বাংলাদেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) গত সপ্তাহে (১৯-২৩ অক্টোবর) সব সূচকের উত্থান দেখেছে, তবে বাজারের অবস্থা স্থিতিশীল ছিল না। অধিকাংশ শেয়ার ও ইউনিটের দাম পড়ে গেলেও, বাজার মূলধন বেড়েছে ৬ হাজার কোটি টাকার বেশি। তবে, ডিএসইতে লেনদেনের পরিমাণ আগের দুই সপ্তাহের মতো কমে গেছে, যা বাজারে মন্দাভাবের ইঙ্গিত দেয়।

বাজার বিশ্লেষণে দেখা গেছে, গত সপ্তাহে ডিএসইর সবগুলো প্রধান সূচকই উত্থান করেছে। ডিএসইএক্স সূচক ৩০ দশমিক ৪৭ পয়েন্ট বা ৯ দশমিক ৬০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে ৫ হাজার ১৫০ পয়েন্টে পৌঁছেছে। একইভাবে, ডিএসই-৩০ সূচক বেড়েছে ৩০ দশমিক ১৮ পয়েন্ট বা ১ দশমিক ৫৩ শতাংশ এবং ডিএসইএস সূচক বেড়েছে ২ দশমিক ২৬ পয়েন্ট বা ০ দশমিক ২১ শতাংশ। সূচকগুলোর এই উত্থান বাজারে সামগ্রিক ইতিবাচকতা সৃষ্টির চেষ্টা করেছে, তবে শেয়ারের দাম কমার প্রবণতা বাজারে আরো কিছু অনিশ্চয়তা তৈরি করেছে।

উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো, সূচক বৃদ্ধির পাশাপাশি ডিএসইতে লেনদেনের পরিমাণ কমেছে। সপ্তাহজুড়ে ডিএসইতে মোট লেনদেন হয়েছে ২ হাজার ১৩৮ কোটি ৭১ লাখ টাকা, যা আগের সপ্তাহে ছিল ২ হাজার ৬১১ কোটি ১১ লাখ টাকা। অর্থাৎ, এক সপ্তাহে লেনদেন কমেছে ৪৭২ কোটি ৪০ লাখ টাকা। এর ফলে, প্রতি কার্যদিবসে গড় লেনদেন কমেছে ১৮ দশমিক ০৯ শতাংশ বা প্রায় ৯৪ কোটি ৪৮ লাখ টাকা। চলতি সপ্তাহে, প্রতি কার্যদিবসে গড় লেনদেন হয়েছে ৪২৭ কোটি ৭৪ লাখ টাকা, যা আগের সপ্তাহে ছিল ৫২২ কোটি ২২ লাখ টাকা।

ডিএসইতে মোট ৩৯২টি কোম্পানির শেয়ার ও মিউচুয়াল ফান্ড ইউনিটের লেনদেন হয়েছে। এর মধ্যে ১৫৭টি কোম্পানির শেয়ারের দাম বেড়েছে, ২০৩টির দাম কমেছে, এবং ৩২টি কোম্পানির শেয়ারের দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। তবে, লেনদেনের দিক থেকে বাজার মূলধন বেড়েছে ৬ হাজার ৫৮ কোটি টাকা বা শূন্য দশমিক ৮৭ শতাংশ। গত সপ্তাহ শেষে ডিএসইর বাজার মূলধন দাঁড়িয়েছে ৭ লাখ ৫ হাজার ৩৪৩ কোটি টাকা, যা আগের সপ্তাহে ছিল ৬ লাখ ৯৯ হাজার ২৮৫ কোটি টাকা।

চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের অবস্থা

দেশের অপর পুঁজিবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ (সিএসই) তে গত সপ্তাহে প্রধান সূচকগুলোর কিছুটা পতন হয়েছে। সিএএসপিআই সূচক শূন্য দশমিক ৩৮ শতাংশ কমে ১৪৪১৩ দশমিক ৩৯ পয়েন্টে অবস্থান করছে। অন্যদিকে সিএসসিএক্স সূচক শূন্য দশমিক ১৭ শতাংশ কমে ৮৮৮২ দশমিক ৩৮ পয়েন্টে এবং সিএসআই সূচক শূন্য দশমিক ৬৬ শতাংশ কমে ৯০৭ দশমিক ৮১ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। তবে সিএসই-৫০ সূচক ০ দশমিক ১৪ শতাংশ এবং সিএসই-৩০ সূচক ০ দশমিক ৩৬ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে যথাক্রমে ১১০৪ দশমিক ৮৮ পয়েন্টে এবং ১২৭২৭ দশমিক ৬৯ পয়েন্টে।

চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে গত সপ্তাহে লেনদেন হয়েছে ৬৭ কোটি ৬০ লাখ টাকা, যা আগের সপ্তাহে ছিল ৬৯ কোটি ৮৪ লাখ টাকা। এক সপ্তাহে লেনদেন কমেছে ২ কোটি ২৪ লাখ টাকা। সিএসইতে মোট ৩১০টি কোম্পানির শেয়ার ও মিউচুয়াল ফান্ড ইউনিটের লেনদেন হয়েছে, এর মধ্যে ৯৭টি কোম্পানির দাম বেড়েছে, ১৯১টির দাম কমেছে এবং ২২টি কোম্পানির শেয়ারের দাম অপরিবর্তিত রয়েছে।

এখনো পুঁজিবাজারে কিছুটা অস্থিরতা বজায় থাকলেও, ডিএসইর সূচক বৃদ্ধির ফলে বাজারের কিছুটা ইতিবাচক মনোভাব তৈরি হয়েছে। তবে, লেনদেনের পরিমাণ কমে যাওয়া এবং অধিকাংশ শেয়ারের দাম পড়ে যাওয়া পরিস্থিতি যথেষ্ট উদ্বেগের বিষয়। বাজারের স্বাভাবিক গতি ফিরিয়ে আনার জন্য বিশেষ করে শেয়ার দরপতন রোধে সঠিক পলিসি গ্রহণ গুরুত্বপূর্ণ হবে।

এছাড়াও, চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ-এর সূচক এবং লেনদেনের পরিমাণের হ্রাস বাজারে কিছুটা হতাশা তৈরি করেছে। যদিও সেখানে কিছু সূচক বেড়েছে, তবে লেনদেনের পরিমাণ কমে যাওয়া এবং শেয়ার দরপতন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের মধ্যে রয়েছে।