যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ক্যারিবিয়ান অঞ্চলে কয়েকদিন ধরে চলমান ছোট ছোট নৌকায় হামলা চালানোর পর এবার সরাসরি ভেনেজুয়েলায় সামরিক হামলা চালানোর পরিকল্পনা করছেন। যদিও এ বিষয়ে তিনি এখনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেননি।
শনিবার (২৫ অক্টোবর) সিএনএন-এর প্রতিবেদনে তিনটি সামরিক সূত্রের বরাতে এ তথ্য জানানো হয়। এর আগে, শুক্রবার, মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী পেটে হেগসেথ, ইউরোপ থেকে আসন্ন অঞ্চলে সামরিক শক্তি বৃদ্ধির জন্য নৌবাহিনীর আধুনিক রণতরী ফোর্ট কে ক্যারিবিয়ান অঞ্চলে পাঠানোর নির্দেশ দেন।
যুক্তরাষ্ট্রের উদ্দেশ্য, ভেনেজুয়েলায় কোকেইন অবকাঠামো এবং মাদক চোরাচালানের রুট লক্ষ্য করে হামলা চালানো। সামরিক সূত্রগুলো জানায়, এর পাশাপাশি গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএ-কে ভেনেজুয়েলার ভেতর গোপন অভিযান পরিচালনার অনুমতি দেওয়া হয়েছে।
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, যুক্তরাষ্ট্রের এই সামরিক পদক্ষেপ মূলত মাদক চোরাচালানকে রুখতে এবং ক্যারিবিয়ান অঞ্চলে নিজেদের প্রভাব প্রতিষ্ঠিত করতে হতে পারে। ট্রাম্প প্রশাসন বহুদিন ধরে ভেনেজুয়েলাকে মাদক উৎপাদনকারী প্রধান দেশ হিসেবে চিহ্নিত করে আসছে এবং এই ধারা অব্যাহত রাখার জন্য নতুন ধরনের সামরিক পদক্ষেপের পরিকল্পনা করছে।
মাদক চোরাচালানের অভিযোগে ভেনেজুয়েলার উপর যুক্তরাষ্ট্রের চাপ বাড়ানো হলেও গত কয়েক সপ্তাহ ধরে মার্কিন প্রশাসন, ভেনেজুয়েলার প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরোর সরকারের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ সম্পূর্ণ বন্ধ করে দিয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে, কূটনৈতিক উপায়ে সমাধান খোঁজার সম্ভাবনা যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে উড়িয়ে দেওয়া হয়নি। তবে, তার পরেও যুদ্ধাস্ত্রের ব্যবহারের প্রস্তুতি চলে আসছে, যা সম্পর্কের আরও অবনতির ইঙ্গিত দেয়।
যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে বারবার অভিযোগ করা হচ্ছে যে, ভেনেজুয়েলা ব্যাপক পরিমাণে কোকেইন উৎপাদন করে এবং সেই মাদক তাদের দেশে পাচার করা হয়। তবে, সিএনএন-এর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে যে, ভেনেজুয়েলায় কোকেইন উৎপাদনের ব্যাপকতার কোনও তথ্য মেলেনি, তবে ট্রাম্প প্রশাসন মাদুরো সরকারকে এই চোরাচালান তৎপরতার জন্য দায়ী করার চেষ্টা করছে।
ভেনেজুয়েলায় যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক হস্তক্ষেপের খবর ছড়িয়ে পড়ার পর আন্তর্জাতিক মহলে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। বিশেষ করে, লাতিন আমেরিকার দেশগুলো এবং জাতিসংঘের মানবাধিকার সংস্থাগুলি এই ধরনের সামরিক হামলার বিরুদ্ধে সতর্ক করেছে। তারা মনে করছে, ভেনেজুয়েলার পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে উঠতে পারে এবং আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা ঝুঁকিতে পড়তে পারে।
বিপুল পরিমাণ মাদক পাচারের অভিযোগ থেকে মুক্তি পেতে যুক্তরাষ্ট্রের এই পদক্ষেপ অনেকটা কঠোর হতে পারে, তবে আন্তর্জাতিক আইন এবং মানবাধিকার রক্ষার তাগিদে এই ধরনের পদক্ষেপের প্রয়োজনীয়তা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে পারে।
যদিও সামরিক পদক্ষেপের প্রস্তুতি চলছে, তবে যুক্তরাষ্ট্রের তরফ থেকে এই হামলার মাধ্যমে ভেনেজুয়েলায় মাদক পাচার বন্ধ করার পদক্ষেপ সফল হবে কিনা, তা এক বিশাল প্রশ্নের মুখে রয়েছে। সামরিক হামলার প্রভাব শুধু ভেনেজুয়েলা বা যুক্তরাষ্ট্র নয়, আন্তর্জাতিক মহলও এর জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে। এই পরিস্থিতি গোটা লাতিন আমেরিকা ও বিশ্ব রাজনীতির ওপর বড় ধরনের প্রভাব ফেলতে পারে।
এখনও পর্যন্ত ট্রাম্প প্রশাসন থেকে সামরিক হামলার চূড়ান্ত তারিখ নির্ধারণ করা হয়নি, তবে পরিস্থিতি যে আগামী কয়েক সপ্তাহে আরও জটিল হতে পারে, তা নিশ্চিত।