি স্বাধীন এবং সার্বভৌম ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করা। এই লক্ষ্য অর্জনের জন্য তারা ফিলিস্তিনের সক্রিয় সব রাজনৈতিক দল ও গোষ্ঠীর সঙ্গে আলোচনা শুরু করতে চায়। হামাসের এই পরিবর্তিত অবস্থান ফিলিস্তিনিদের মধ্যে ঐক্য প্রতিষ্ঠার জন্য একটি ইতিবাচক পদক্ষেপ হিসেবে দেখা হচ্ছে।
হামাসের এই সিদ্ধান্ত একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হতে পারে, যা গাজার শাসন ব্যবস্থায় পরিবর্তন আনবে এবং ভবিষ্যতে ফিলিস্তিনি রাজনৈতিক গোষ্ঠীগুলোর মধ্যে আরও সহযোগিতার পথ প্রশস্ত করতে সাহায্য করবে। তবে, এই পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হলে কীভাবে গাজার জনগণের জীবনে পরিবর্তন আসে, এবং ইসরায়েল ও হামাসের সম্পর্কের ভবিষ্যত কেমন হবে, তা এখনও অজানা।